সারা দুনিয়ার কাফের মুশরিকরা যেসব উপাস্যের উপাসনা, আরাধনা ও পূজা করে, ফেরেশতা, জিন, নবী, আউলিয়া, জীবিত ও মৃত মানুষের আত্মা তথা ভূত-প্রেত, চাঁদ, সূর্য, তারা, জীব-জন্তু, গাছপালা, মাটির মূর্তি বা কাল্পনিক দেব-দেবী সবই এর অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা যেতে পারে, আরবের মুশরিকরা মহান আল্লাহকেও তো মাবুদ ও উপাস্য বলে মানতো এবং দুনিয়ার অন্যান্য মুশরিকরাও প্রাচীনযুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্তও আল্লাহর উপাস্য হবার ব্যাপারটি অস্বীকার করেনি। আর আহলে কিতাবরা তো আল্লাহকেই আসল মাবুদ বলে মানতো। এক্ষেত্রে কোন প্রকার ব্যতিক্রমের উল্লেখ না করেই এদের সমস্ত মাবুদের ইবাদাত করা থেকে সম্পর্কহীনতা ও দায়মুক্তির কথা ঘোষণা করা, যেখানে আল্লাহও তার অন্তর্ভুক্ত, কিভাবে সঠিক হতে পারে? এর জবাবে বলা যায়, আল্লাহকে অন্য মাবুদদের সাথে মিশিয়ে মাবুদ সমষ্টির একজন হিসেবে যদি অন্যদের সাথে তাঁর ইবাদাত করা হয় তাহলে তাওহীদ বিশ্বাসী প্রতিটি ব্যক্তি অবশ্যি নিজেকে এ ইবাদাত থেকে দায়মুক্ত ও সম্পর্কহীন ঘোষণা করবে। কারণ তার দৃষ্টিতে আল্লাহ মাবুদ সমষ্টির একজন মাবুদ নন। বরং তিনি একাই এবং একক মাবুদ। আর এ সমষ্টি ইবাদাত আসলে আল্লাহর ইবাদাত নয়। যদিও আল্লাহর ইবাদাত এর অন্তর্ভুক্ত। কুরআন মজীদে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে একমাত্র সেটিই আল্লাহর ইবাদাত যার মধ্যে অন্যের ইবাদতের কোন গন্ধও নেই এবং যার মধ্যে মানুষ নিজের বন্দেগীকে পুরোপুরি আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে।
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ
লোকদেরকে এছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা পুরোপুরি একমুখী হয়ে নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে তাঁর ইবাদাত করবে।
কুরআনের বহু জায়গায় সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে এবং অত্যন্ত জোরালো ভাষায় এ বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে। যেমন সূরা আন নিসা ১৪৫ ও ১৪৬, আল আ’রাফ ২৯, আয যুমার ২, ৩, ১১, ১৪ ও ১৫ এবং আল মু’মিন ১৪ ও ৬৪-৬৬ আয়াতসমূহ। এ বক্তব্য একটি হাদীসে কুদসীতেও উপস্থাপিত হয়েছে। তাতে রসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, প্রত্যেক শরীকের অংশীদারিত্ব থেকে আমি সবচেয়ে বেশী মুক্ত। যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করেছে যার মধ্যে আমার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করেছে, তা থেকে আমি সম্পূর্ণরূপে মুক্ত এবং আমার সাথে যাকে সে ঐ কাজে শরীক করেছে, ঐ সম্পূর্ণ কাজটি তারই জন্য (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ ও ইবনে মাজাহ)। কাজেই আল্লাহকে দুই, তিন বা বহু ইলাহের একজন গণ্য করা এবং তাঁর সাথে অন্যদের বন্দেগী উপাসনা ও পূজা করাই হচ্ছে আসল কুফরী এবং এ ধরনের কুফরীর সাথে পুরোপুরি সম্পর্কহীনতার কথা ঘোষণা করাই এ সূরার উদ্দেশ্য)