কারণ এখানে শুধুমাত্র “আর না তোমরা তার ইবাদাত করবে যার ইবাদাত আমি করি” একথাটুকুর পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। আর আগের বক্তব্যে একথাটি যে অর্থে বলা হয়েছিল এখানে সে অর্থে এর পুনরাবৃত্তি করা হয়নি। কিন্তু পুনরাবৃত্তি অস্বীকার করার পর মুফাসসিরগণের এ দলটি এ দু’টি বাক্যের যে অর্থ বর্ণনা করেছেন তা পরস্পর অনেক ভিন্নধর্মী। এখানে তাদের প্রত্যেকের বর্ণিত অর্থ উল্লেখ করে তার ওপর আলোচনা করার সুযোগ নেই। আলোচনা দীর্ঘ হবার আশঙ্কায় শুধুমাত্র আমার মতে যে অর্থটি সঠিক সেটিই এখানে বর্ণনা করলাম।
প্রথম বাক্যে বলা হয়েছেঃ “আর না আমি তাদের ইবাদাত করবো যাদের ইবাদাত তোমরা করে আসছো।” এর বক্তব্য দ্বিতীয় আয়াতের বক্তব্য বিষয় থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সেখানে বলা হয়েছেঃ “আর আমি তাদের ইবাদাত করি না যাদের ইবাদাত তোমরা করো।” এ দু’টি বক্তব্যে দু’টি দিক দিয়ে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এক, অমুক কাজ করি না বা করবো না বলার মধ্যে যদিও অস্বীকৃতি ও শক্তিশালী অস্বীকৃতি রয়েছে কিন্তু আমি অমুক কাজটি করবো না একথার ওপর অনেক বেশী জোর দেয়া হয়েছে। কারণ এর অর্থ হচ্ছে, সেটা এত বেশী খারাপ কাজ যে, সেটা করা তো দূরের কথা সেটা করার ইচ্ছা পোষণ করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দুই “যাদের ইবাদাত তোমরা করো” একথা বলতে কাফেররা বর্তমানে যেসব মাবুদের ইবাদাত করে শুধুমাত্র তাদেরকে বুঝায়। বিপরীতপক্ষে “যাদের ইবাদাত তোমরা করেছো” বললে এমন সব মাবুদদের কথা বুঝায় যাদের ইবাদাত কাফেররা ও তাদের পূর্বপুরুষরা অতীতে করেছে। একথা সবাই জানে, মুশরিক ও কাফেরদের মাবুদদের মধ্যে হামেশা রদবদল ও কমবেশী হতে থেকেছে। বিভিন্ন যুগে কাফেরদের বিভিন্ন দল বিভিন্ন মাবুদের পূজা করেছে। সবসময় ও সব জায়গায় সব কাফেরের মাবুদ কখনো এক থাকেনি। কাজেই এখানে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আমি তোমাদের শুধু আজকের মাবুদদের থেকে নয়, তোমাদের পিতৃপুরুষের মাবুদদের থেকেও দায়মুক্ত। এ ধরনের মাবুদদের ইবাদাত করার চিন্তাও মনের মধ্যে ঠাঁই দেয়া আমার কাজ নয়।
আর দ্বিতীয় বাক্যটিতে এ ব্যাপারে বলা যায়, যদিও ৫ নম্বর আয়াতে উল্লেখিত এ বাক্যটির শব্দাবলী ও ৩ নম্বর আয়াতের শব্দাবলী একই ধরনের তবুও এদের উভয়ের মধ্যে অর্থের বিভিন্নতা রয়েছে। তিন নম্বর আয়াতে সংশ্লিষ্ট বাক্যটি নিম্নোক্ত বাক্যটির পরে এসেছেঃ “আমি তাদের ইবাদাত করি না যাদের ইবাদাত তোমরা করো।” তাই এর অর্থ হয়, “আর না তোমরা সেই ধরনের গুণাবলী সম্পন্ন একক মাবুদের ইবাদাত করবে যার ইবাদাত আমি করি।” আর পাঁচ নম্বর আয়াতে এই সংশ্লিষ্ট বাক্যটি নিম্নোক্ত বাক্যটির পরে এসেছেঃ “আর না আমি তাদের ইবাদাত করবো যাদের ইবাদাত তোমরা করেছো।” তাই এর মানে হয় “আর না তোমরা সেই একক মাবুদের ইবাদাত করবে বলে মনে হচ্ছে যার ইবাদাত আমি করি।” অন্য কথায়, তোমরা ও তোমাদের পূর্ব পুরুষরা যাদের যাদের পূজা-উপাসনা করেছো তাদের পূজারী হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর বহু মাবুদের বন্দেগী পরিহার করে একক মাবুদের ইবাদাত করার ব্যাপারে তোমাদের যে বিতৃষ্ণা সে কারণে তোমরা নিজেদের এ ভুল ইবাদাত-বন্দেগীর পথ ছেড়ে দিয়ে আমি যাঁর ইবাদাত করি তাঁর ইবাদাত করার পথ অবলম্বন করবে, এ আশাও করি না।