অনুরূপভাবে এ আয়াতগুলোতে আখেরাত বিশ্বাস পেশ করার সাথে সাথে তার স্বপক্ষে যৌক্তিক ধারাবাহিকতা সহকারে তিনটি যুক্তি পেশ করা হয়েছেঃ
একঃ দ্বিতীয় জীবন অর্থাৎ পরকালীন জীবন সম্ভব। কারণ, প্রথম অর্থাৎ দুনিয়ার জীবনের সম্ভাবনা জাজ্বল্যমান ঘটনার আকারে বিরাজমান।
দুইঃ পরকালীন জীবনের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, বর্তমান জীবনে মানুষ নিজের নৈতিক দায়িত্ব সঠিক বা বেঠিক যেভাবে পালন করে এবং তা থেকে পুরস্কার ও শাস্তি লাভের যে অবশ্যম্ভাবী যোগ্যতা সৃষ্টি হয় তার ভিত্তিতে বুদ্ধি ও ইনসাফ আর একটি জীবনের দাবী করে। সেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি তার নৈতিক কার্যক্রমের উপযুক্ত ফল প্রত্যক্ষ করবে।
তিনঃ বুদ্ধি ও ইনসাফের দৃষ্টিতে যখন পরকালীন জীবনের প্রয়োজন তখন এ প্রয়োজন অবশ্যই পূর্ণ করা হবে। কারণ, মানুষ ও বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা হচ্ছেন মহাজ্ঞানী। আর মহাজ্ঞানীর কাছে আশা করা যেতে পারে না যে, জ্ঞান ও ইনসাফ যা দাবী করে তিনি তা কার্যকর করবেন না।
গভীরভাবে চিন্তা করলে জানা যাবে, মৃত্যুর পরের জীবনকে যুক্তির সাহায্যে প্রমাণ করতে হলে, এ তিনটি যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপনই সম্ভব এবং এক্ষেত্রে এগুলো যথেষ্টও। এ যুক্তি-প্রমাণগুলোর পরে যদি আর কিছু অপূর্ণতা থেকে যায় তাহলে তা হচ্ছে মানুষকে চর্ম চোখে দেখিয়ে দেয়া যে, যে জিনিসটি সম্ভব, যার অস্তিত্বশীল হওয়ার প্রয়োজনও আছে এবং যাকে অস্তিত্বশীল করা আল্লাহর জ্ঞানের দাবীও, তাকে মানুষের চোখের সামনে হাযির করে দিতে হবে। কিন্তু বর্তমান দুনিয়াবী জীবনে এ শূন্যতা পূর্ণ করা হবে না। কারণ, চোখে দেখে ঈমান আনার কোন অর্থই হয় না। মহান আল্লাহ মানুষের পরীক্ষা নিতে চান। ইন্দ্রিয়ানুভূতি ও প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের ঊর্ধ্বে উঠে নিছক চিন্তা-ভাবনা ও সঠিক যুক্তি-প্রমাণের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহকে মেনে নেয় কিনা, এটিই এ পরীক্ষা।
এ প্রসঙ্গে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বর্ণনা করা হয়েছে। সেটি গভীর মনোযোগের দাবী রাখে। বলা হয়েছে, “আল্লাহ তার নিশানী গুলোকে উন্মুক্ত করে পেশ করেছেন তাদের জন্য, যারা জ্ঞানের অধিকারী।” “আর আল্লাহর সৃষ্ট প্রত্যেকটি জিনিসের মধ্যে নিশানী রয়েছে তাদের জন্য যারা ভুল দেখা ও ভুল পথে চলা থেকে বাচতে চায়।” এর মানে হচ্ছে, আল্লাহ অত্যন্ত বিজ্ঞ জনোচিত পদ্ধতিতে জীবনের নিদর্শনাবলীর মধ্যে চতুর্দিকে এমন সব চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন যা ঐ নিদর্শনগুলোর পেছনে আত্মগোপন করে থাকা সত্য গুলোকে পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করছে। কিন্তু এ নিদর্শন গুলোর সাহায্য নিগূঢ় সত্যে একমাত্র তারাই উপনীত হতে পারে যাদের মধ্যে নিম্নোক্ত গুণ দু’টি আছেঃ
একঃ তারা মূর্খতা ও অজ্ঞতাপ্রসূত একগুয়েমী বিদ্বেষ ও স্বার্থ প্রীতি থেকে মুক্ত হয়ে জ্ঞান অর্জন করার এমন সব মাধ্যম ব্যবহার করে যেগুলো আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন।
দুইঃ তারা ভুল থেকে আত্মরক্ষা ও সঠিক পথ অবলম্বন করার ইচ্ছা নিজেদের অন্তরে পোষণ করে।