مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً (النحل: 97)
“যে ব্যক্তিই ঈমান সহকারে সৎকাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো।”
লোকদের মধ্যে সাধারণভাবে ছড়িয়ে থাকা একটি বিভ্রান্তি দূর করাই এর উদ্দেশ্য। বিভ্রান্তিটি হচ্ছে, আল্লাহ ভীতি, সততা, সাধুতা ও দায়িত্বানুভূতির পথ অবলম্বন করলে মানুষ আখেরাতে লাভবান হলেও হতে পারে কিন্তু এর ফলে তার দুনিয়া একদম বরবাদ হয়ে যায়। এ মন্ত্র শয়তান প্রত্যেক দুনিয়ার মোহে মুগ্ধ অজ্ঞ-নির্বোধের কানে ফুঁকে দেয়। এ সঙ্গে তাকে এ প্ররোচনাও দেয়া যে, এ ধরনের আল্লাহ ভীরু ও সৎলোকদের জীবনে দারিদ্র, অভাব ও অনাহার ছাড়া আর কিছুই নেই। আল্লাহ এ ধারণার প্রতিবাদ করে বলেন, এ সঠিক পথ অবলম্বন করলে তোমাদের শুধুমাত্র আখেরাতই নয়, দুনিয়াও সমৃদ্ধ হবে। আখেরাতের মতো ও এ দুনিয়ায় যথার্থ মর্যাদা ও সাফল্যও এমনসব লোকের জন্য নির্ধারিত, যারা আল্লাহর প্রতি যথার্থ আনুগত্য সহকারে সৎ জীবন যাপন করে, যারা পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত চরিত্রের অধিকারী হয়, যাদের ব্যবহারিক জীবনে ও লেনদেনে কোন ক্লেদ ও গ্লানি নেই, যাদের ওপর প্রত্যেকটি বিষয়ে ভরসা করা যেতে পারে, যাদের থেকে প্রত্যেক ব্যক্তি কল্যাণের আশা পোষণ করে এবং কোন ব্যক্তি বা জাতি যাদের থেকে অকল্যাণের আশঙ্কা করে না।
এছাড়া متاع حسن (উত্তম জীবন সামগ্রী) শব্দের মধ্যে আর একটি দিকও রয়েছে। এ দিকটি দৃষ্টির অগোচরে চলে যাওয়া উচিত নয়। কুরআন মজীদের দৃষ্টিতে দুনিয়ার জীবন সামগ্রী দু’প্রকারের। এক প্রকারের জীবন সামগ্রী আল্লাহ বিমুখ লোকদেরকে ফিত্নার মধ্যে নিক্ষেপ করার জন্য দেয়া হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে প্রতারিত হয়ে তারা নিজেদেরকে দুনিয়া পূজা ও আল্লাহ বিস্মৃতির মধ্যে আরো বেশী করে হারিয়ে যায়। আপাতদৃষ্টিতে এটি নিয়ামত ঠিকই কিন্তু গভীরভাবে নিরীক্ষণ করলে দেখা যাবে এটি আল্লাহর লানত ও আযাবের পটভূমিই রচনা করে। কুরআন মজীদ (আরবী) তথা প্রতারণার সামগ্রী নামেও একে স্মরণ করে। দ্বিতীয় প্রকারের জীবন সামগ্রী মানুষকে আরো বেশী সচ্ছল, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করে তাকে তার আল্লাহর আরো বেশী কৃতজ্ঞ বান্দায় পরিণত করে। এভাবে সে আল্লাহর, তাঁর বান্দাদের এবং নিজের অধিকার আরো বেশী করে আদায় করতে সক্ষম হয়। আল্লাহর দেয়া উপকরণাদির সাহায্যে শক্তি সঞ্চয় করে সে দুনিয়ায় ভালো, ন্যায় ও কল্যাণের উন্নয়ন এবং মন্দ, বিপর্যয় ও অকল্যাণের পথ রোধ করার জন্য এর বেশী প্রভাবশালী ও কার্যকর প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। এ হচ্ছে কুরআনের ভাষায় উত্তম জীবন সামগ্রী। অর্থাৎ এমন উন্নত পর্যায়ের জীবন সামগ্রী যা নিছক দুনিয়ার আয়েশ-আরামের মধ্যেই খতম হয়ে যায় না বরং পরিণামে আখেরাতেরও শান্তির উপকরণে পরিণত হয়।
“আরবী ঘোড়ার পিঠে জরাজীর্ণ জিন
আর গাধার গলায় ঝোলে সোনার শৃংখল।”
যে ব্যক্তিই নিজের চরিত্র ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে যেরূপ মর্যাদার অধিকারী প্রমাণ করবে তাকে আল্লাহ সে মর্যাদা অবশ্যই দেবেন।