কুরআনের একথা বিশেষভাবে সুস্পষ্ট করে পেশ করার কারণ হচ্ছে এই যে, মক্কার জনবসতিতেও মুহাম্মাদ ﷺ এর সাথে সহযোগিতা করার জন্য যারা এগিয়ে এসেছিলেন তারাও জাতির বয়স্ক ও বয়োবৃদ্ধ লোক ছিলেন না। বরং তারাও সবাই ছিলেন বয়সে নবীন। আলী ইবনে আবী তালেব (রা.), জাফর ইবনে তাইয়ার(রা.), যুবাইর (রা.), তালহা (রা.), সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.), মুসআব ইবনে উমাইর (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা.) মতো লোকদের বয়স ইসলাম গ্রহণের সময় ২০ বছরের কম ছিল। আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), বিলাল (রা.) ও সোহাইবের (রা.) বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। আবু উবাদাহ ইবনুল জাররাহ (রা.), যায়েদ ইবনে হারেসাহ (রা.), উসমান ইবনে আফ্ফান (রা.) ও উমর ফারুকের (রা.) বয়স ছিল ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এদের সবার থেকে বেশী বয়সের ছিলেন হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রা.)। তার বয়স ঈমান আনার সময় ৩৮ বছরের বেশী ছিল না। প্রথমিক মুসলমানদের মধ্যে শুধুমাত্র একজন সাহাবীর নাম আমরা পাই যার বসয় ছিল নবী (সা.) এর চেয়ে বেশী। তিনি ছিলেন হযরত উবাদাহ ইবনে হারেস মুত্তালাবী (রা.)। আর সম্ভবত সাহাবীগণের সমগ্র দলের মধ্যে একমাত্র হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) ছিলেন নবী (সা.) এর সমবয়সী।
হযরত মূসা ও ফেরাউনের এ সংঘাতে সাধারণ বনী ইসরাঈলের ভূমিকা কি ছিল? একথা বাইবেলের নিম্নোক্ত অংশ থেকে আমরা জানতে পারি।
পরে ফেরাউনের নিকট ইহতে বাহির হইয়া আসিবার সময় তাহারা মূসার ও হারুণের সাক্ষাত পাইল। তাহারা পথে দাঁড়াইয়া ছিলেন। তাহারা তাহাদিগকে কহিল, সদা প্রভু তোমাদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া বিচার করুনঃ কেননা, তোমরা ফেরাউনের দৃষ্টিতে ও তাহার দাসগণের দৃষ্টিতে আমাদিগকে দুর্গন্ধ স্বরূপ করিয়া আমাদের প্রাণনাশার্থে তাহাদের হস্তে খড়গ দিয়াছ। (যাত্রা পুস্তক৫: ২০-২১)
তালমুদে লেখা হয়েছে বনী ইসরাঈল মূসা ও হারুন (আ) কে বলতোঃ
“আমাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে, একটি নেকড়ে বাঘ একটি ছাগলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং রাখাল এসে নেকড়ের মুখ থেকে ছাগলটিকে বাঁচাবার চেষ্টা করলো। তাদের উভয়ের দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ছাগলটা টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। ঠিক এভাবেই তোমার ও ফেরাউনের টানা হেঁচড়ায় আমাদের দফা রফা হয়েই যাবে।”
সূরা আ'রাফে একথাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছেঃ বনী ইসরাইল হযরত মুসাকে বললোঃ
أُوذِينَا مِنْ قَبْلِ أَنْ تَأْتِيَنَا وَمِنْ بَعْدِ مَا جِئْتَنَا (اية-129)
“তুমি আসার আগেও আমরা নির্যাতিত হয়েছি, তুমি আসার পরেও নিপীড়নের শিকার হচ্ছি।”