পারা ১

আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১

পারা ২

আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২

পারা ৩

আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২

পারা ৪

আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩

পারা ৫

আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭

পারা ৬

আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১

পারা ৭

আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০

পারা ৮

আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭

পারা ৯

আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০

পারা ১০

আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২

পারা ১১

আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫

পারা ১২

হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২

পারা ১৩

ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২

পারা ১৪

আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮

পারা ১৫

বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪

পারা ১৬

আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫

পারা ১৭

আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮

পারা ১৮

আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০

পারা ১৯

আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫

পারা ২০

আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫

পারা ২১

আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০

পারা ২২

আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭

পারা ২৩

ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১

পারা ২৪

আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬

পারা ২৫

ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

পারা ২৭

আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯

পারা ২৮

আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২

পারা ২৯

আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০

পারা ৩০

আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬

পারা ২৬

আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০

১৯৫ আয়াত

৩১ ) আর বেহেশতকে আল্লাহ‌ ভীরুদের নিকটতর করা হবে- তা মোটেই দূরে থাকবে না। ৩৯
وَأُزْلِفَتِ ٱلْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِينَ غَيْرَ بَعِيدٍ ٣١
৩২ ) তখন বলা হবেঃ এ হচ্ছে সেই জিনিস, যার কথা তোমাদেরকে আগাম জানানো হতো। এটা প্রত্যেক প্রত্যাবর্তনকারী ৪০ ও সংরক্ষণকারীর ৪১ জন্য,
هَـٰذَا مَا تُوعَدُونَ لِكُلِّ أَوَّابٍ حَفِيظٍۢ ٣٢
৩৩ ) যে অদেখা দয়াময়কে ভয় করতো, ৪২ যে অনুরক্ত হৃদয় নিয়ে এসেছে। ৪৩
مَّنْ خَشِىَ ٱلرَّحْمَـٰنَ بِٱلْغَيْبِ وَجَآءَ بِقَلْبٍۢ مُّنِيبٍ ٣٣
৩৪ ) বেহেশতে ঢুকে পড় শান্তির সাথে। ৪৪ সেদিন অনন্ত জীবনের দিন হবে।
ٱدْخُلُوهَا بِسَلَـٰمٍۢ ۖ ذَٰلِكَ يَوْمُ ٱلْخُلُودِ ٣٤
৩৫ ) সেখানে তাদের জন্য যা চাইবে তাই থাকবে। আর আমার কাছে আরো কিছু অতিরিক্ত জিনিসও থাকবে। ৪৫
لَهُم مَّا يَشَآءُونَ فِيهَا وَلَدَيْنَا مَزِيدٌۭ ٣٥
৩৬ ) আমি তাদের আগে আরো বহু জাতিকে ধ্বংস করেছি। তারা ওদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিধর ছিল এবং তারা সারা দুনিয়ার দেশগুলো তন্ন তন্ন করে ঘুরেছে। ৪৬ অথচ তারা কি কোন আশ্রয়স্থল পেলো? ৪৭
وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّن قَرْنٍ هُمْ أَشَدُّ مِنْهُم بَطْشًۭا فَنَقَّبُوا۟ فِى ٱلْبِلَـٰدِ هَلْ مِن مَّحِيصٍ ٣٦
৩৭ ) যাদের হৃদয় আছে কিংবা যারা একাগ্রচিত্তে কথা শোনে ৪৮ তাদের জন্য এ ইতিহাসে অনেক শিক্ষা রয়েছে।
إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَذِكْرَىٰ لِمَن كَانَ لَهُۥ قَلْبٌ أَوْ أَلْقَى ٱلسَّمْعَ وَهُوَ شَهِيدٌۭ ٣٧
৩৮ ) আমি আকাশ ও পৃথিবী এবং তার মধ্যকার সকল জিনিসকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি ৪৯ অথচ তাতে আমি ক্লান্ত হইনি।
وَلَقَدْ خَلَقْنَا ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِى سِتَّةِ أَيَّامٍۢ وَمَا مَسَّنَا مِن لُّغُوبٍۢ ٣٨
৩৯ ) কাজেই তারা যেসব কথা তৈরী করছে তার ওপর ধৈর্যধারণ করো। ৫০ আর স্বীয় প্রভুর প্রশংসা সহকারে গুণগান করতে থাকো সূর্যোদয় ও সুর্যাস্তের আগে,
فَٱصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ ٱلشَّمْسِ وَقَبْلَ ٱلْغُرُوبِ ٣٩
৪০ ) আবার রাতে পুনরায় তার গুণগান করো এবং সিজ্দা দেয়ার পরেও করো। ৫১
وَمِنَ ٱلَّيْلِ فَسَبِّحْهُ وَأَدْبَـٰرَ ٱلسُّجُودِ ٤٠
৩৯.
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলার আদালতে কোন ব্যক্তি সম্পর্কে যেই মাত্র ফায়সালা হবে যে, সে মুত্তাকী এবং জান্নাতলাভের উপযুক্ত, তৎক্ষণাত সে তার সামনে জান্নাতকে বিদ্যমান পাবে। জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছার জন্য তাকে কোন দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে না যে, তাকে পায়ে হেঁটে কিংবা কোন বাহনে বসে ভ্রমণ করে সেখানে পৌঁছতে হবে। তাই ফায়সালার সময় ও জান্নাতে প্রবেশের সময়ের মধ্যে কিছু সময়ের ব্যবধান থাকবে। বরং একদিকে ফায়সালা হবে অন্যদিকে সে তখনই জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেন তাকে জান্নাতে পৌঁছানো হয়নি, জান্নাতকেই উঠিয়ে তার কাছে নিয়ে আসা হয়েছে। এ থেকেই অনুমান করা যায় যে, আখেরাতের স্থান ও কালের ধারণা আমাদের এ পৃথিবীর স্থান ও কালের ধারণা থেকে কতটা ভিন্ন হবে। দ্রুততা ও বিলম্ব এবং দূর ও নিকট সম্পর্কে এ পৃথিবীতে আমাদের যে জ্ঞান আছে সেখানে তা সবই অর্থহীন হবে।
৪০.
মূল আয়াত اَوَّابٍ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যা অনেক ব্যাপক অর্থবহ। এর অর্থ এমন ব্যক্তি যে নাফরমানী এবং প্রবৃত্তির আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার পথ পরিহার করে আনুগত্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ অবলম্বন করেছে, যে আল্লাহর পছন্দ নয় এমন প্রতিটি জিনিস পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহ যা পছন্দ করে তা গ্রহণ করে, বন্দেগীর পথ থেকে পা সামান্য বিচ্যুত হলেই যে বিচলিত বোধ করে এবং তাওবা করে বন্দেগীর পথে ফিরে আসে, যে অধিক মাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের সমস্ত ব্যাপারে তাঁর স্মরণাপন্ন হয়।
৪১.
মূল আয়াতে حَفِيْظٌ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ “রক্ষাকারী।” এর দ্বারা এমন লোককে বুঝানো হয়েছে যে আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা, তাঁর ফরযসমূহ, হারামসমূহ এবং তার দায়িত্বে ন্যস্ত আমানতসমূহ রক্ষা করে, যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার ওপর আরোপিত অধিকারসমূহ সংরক্ষণ করে, যে ঈমান এনে তার রবের সাথে যে চুক্তি ও অঙ্গিকারে আবদ্ধ হয়েছে তা রক্ষা করে, যে তার শক্তি, শ্রম ও চেষ্টা-সাধনার পাহারাদারি করে যাতে এসবের কোনটি ভ্রান্ত কাজে নষ্ট না হয়, যে তাওবা করে তা রক্ষা করে এবং তা ভঙ্গ হতে দেয় না, যে সর্বাবস্থায় আত্মসমালোচনা করে দেখতে থাকে যে, সে তার কথায় ও কাজে কোথাও তার রবের নাফরমানী তো করছে না?
.
৪২.
অর্থাৎ সে কোথাও রহমান বা পরম দয়ালু আল্লাহর দেখা পেতো না এবং নিজের ইন্দ্রিয়সমূহ দ্বারাও কোনভাবেই তাঁকে অনুভব করতে পারতো না। তা সত্ত্বেও তাঁর নাফরমানী করতে সে ভয় পেতো। অন্যান্য অনুভূত শক্তি এবং প্রকাশ্যে দৃষ্টিগোচর হয় এমন সব শক্তি ও সত্তার তুলনায় তার মনে অদেখা রহমানের ভয় অধিক প্রবল ছিল। তিনি ‘রহমান’ বা দয়ালু একথা জানা সত্ত্বেও তাঁর রহমতের ভরসায় সে গোনাহর কাজে লিপ্ত হয়নি, বরং সব সময়ই তাঁর অসন্তুষ্টিকে ভয় পেয়েছে। এভাবে আয়াতটি ঈমানদার ব্যক্তির দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক গুণের প্রতি ইঙ্গিত করে। একটি হচ্ছে, অনুভূত ও দৃষ্টিগোচর না হওয়া সত্ত্বেও সে আল্লাহকে ভয় করে। অপরটি হচ্ছে, সে আল্লাহর রহমত গুণটি সম্পর্কে ভালভাবে অবহিত হওয়া সত্ত্বেও গোনাহ করার দুঃসাহস করে না। এ দু’টি গুণই তাকে আল্লাহর কাছে মর্যাদার অধিকারী করে তোলে। তাছাড়াও এ আয়াতের মধ্যে আরো একটি সূক্ষ্ম বিষয়ও আছে যা ইমাম রাযী বর্ণনা করেছেন। বিষয়টি হচ্ছে, আরবী ভাষায় ভয় বুঝাতে خوف خشيت এ দু’টি শব্দ ব্যবহৃত হয়। এ দু’টি শব্দের অর্থে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান। خوف শব্দটি সাধারণত এমন ভয় বুঝাতে ব্যবহৃত হয় যা কারো শক্তির সামনে নিজের দুর্বলতার অনুভূতির কারণে নিজের মধ্যে সৃষ্টি হয়। আর خشيت বলা হয় এমন এমন ভীষণ ভয়কে যা করো বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা থেকে মানুষের মনে সৃষ্টি হয়। এখানে خوف এর পরিবর্তে خشيت শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এভাবে বুঝাতে চাওয়া হয়েছে যে, শুধু শাস্তির আশঙ্কায়ই মু’মিন বান্দার অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয় না। তার চেয়েও বড় জিনিস অর্থাৎ আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব ও মর্যাদার অনুভূতি সবসময় তার মনে এক ভয়ানক ভীতিভাব জাগিয়ে রাখে।
৪৩.
মূল কথাটি হচ্ছে قَلْبٍ مُنِيْبٍ নিয়ে এসেছে। منيب শব্দটির উৎপত্তি انابت থেকে যার অর্থ একদিকে মুখ করা এবং বারবার সেদিকেই ফিরে যাওয়া। যেমন কম্পাসের কাঁটা সবসময় মেরুর দিকেই মুখে করে থাকে। আপনি তাকে যতই নাড়া চাড়া বা ঝাঁকুনি দেন না কেন তা ঘুরে ফিরে মেরুর দিকে চলে আসে। অতএব قَلْبٍ مُنِيْبٍ অর্থ এমন হৃদয়-মন যা সব দিক থেকে এক আল্লাহর দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। অতঃপর সারা জীবন তার ওপরে যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন তাতে সে বার বার তার দিকেই ফিরে এসেছে। এ বিষয়টাকেই আমরা ‘অনুরক্ত মন” কথাটি দিয়ে ব্যক্ত করেছি। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহর কাছে প্রকৃত সম্মানের অধিকারী সে ব্যক্তি যে শুধু মুখে নয় বরং পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে সরল মনে তাঁর একান্ত আপনজন হয়ে আসে।
৪৪.
মূল আয়াতাংশ হচ্ছে ادْخُلُوهَا بِسَلَامٍ سلام শব্দটিকে যদি নিরাপত্তা অর্থে গ্রহণ করা হয় তাহলে তার অর্থ হবে, সব রকম দুঃখ, দুশ্চিন্তা, চিন্তা ও বিপদাপদ থেকে নিরাপদ হয়ে এ জান্নাতে প্রবেশ করো। তবে যদি শান্তি অর্থেই গ্রহণ করা হয় তাহলে অর্থ হবে, এ জান্নাতে এসো, আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে তোমাকে সালাম।

যে গুণাবলী থাকলে কোন ব্যক্তি জান্নাতলাভের উপযুক্ত হয় এসব আয়াতে আল্লাহ তা’আলা সে গুণাবলী বর্ণনা করেছেন। ঐগুলো হচ্ছেঃ (১) তাকওয়া, (২) আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন, (৩) আল্লাহর সাথে নিজের সম্পর্কের সযত্ন পাহারাদারী, (৪) আল্লাহকে না দেখে এবং তাঁর ক্ষমা পরায়ণতায় বিশ্বাসী হয়েও তাঁকে ভয় করা এবং (৫) অনুরক্ত হৃদয়-মন নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌঁছা অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত অনুরক্ত থাকার আচরণ করে যাওয়া।

.
৪৫.
অর্থাৎ তারা যা চাইবে তাতো পাবেই। কিন্তু আমি তাদেরকে আরো এমন কিছু দেব যা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা তো দূরের কথা তাদের মন-মগজে তার কল্পনা পর্যন্ত উদিত হয়নি।
৪৬.
অর্থাৎ তারা শুধু নিজেদের দেশেই শক্তিমান ছিল না পৃথিবীর অন্য অনেক দেশেও প্রবেশ করে দখল জমিয়েছিলো এবং ভুপৃষ্ঠের দূর-দূরান্ত পর্যন্ত তাদের লুটতরাজের অপকর্ম বিস্তার লাভ করেছিলো।
৪৭.
অর্থাৎ যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে পাকড়াও করার সময় সমুপস্থিত হলো তখন কি তাদের শক্তি তাদেরকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলো? পৃথিবীতে কোথাও কি তারা আশ্রয় লাভ করেছিলো? তাহলে কোন ভারসায় তোমরা এ আশা পোষণ করো যে, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তোমরা কোথাও আশ্রয় পেয়ে যাবে?
৪৮.
অন্য কথায় যাদের নিজেদের অন্তত এতটুকু বিবেক-বুদ্ধি আছে যে, সঠিক চিন্তা করতে পারে কিংবা উদাসীনতা ও পক্ষপাত থেকে এতটুকু পবিত্র ও মুক্ত যে, যখন অন্য কেউ তাকে প্রকৃত সত্য বুঝায় তখন একাগ্রভাবে তার কথা শোনো। এমনভাবে নয় যে, শ্রোতার মন-মগজ অন্য দিকে ব্যস্ত থাকায় উপদেশদাতার কথা কানের পর্দার ওপর দিয়েই চলে যায়।
.
৪৯.
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা হা-মীম আস সাজদার তাফসীর, টীকা, ১১ থেকে ১৫ পর্যন্ত।
.
৫০.
অর্থাৎ প্রকৃত ব্যাপার হলো, আমি গোটা এ বিশ্ব-জাহান মাত্র ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি এবং তা সৃষ্টি করে আমি ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে পড়িনি যে, পুনরায় তা সৃষ্টি করার সাধ্য আর আমার নেই। এখন এসব নির্বোধরা যদি তোমার কাছে মৃত্যুর পরের জীবনের খবর শুনে তোমাকে বিদ্রূপ করে এবং পাগল বলে আখ্যায়িত করে তাহলে ধৈর্য অবলম্বন করো। ঠাণ্ডা মাথায় এদের প্রতিটি অর্থহীন কথা শোন এবং তোমাকে যে সত্যটি পেশ করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে তা পেশ করতে থাকো।

এ আয়াতে আনুষঙ্গিকভাবে ইহুদী ও খৃস্টানদের প্রতি একটি সূক্ষ্ম বিদ্রূপ প্রচ্ছন্ন আছে। কারণ, ইহুদী ও খৃস্টানদের বাইবেলের এ কল্পকাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা ছয় দিনে আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিয়েছেন (আদিপুস্তক, ২:২)। বর্তমানে যদিও খৃস্টান পাদরীরা এতে লজ্জাবোধ করতে শুরু করেছে এবং তারা পবিত্র বাইবেলের উর্দূ অনুবাদে ‘বিশ্রাম নিয়েছেন’ কে ‘বিরত হয়েছেন’ কথায় পরিবর্তন করেছে। তা সত্ত্বেও কিং জেমসের নির্ভরযোগ্য ইংরেজী বাইবেলে (And he rested on seventh day) কথাটি স্পষ্ট বর্তমান আছে। ১৯৫৪ খৃস্টাব্দে ইহুদীরা ফিলাডেলফিয়া থেকে যে অনুবাদ প্রকাশ করেছে তাতেও একথাটি আছে। আরবী অনুবাদেও فاسبترح فى اليوم السابع কথাটি আছে।

.
৫১.
এটাই সেই পন্থা যার মাধ্যমে মানুষ ন্যায় ও সত্যের জন্য আন্দোলনে মর্মান্তিক ও নিদারুণ পরিস্থিতির মোকাবিলা করার এবং নিজের চেষ্টা-সাধনার সুফল অর্জিত হওয়ার সম্ভবানা থাকা সত্ত্বেও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে সারা জীবন ন্যায় ও সত্যের বাণী সমুন্নত করার এবং পৃথিবীকে কল্যাণের পথে আহবান জানানোর ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার শক্তি অর্জন করতে পারে। এখানে রবের প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করা অর্থ নামায। কুরআন মজীদের যেখানেই প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করাকে নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সম্পর্কিত করে উল্লেখ করা হয়েছে সেখানেই এর অর্থ হয়ে থাকে নামায। “সূর্যোদয়ের পূর্বে” ফজরের নামায। “সূর্যাস্তের পূর্বে দু’টি নামায আছে। একটি যোহরের নামায এবং অপরটি আসরের নামায। রাতে আছে মাগরির ও এশার। তাছাড়া তৃতীয় আরেকটি নামায হিসেবে তাহাজ্জুতের নামাযও রাতের তাসবীহর অন্তর্ভুক্ত। ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা বনী ইসরাঈল, টীকা ৯১ থেকে ৯৭ পর্যন্ত। ত্বাহা, টীকা ১১১; আর রূম, টীকা ২৩ ও ২৪। তাছাড়া সিজদা শেষ করার পরে যে তাসবীহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার অর্থ নামাযের পরের যিকরও হতে পারে এবং ফরযের পরে নফল নামায আদায় করাও হতে পারে। হযরত উমর, হযরত আলী, হযরত হাসান ইবনে আলী, হযরত আবু হুরাইরা, ইবনে আব্বাস, শা’বী মুজাহিদ, ইকরিমা, হাসান বাসরী, কাতাদা, ইবরাহীম নাখয়ী ও আওযায়ী এর অর্থ বলেছেন মাগরিবের পরের দু’রাকআত নামায। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস এবং অপর একটি রেওয়ায়াত অনুসারে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের ধারণাও এই যে, এর অর্থ নামাযের পরের যিকর। ইবনে যায়েদ বলেন, একথার উদ্দেশ্যে হচ্ছে ফরযের পরেও নফল আদায় করা হোক।

বুখারী ও মুসলিমে আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, একবার গরীব মুহাজিররা এসে বললো হে আল্লাহর রসূল, বড় বড় মর্যাদা তো বিত্তবান লোকেরাই লুফে নিল। নবী (সা.) বললেনঃ কি হয়েছে? তারা বললোঃ আমরা যেমন নামায পড়ি বিত্তবান লোকেরাও তেমনি নাযাম পড়ে। আমরা রোযা রাখি তারাও তেমনি রোযা রাখে। কিন্তু তারা দান করে আমরা দান করতে পারি না এবং তারা ক্রীতদাস মুক্ত করে আমরা করতে পারি না। রসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ আমি কি তোমাদের এমন কাজ বলে দিব, যা করলে তোমরা অন্য লোকদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে যাবে? তবে যারা সে কাজটিও করবে তাদের বাদ দিয়ে। সে কাজটি হচ্ছে তোমরা প্রত্যেক নামাযের পরে ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ‘আলহামদুল্লিহ’ এবং ‘আল্লাহু আকবার’ বলো। কিছুদিন পরে তারা এসে বললো, এ আমলের কথা আমাদের বিত্তবান ভাইয়েরাও শুনেছে এবং তারাও এ আমল করতে শুরু করেছে। একথা শুনে তিনি বললেনঃ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ । একটি রেওয়ায়াতে এ তাসবীহর সংখ্যা ৩৩ বারের পরিবর্তে দশবার করে পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।

হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে প্রত্যেক নামাযের পরে ৩৩ বার করে সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়তে বলেছিলেন। পরে এক আনসারী বলেছিলেনঃ আমি স্বপ্নে দেখেছি কেউ যেন আমাকে বলছে যদি তুমি এ তিনটি তাসবীহ ২৫ বার করে পড় এবং তারপর ২৫ বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড় তাহলে অধিক উত্তম হবে। নবী (সা.) বললেনঃ ঠিক আছে, সেভাবেই করতে থাকো। (আহমাদ, নাসায়ী, দারেমী)।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী বলেনঃ রসূলুল্লাহ ﷺ যখন নাময শেষ করে বসতেন তখন আমি তাঁকে এ দোয়া পড়তে শুনতামঃ

سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُونَ - وَسَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ - وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (احكام القران للجصاص)

এছাড়াও নামাযের পরবর্তী যিকরের আরো কতিপয় পন্থা রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে। যারা কুরআন মজীদের এ নির্দেশনা অনুসারে আমল করতে ইচ্ছুক তারা যেন হাদীসগ্রন্থ মিশকাতের আয যিকর বা’দাস সালাম অনুচ্ছেদ থেকে নিজের সবচেয়ে মনমত একটি দোয়া বেছে নেয় এবং সেটি আমল করে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজের বর্ণিত দোয়ার চাইতে ভাল দোয়া আর কি হতে পারে? তবে একথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, দোয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট কিছু শব্দ মুখে উচ্চারণ করাই নয়। বরং ঐসব শব্দে যে অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে মন-মগজে তা দৃঢ় ও বদ্ধমূল করা। তাই যে দোয়াই করা হোক না কেন ভাল করে তার অর্থ বুঝে নিতে হবে এবং তা মনে রেখেই দোয়া পড়তে হবে।

অনুবাদ: