হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) রেওয়ায়াত করেছেন, রসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের এখানে এলেন। আমার তাঁকে তাজা খেজুর খাওয়ালাম এবং ঠাণ্ডা পানি পান করালাম। তিনি বললেনঃ “এগুলো এমন সব নিয়ামতের অন্তর্ভুক্ত যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” (মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির, ইবনে মারদুইয়া, আবদ ইবনে হুমাইদ ও বাইহাকী ফিশ্ শু’আব)।
হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ﷺ হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমরকে (রা.) বললেন, চলো আবুল হাইসাম ইবনুত তাইহান আনসারীর ওখানে যাই। কাজেই তাদেরকে নিয়ে তিনি ইবনুত তাইহানের খেজুর বাগানে গেলেন। তিনি এক কাঁদি খেজুর এনে মেহমানদের সামনে রাখলেন। রসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তুমি নিজে খেজুর ছিঁড়ে আনলে না কেন? তিনি বললেন আমি চাচ্ছিলাম আপনারা নিজেরা বেছে বেছে খেজুর খাবেন। কাজেই তারা খেজুর খেলেন এবং ঠাণ্ডা পানি পান করলেন। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন “সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ সমর্পিত, কিয়ামতের দিন যেসব নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এই ঠাণ্ডা ছায়া, ঠাণ্ডা খেজুর ও ঠাণ্ডা পানি--- এগুলো তার অন্তর্ভুক্ত।” (এই ঘটনা মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে জারীর ও আবুল ইয়ালা প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ বিভিন্ন সূত্রে আবু হুরাইরাহ থেকে উদ্ধৃত করেছেন। এদের কেউ কেউ উক্ত আনসার সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন আবার কেউ কেউ শুধুমাত্র একজন আনসারী বলেই ক্ষান্ত হয়েছেন। এ ঘটনাটি বিভিন্ন সূত্রে এবং বিস্তারিত আকারে ইবনে আবু হাতেম হযরত উমর থেকে এবং ইমাম আহমাদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবু আসী নামক একজন মুক্তি প্রাপ্ত গোলাম থেকে উদ্ধৃত করেছেন। ইবনে হাইয়ান ও ইবনে মারদুইয়া হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে একটি রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন। তা থেকে জানা যায়, প্রায় এই একই ধরনের ঘটনা হযরত আবু আইউব আনসারীর ওখানেও ঘটেছিল)।
এই হাদীসগুলো থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, জিজ্ঞাসাবাদ কেবল কাফেরদেরকে করা হবে না, সৎ মু’মিনদেরকেও করা হবে। আর আল্লাহ মানুষকে যে নিয়ামতগুলো দান করেছেন সেগুলো সীমা সংখ্যাহীন। সেগুলো গণনা করা সম্ভব নয়। বরং এমন অনেক নিয়ামতও আছে যেগুলোর মানুষ কোন খবরই রাখে না। কুরআন মজীদে বলা হয়েছে (وَاِنۡ تَعُدُّوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ لَا تُحۡصُوۡهَاؕ ) অর্থাৎ “যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামতগুলো গণনা করতে থাকো তাহলে সেগুলো পুরোপুরি গণনা করতেও পারবে না।” (ইবরাহীম ৩৪ আয়াত) এই নিয়ামতগুলোর মধ্য থেকে অসংখ্য নিয়ামত মহান আল্লাহ সরাসরি মানুষকে দিয়েছেন। আবার বিপুল সংখ্যক নিয়ামত মানুষকে দান করা হয় তার নিজের উপার্জনের মাধ্যমে। নিজের উপার্জিত নিয়ামতগুলো মানুষ কিভাবে উপার্জন ও ব্যয় করেছে সে সম্পর্কে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহর কাছ থেকে সরাসরি যে নিয়ামতগুলো সে লাভ করেছে সেগুলোকে সে কিভাবে ব্যবহার করেছে তার হিসেব তাকে দিতে হবে। আর সামগ্রিকভাবে সমস্ত নিয়ামত সম্পর্কে তাকে বলতে হবে যে, সেগুলো যে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত এর স্বীকৃতি সে দিয়েছিল কিনা এবং নিজের ইচ্ছা, মনোভাব ও কর্মের সাহায্যে সেগুলোর জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল কি না? অথবা সে কি একথা মনে করতো, এসব কিছু হঠাৎ ঘটনাক্রমেই সে পেয়ে গেছে? অথবা সে কি একথা মনে করেছিল যে, অনেকগুলো খোদা তাকে এগুলো দিয়েছেন? অথবা সে কি একথা মনে করেছিল যে, এগুলো একজন আল্লাহর নিয়ামত ঠিকই কিন্তু এগুলো দান করার ব্যাপারে আরো অনেক সত্তার হাত রয়েছে? এ কারণে তাদেরকে মাবুদ গণ্য করেছিল এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল?