فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ ءَامَنَتْ فَنَفَعَهَآ إِيمَـٰنُهَآ إِلَّا قَوْمَ يُونُسَ لَمَّآ ءَامَنُوا۟ كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَذَابَ ٱلْخِزْىِ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا وَمَتَّعْنَـٰهُمْ إِلَىٰ حِينٍۢ
এমন কোন দৃষ্টান্ত আছে কি যে, একটি জনবসতি চাক্ষুষ আযাব দেখে ঈমান এনেছে এবং তার ঈমান তার জন্য সুফলদায়ক প্রমাণিত হয়েছে? ইউনুসের কওম ছাড়া ৯৮ (এর কোন নজির নেই) তারা যখন ঈমান এনেছিল তখন অবশ্যই আমি তাদের ওপর থেকে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনার আযাব হটিয়ে দিয়েছিলাম ৯৯ এবং তাদেরকে একটি সময় পর্যন্ত জীবন উপভোগ করার সুযোগ দিয়েছিলাম। ১০০
৯৮
ইউনুস (আ) (যাকে বাইবেলে যোনা নামে উল্লেখ করা হয়েছে এবং যার সময়কাল খৃষ্টপূর্ব ৮৬০ থেকে ৭৮৪ সালের মাঝামাঝি সময় বলা হয়ে থাকে) যদিও বনী ইসরাঈলী নবী ছিলেন তবুও তাকে আসিরিয়াবাসীদের হেদায়াতের জন্য ইরাকে পাঠানো হয়েছিল। এ কারণে আসিরিয়াবাসীদেরকে এখনে ইউনূসের কওম বলা হয়েছে। সে সময় এ কওমের কেন্দ্র ছিল ইতিহাস খ্যাত নিনোভা নগরী। বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এ নগরীর ধ্বংসাবশেষ আজো বিদ্যমান। দাজলা নদীর পূর্ব তীরে আজকের মুসেল শহরের ঠিক বিপরীত দিকে এ ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এ এলাকায় ইউনুস নবী নামে একটি স্থান আজো বর্তমান রয়েছে। এ জাতির রাজধানী নগরী নিনোভা প্রায় ৬০ মাইল এলাকা জুড়ে অবস্থিত ছিল। এ থেকে এদের জাতীয় উন্নতির বিষয়টি অনুমান করা যেতে পারে।
৯৯
কুরআনে এ ঘটনার দিকে তিন জায়গায় শুধুমাত্র ইঙ্গিত করা হয়েছে। কোন বিস্তারিত বিবরণ সেখানে দেয়া হয়নি। (দেখুন আম্বিয়া ৮৭-৮৮ আয়াত, আস্ সাফফাত ১৩৯-১৪৮ আয়াত ও আল কলম ৪৮-৫০ আয়াত) তাই "আযাবের ফায়সালা হয়ে যাবার পর কারোর ঈমান আনা তার জন্য উপকারী হয় না।" আল্লাহ তার এ আইন থেকে হযরত ইউনুসের কওমকে কোন্ কোন্ কারণে নিষ্কৃতি দেন তা নিশ্চয়তার সাথে বলা সম্ভব নয়। বাইবেলে "যোনা ভাববাদীর পুস্তক" নাম দিয়ে যে সংক্ষিপ্ত সহীফা লিপিবদ্ধ হয়েছে তাতে কিছু বিবরণ পাওয়া গেলেও বিভিন্ন কারণে তা নির্ভরযোগ্য নয়। প্রথমত তা আসমানী সহীফা নয় এবং ইউনুস (আ) এর লেখাও না। বরং তার তিরোধানের চার পাচশো বছর পর কোন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি ইউনূসের ইতিহাস হিসেবে লিখে এটিকে পবিত্র গ্রন্থসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেন। দ্বিতীয়ত এর মধ্যে কতক একেবারেই আজেবাজে কথাও পাওয়া যায়। এগুলো মেনে নেবার মত নয়। তবুও কুরআনের ইশারা ও ইউনুসের সহীফার বিস্তারিত বিবরণ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করলে কুরআনের তাফসীরকারকগণ যে কথা বলেছেন তাই সঠিক বলে মনে হয়। তারা বলেছেন, হযরত ইউনূস (আ) যেহেতু আযাবের ঘোষণা দেবার পর আল্লাহর অনুমতি ছাড়াই নিজের আবাস্থল ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন তাই আযাবের লক্ষণ দেখে যখন আসিরীয়রা তওবা করলো এবং গোনাহের জন্য ক্ষমা চাইলো তখন মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন। কুরআন মজীদে আল্লাহর বিধানের যে মৌলিক নিয়ম কানুন বর্ণনা করা হয়েছে তার একটি স্বতন্ত্র ধারা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ কোন জাতিকে ততক্ষণ আযাব দেন না যতক্ষণ না পূর্ণাঙ্গ দলীল-প্রমাণ সহকারে সত্যকে তাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তোলেন। কাজেই নবী যখন সংশ্লিষ্ট জাতির জন্য নির্ধারিত অবকাশের শেষ মুহূর্তে পর্যন্ত উপদেশ বিতরণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারেননি এবং আল্লাহর নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজ দায়িত্বে হিজরত করে চলে গেছেন তখন আল্লাহর সুবিচার নীতি এ জাতিকে আযাব দেয়া সমীচীন মনে করেনি। কারণ তার কাছে পূর্ণাঙ্গ দলীল প্রমাণ সহকারে সত্যকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরার আইনগত শর্তাবলী পূর্ণ হতে পারেনি। (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন সূরা আস সাফাফাত এর ব্যাখ্যা ৮৫ টীকা)।
১০০
ঈমান আনার পর যে জাতিটির আয়ু বাড়িয়ে দেয়া হলো। পরে তারা আবার চিন্তা ও কাজের ক্ষেত্রে ভুল পথে পা বাড়ানো শুরু করলো। নাহোম নবী (খৃষ্টপূর্ব ৭২০-৬৯৮) এ সময় তাদেরকে সতর্ক করলেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হলো না। তারপর সফনীয় নবী (খৃস্টপূর্ব ৬৪০-৬০৯) তাদেরকে শেষবারের মত সতর্ক করলেন। তাও কার্যকর হলো না। শেষ পর্যন্ত ৬১২ খৃষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি সময়ে আল্লাহ তাদের ওপর মিডিয়াবাসীদের আগ্রাসন সংঘটিত করালেন। মিডিয়ার বাদশাহ ব্যাবিলনবাসীদের সহায়তায় আসিরিয়া এলাকা আক্রমণ করলেন। আসিরীয় সেনাদল পরাজিত হয়ে রাজধানী নিনোভায় অন্তরীণ হলো। কিছুকাল পর্যন্ত তারা জোরেশোরে মোকাবিলা করলো। তারপর দাজলায় এলো বন্যা। এ বন্যায় নগর প্রাচীর ধ্বসে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণকারীরা নগরে প্রবেশ করলো এবং পুরো শহর জ্বালিয়ে ভস্ম করলো। আশপাশের এলাকারও একই দশা হলো। আসিরীয়ার বাদশাহও নিজের মহলে আগুন লাগিয়ে তাতে পুড়ে মরলো। আর এ সাথে আসিরীয় রাজত্ব ও সভ্যতারও ইতি ঘটলো চিরকালের জন্য। আধুনিক কালে এ এলাকায় প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ খননের যে প্রচেষ্টা চলছে তাতে এখানে অগ্নিকাণ্ডের চিহ্ন অত্যন্ত স্পষ্ট দেখা গেছে।