এখানে প্রাসঙ্গিক আলোচনার প্রতি দৃষ্টি রাখলে একথা স্পষ্টই ধরা পড়ে যে, আসলে হযরত নূহ (আ) এবং তার পরে সাইয়িদুনা মুহাম্মাদ ﷺ পর্যন্ত সকল নবী পর্যায়ক্রমে যে দায়িত্ব নিযুক্ত হয়েছেন হযরত মূসা ও হারুন(আ) সেই একই দায়িত্ব নিযুক্ত হয়েছিলেন এ সূরার শুরু থেকে একই বিষয়বস্তু চলে আসছে। এ বিষয়বস্তুটি হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীনকে নিজের রব ও ইলাহ হিসেবে মেনে নাও। এই সঙ্গে একথা স্বীকার কর নাও যে, জীবনের পরে আর একটি জীবন আসছে, সেখানে তোমাদের আল্লাহ সামনে হাযির হতে এবং নিজেদের কাজের হিসাব দিতে হবে। তারপর যারা নবীর এ দাওয়াত মনে নিতে অস্বীকার করছিল তাদেরকে বুঝানো হচ্ছে। শুধুমাত্র তোমাদের কল্যাণ নয় বরং সমগ্র বিশ্ব মানবতার কল্যাণ চিরকাল একটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে এসেছে। সে বিষয়টি হচ্ছে, তাওহীদ ও আখেরাত বিশ্বাসের আহবানে সাড়া দেয়া। প্রতি যুগে আল্লাহর নবীগণ এ আহবানই জানিয়েছেন। তারা এ আহবানে সাড়া দিয়ে নিজের ব্যবস্থাকে এরই ভিত্তিতে কায়েম করার তাগিদ করেছেন। যারা একাজ করেছে একমাত্র তারাই কল্যাণ ও সাফল্য লাভ করেছে। আর যে জাতি একে অস্বীকার করেছে তারা শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গেছে। এটিই এ সূরার কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়। এ প্রেক্ষাপটে যখন ঐতিহাসিক নজীর হিসেবে অন্যান্য নবীদের প্রসঙ্গে আলোচিত হয়েছে তখন অনিবার্যভাবে দাওয়াত এর অর্থ হয়েছে এই যে, এ সূরায় যে দাওয়াত দেয়া হয়েছে সেইই ছিল সকল নবীর দাওয়াত এবং এ দাওয়াত নিয়েই হযরত মুসা ও হারুণকেও ফেরাউন ও তার কওমের সরদারদের কাছে গিয়েছিলেন। কোন কোন লোক যেমন মনে করে থাকেন, হযরত মুসা ও হারুনের দায়িত্ব ছিল একটি বিশেষ জাতিকে অন্যান্য জাতির গোলামী থেকে মুক্ত করা। যদি এটিই সত্য হতো তাহলে এ প্রেক্ষাপটি এ ঘটনাটিকে ঐতিহাসিক নজীর হিসেবে পেশ করা একেবারেই বেমানান হতো। নিঃসন্দেহে বনী ইসরাঈলকে (একটি মুসলিম কওম) একটি কাফের কওমের আধিপত্য (যদি তারা নিজেদের কুফরীর ওপর অটল থাকে) মুক্ত করা এদের দুজনের মিশনের একটি অংশ ছিল। কিন্তু এটি ছিল তাদের নবুওয়াতের একটি আনুষঙ্গিক উদ্দেশ্য, মূল উদ্দেশ্য ছিল না। আসল উদ্দেশ্য তাই ছিল যা কুরআনের দৃষ্টিতে সকল নবীর নবুওয়াতের উদ্দেশ্য ছিল এবং সূরা নাযিআতে যে সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে বলে দেয়া হয়েছেঃ
اذْهَبْ إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى - فَقُلْ هَلْ لَكَ إِلَى أَنْ تَزَكَّى - وَأَهْدِيَكَ إِلَى رَبِّكَ فَتَخْشَى
ফেরাউনের কাছে যাও, কারণ সে গোলামীর সীমা অতিক্রম করে গেছে এবং তাকে বলো, তুমি কি নিজেকে শুধরে জন্য তৈরী আছো? আমি তোমাকে তোমার রবের দিকে পথ দেখাবো, তুমি কি তাকে ভয় করবে?
কিন্তু যেহেতু ফেরাউন ও তার রাজ্যের প্রধানগণ এ দাওয়াত গ্রহণ করেনি এবং শেষ পর্যন্ত হযরত মূসাকে নিজের মুসলিম কওমকে তার অধীনতার নাগপাশ থেকে বের করে আনতে হয়েছিল। তাই তার মিশনের এ অংশটিই ইতিহাসে প্রাধান্য লাভ করেছে এবং কুরআনেও একে ঠিক ইতিহাসে যেভাবে আছে তেমনিভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যে ব্যক্তি কুরআনের বিস্তারিত বিবরণগুলোকে তার মৌলিক বক্তব্য থেকে আলাদা করে দেখার মতো ভুল করে না বরং সেগুলোকে সমগ্র বক্তব্যের অধীনেই দেখে থাকে, সে কখনো একটি জাতির দাসত্ব মুক্তিকে কোন নবীর নবুওয়াতের আসল উদ্দেশ্য এবং আল্লাহর সত্য দ্বীনকে দাওয়াতকে নিছক তার আনুষঙ্গিক উদ্দেশ্য মনে করার মত বিভ্রান্তিতে লিপ্ত হতে পারে না। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সুরা ত্বা-হা ৪৪ থেকে ৫২ আয়াত, যুখরুফ ৪৬ থেকে ৫৬ আয়াত এবং মুযাম্মিল ১৫ থেকে ১৬ আয়াত)।