আল-ফাতিহা ১ - আল-বাকারা ১৪১
আল-বাকারা ১৪২ - আল-বাকারা ২৫২
আল-বাকারা ২৫৩ - আল-ইমরান ৯২
আল-ইমরান ৯৩ - আন-নিসা ২৩
আন-নিসা ২৪ - আন-নিসা ১৪৭
আন-নিসা ১৪৮ - আল-মায়িদাহ ৮১
আল-মায়িদাহ ৮২ - আল-আন‘আম ১১০
আল-আন‘আম ১১১ - আল-আ‘রাফ ৮৭
আল-আ‘রাফ ৮৮ - আল-আনফাল ৪০
আল-আনফাল ৪১ - আত-তাওবাহ ৯২
আত-তাওবাহ ৯৩ - হুদ ৫
হুদ ৬ - ইউসুফ ৫২
ইউসুফ ৫৩ - ইবরাহীম ৫২
আল-হিজর ১ - আন-নাহল ১২৮
বনী ইসরাঈল ১ - আল-কাহফ ৭৪
আল-কাহফ ৭৫ - ত্ব-হা ১৩৫
আল-আম্বিয়া ১ - আল-হাজ্জ ৭৮
আল-মুমিনুন ১ - আল-ফুরকান ২০
আল-ফুরকান ২১ - আন-নামল ৫৫
আন-নামল ৫৬ - আল-‘আনকাবুত ৪৫
আল-‘আনকাবুত ৪৬ - আল-আহযাব ৩০
আল-আহযাব ৩১ - ইয়া-সীন ২৭
ইয়া-সীন ২৮ - আয-যুমার ৩১
আয-যুমার ৩২ - ফুসসিলাত ৪৬
ফুসসিলাত ৪৭ - আল-জাসিয়াহ ৩৭
আল-আহকাফ ১ - আয-যারিয়াত ৩০
আয-যারিয়াত ৩১ - আল-হাদীদ ২৯
আল-মুজাদালাহ ১ - আত-তাহরীম ১২
আল-মুলক ১ - আল-মুরসালাত ৫০
আন-নাবা ১ - আন-নাস ৬
তাযাক্কা تز كى পরিশুদ্ধ করা মানে পাক-পবিত্র করা, বিকশিত করা এবং উদ্বুদ্ধ ও উন্নত করা। পূর্বাপর সম্পর্কের ভিত্তিতে এর পরিষ্কার অর্থ দাঁড়ায়, যে ব্যক্তি নিজের নফস ও প্রবৃত্তিকে দুষ্কৃতি থেকে পাক-পবিত্র করে, তাকে উদ্বুদ্ধ ও উন্নত করে তাকওয়ার উচ্চতম পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং তার মধ্যে সৎপ্রবণতাকে বিকশিত করে, সে সাফল্য লাভ করবে। এর মোকাবেলায় দাসসামা دَسَّمَا শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর শব্দমূল হচ্ছে তাদসীয়া تدسيه তাদসীয়া মানে হচ্ছে দাবিয়ে দেয়া, লুকিয়ে ফেলা, ছিনিয়ে নেয়া, আত্মসাৎ করা ও পথভ্রষ্ট করা। পূর্বাপর সম্পর্কের ভিত্তিতে এর অর্থও এখানে সুস্পষ্ট হয়ে যায় অর্থাৎ সেই ব্যক্তি ব্যর্থ হবে, যে নিজের নফসের মধ্যে নেকী ও সৎকর্মের যে প্রবণতা পাওয়া যাচ্ছিল তাকে উদ্দীপিত ও বিকশিত করার পরিবর্তে দাবিয়ে দেয়, তাকে বিভ্রান্ত করে অসৎপ্রবণতার দিকে নিয়ে যায় এবং দুস্কৃতিকে তার ওপর এত বেশী প্রবল করে দেয়া যার ফলে তাকওয়া তার নীচে এমন ভাবে মুখ ঢাকে যেমন কোন লাশকে কবরের মধ্যে রেখে তার ওপর মাটি চাপা দিলে তা ঢেকে যায়। কোন কোন তাফসীরকার এই আয়াতের অর্থ বর্ণনা করে বলেছেন قَد افْلَحَ مَنْ زَكّاهَا الَّهُ نَفْسَه وَقَدْ جَابَ مَنْ دَسَّى اللّاهُ نَفْسَهঅর্থাৎ যে ব্যক্তির নফসকে আল্লাহ পাক-পবিত্র করে দিয়েছেন সে সাফল্য লাভ করেছে এবং যার নফসকে আল্লাহ দাবিয়ে দিয়েছেন সে ব্যর্থ হয়ে গেছে। কিন্তু এ ব্যাখ্যাটি প্রথমত ভাষার দিক দিয়ে কুরআনের বর্ণনাভঙ্গির পরিপন্থী। কারণ আল্লাহর যদি একথা বলাই উদ্দেশ্য হতো তাহলে তিনি এভাবে বলতেনঃ قَد افْلَحَت مَنْ زَكّاهَا الَّهُ نَفْسَه وَقَدْ جَابَت مَنْ دَسَّهَا اللّاهُ (যে নফসকে আল্লাহ পাক-পবিত্র করে দিয়েছেন সে সফল হয়ে গেছে এবং ব্যর্থ হয়ে গেছে সেই নফস যাকে আল্লাহ দাবিয়ে দিয়েছেন।) দ্বিতীয়, এই ব্যাখ্যাটি এই বিষয়বস্তু সম্বলিত কুরআনের অন্যান্য বর্ণনার সাথে সংঘর্ষশীল। সূরা আ’লায়মহান আল্লাহ বলেছেনঃ قَد افْلَحَ مَنْ تَزَكَْى(সফল হয়ে গেছে সেই ব্যক্তি যে পবিত্রতা করেছে-৪ আয়াত) সূরা ‘আবাসায় মহান আল্লাহ রসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ وَمَا عَلَيْكَ اَلاَّ تَزَكَْى “তোমাদের ওপর কি দায়িত্ব আছে যদি তারা পবিত্রতা অবলম্বন না করে? এই দু’টি আয়াতে পবিত্রতা অবলম্বন করাকে বান্দার কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এছাড়াও কুরআনের বিভিন্ন স্থানে এ সত্যটি বর্ণনা করা হয়েছে যে, এই দুনিয়ায় মানুষের পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। যেমন সূরা দাহ্র-এ বলা হয়েছেঃ “আমি মানুষকে একটি মিশ্রিত শুক্র থেকে পয়দা করেছি, যাতে তাকে পরীক্ষা করতে পারি, তাই তাকে আমি শোনার ও দেখার ক্ষমতা দিয়েছি।” (২ আয়াত) সূরা মূলকে হয়েছেঃ “তিনি মৃত্যু ও জীবন উদ্ভাবন করেছেন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করা যায় যে, তোমাদের মধ্যে কে ভালো কাজ করে। “(২ আয়াত) যখন একথা সুস্পষ্ট পরীক্ষা গ্রহণকারী যদি আগেভাগেই একজন পরীক্ষার্থীকে সামনে বাড়িয়ে দেয় এবং অন্যজনকে দাবিয়ে দেয় তাহলে আদতে পরীক্ষাই অর্থহীন হয়ে পড়ে। কাজেই কাতাদাহ, ইকরামা, মুজাহিদ ও সাঈদ ইবনে জুবাইর যা বলেছেন সেটিই হচ্ছে এর আসল তাফসীর। তারা বলেছেনঃ যাক্কাহা ও দাসসাহা’র কর্তা হচ্ছে বান্দা, আল্লাহ নন। আর ইবনে আবী হাতেম জুওয়াইর ইবনে সাঈদ থেকে এবং তিনি যাহহাক থেকে এবং যাহহাক ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, যাতে রসূলুল্লাহ ﷺ নিজেই এই আয়াতের অর্থ বর্ণনা করে বলেছেনঃ افْلَحَت نَفْسُ زَكّاهَا الَّهُ عَزَّ وَجَلَّ(সফল হয়ে গেছে সেই ব্যক্তি যাকে মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ পবিত্র করে দিয়েছেন) এই হাদীসটি সম্পর্কে বলা যায়, এখানে রসূলুল্লাহ ﷺ এর যে উক্তি পেশ করা হয়েছে তা আসলে তাঁর থেকে প্রমাণিত নয়। কারণ এই সনদের রাবী জুওয়াইর একজন প্রত্যাখ্যাত রাবী। অন্যদিকে ইবনে আব্বাসের সাথে যাহহাকের সাক্ষাত হয়নি। তবে ইমাম আহমাদ, মুসলিম, নাসাঈ ও ইবনে আবী শাইবা হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে যে রেওয়ায়াতটি করেছেন সেটি অবশ্যি একটি সহীহ হাদীস। তাতে বলা হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করতেনঃ
اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِى تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا
“হে আল্লাহ! আমার নফসকে তার তাকওয়া দান করো এবং তাকে পবিত্র করো। তাকে পবিত্র করার জন্য তুমিই সর্বোত্তম সত্তা। তুমিই তার অভিভাবক ও পৃষ্ঠপোষক। ’
রসূলের প্রায় এই একই ধরনের দোয়া তাবারানী, ইবনে মারদুইয়া ও ইবনুল মুনযির হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে এবং ইমাম আহমাদ হযরত আয়েশা থেকে উদ্ধৃত করেছেন। মূলত এর অর্থ হচ্ছে, বান্দা কেবল তাকওয়া ও তাযকীয়া তথা পবিত্রতা অবলম্বন করার ইচ্ছাই প্রকাশ করতে পারে। তবে তা তার ভাগ্যে যাওয়া আল্লাহর ইচ্ছা ও তাওফীকের ওপর নির্ভর করে। তাদসীয়া তথা নফসকে দাবিয়ে দেবার ব্যাপারেও এই একই অবস্থা অর্থাৎ আল্লাহ জোর করে কোন নফসকে দাবিয়ে দেন না। কিন্তু বান্দা যখন এ ব্যাপারে একেবারে আদা-পানি খেয়ে লাগে তখন তাকে তাকওয়া ও তাযকীয়ার তাওফীক থেকে বঞ্চিত করেন এবং সে তার নফসকে যে ধরনের ময়লা আবর্জনার মধ্যে দাবিয়ে দিতে চায় তার মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেন।
একঃ সেখানে বলা হয়েছে, মানুষের নফসকে একটি সুগঠিত ও সুসামঞ্জস্য প্রতিকৃতির ওপর সৃষ্টি করে মহান আল্লাহ তার দুস্কৃতি ও তাকওয়া তার প্রতি ইলহাম করেছেন। কুরআন এ সত্যটি বর্ণনা করার পর একথাও পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, দুষ্কৃতি ও তাকওয়ার এই ইলহামী (চেতনালব্ধ) জ্ঞান প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্বভাবে বিস্তারিত পথনির্দেশনা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। বরং এই উদ্দেশ্য মহান আল্লাহ অহীর মাধ্যমে নবীগণকে বিস্তারিত পথনির্দেশনা দান করেছেন। তাতে দুষ্কৃতির আওতায় কি কি জিনিস পড়ে, যা থেকে দূরে থাকতে হবে এবং তাকওয়া কাকে বলে, তা কিভাবে হাসিল করা যায়-এসব কথা পরিষ্কারভাবে বলে দেয়া হয়েছে। যদি অহীর সাধ্যমে প্রেরিত এই বিস্তারিত পথনির্দেশনা মানুষ গ্রহণ না করে, তাহলে সে দুস্কৃতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবে না এবং তাকওয়া অবলম্বনের পথও পাবে না।
দুইঃ এই আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে, দুস্কৃতি ও তাকওয়া মধ্যে থেকে যে কোনটি অবলম্বন করার অনিবার্য ফল হচ্ছে পুরস্কার ও শাস্তি। নফসকে দুষ্কৃতি মুক্ত ও তাকওয়ার সাহায্যে উন্নত করার ফলে সাফল্য অর্জিত হয়। আর তার সৎপ্রবণতাগুলোকে দাবিয়ে দিয়ে তাকে দুষ্কৃতির মধ্যে ডুবিয়ে দেবার ফল হচ্ছে ব্যর্থতা ও ধ্বংস।
একথাটি বুঝাবার একটি জন্য ঐতিহাসিক নজীর পেশ করা হচ্ছে। এ জন্য নমুনা হিসেবে সামূদ জাতিকে পেশ করা হয়েছে। কারণ অতীতে ধ্বংস প্রাপ্ত জাতিদের মধ্যে এই জাতিটির এলাকা ছিল মক্কাবাসীদের সবচেয়ে কাছে। উত্তর হিজাযে এর ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ ছিল। মক্কাবাসীদের বাণিজ্যিক কাফেলা সিরিয়া যাবার পথে প্রায়ই এই স্থানটি অতিক্রম করতো। জাহেলী যুগের কবিতায় এই জাতির উল্লেখ যেমন ব্যাপকভাবে করা হয়েছে তাতে বুঝা যায়, আরববাসীদের মধ্যে তাদের ধ্বংসের চর্চা অত্যন্ত ব্যাপক ছিল।