قَالَ يَـٰقَوْمِ أَرَءَيْتُمْ إِن كُنتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٍۢ مِّن رَّبِّى وَرَزَقَنِى مِنْهُ رِزْقًا حَسَنًۭا ۚ وَمَآ أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَىٰ مَآ أَنْهَىٰكُمْ عَنْهُ ۚ إِنْ أُرِيدُ إِلَّا ٱلْإِصْلَـٰحَ مَا ٱسْتَطَعْتُ ۚ وَمَا تَوْفِيقِىٓ إِلَّا بِٱللَّهِ ۚ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ
শো’আয়েব বললোঃ “ভাইয়েরা! তোমরা নিজেরাই ভেবে দেখো, যদি আমি আমার রবের পক্ষ থেকে একটি সুস্পষ্ট সাক্ষ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে থাকি, তারপর তিনি আমাকে উত্তম রিযিক দান করেন ৯৮ (তাহলে এরপর আমি তোমাদের গোমরাহী ও হারামখোরীর কাজে তোমাদের সাথে কেমন করে শরীক হতে পারি?) আর যেসব বিষয় থেকে আমি তোমাদের বিরত রাখতে চাই আমি নিজে কখনো সেগুলোতে লিপ্ত হতে চাই না। ৯৯ আমি তো আমার সাধ্য অনুযায়ী সংশোধন করতে চাই। যা কিছু আমি করতে চাই তা সবই আল্লাহর তাওফীকের ওপর নির্ভর করে। তাঁরই ওপর আমি ভরসা করেছি এবং সব ব্যাপারে তাঁরই দিকে রুজু করি।
৯৮
রিজিক শব্দটি এখানে দ্বিবিধ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর একটি অর্থ হচ্ছে, সত্য-সঠিক জ্ঞান, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে, আর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে এ শব্দটি থেকে সাধারণত যে অর্থ বুঝা যায় সেটি অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে জীবন যাপন করার জন্য যে জীবন সামগ্রী দান করে থাকেন। প্রথম অর্থটির প্রেক্ষিতে এ আয়াত থেকে এমন একটি বিষয়বস্তুর প্রকাশ ঘটে, যা এ সূরায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, নূহ (আ) ও সালেহ আলাইহিস সালামের মুখ থেকে প্রকাশ হয়ে এসেছে। অর্থাৎ নবুওয়াতের আগেও আমি নিজের রবের পক্ষ থেকে সত্যের স্বপক্ষে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য নিজের মনের মধ্যে ও বিশ্ব-জগতের সমস্ত নিদর্শনের মধ্যে পাচ্ছিলাম এবং এরপর আমার রব আমাকে সরাসরিভাবেও সত্য-জ্ঞান দান করেছেন। এখন তোমরা যেসব গোমরাহী ও নৈতিকতা বিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছো তাতে আমার পক্ষে জেনে বুঝে লিপ্ত হওয়া কেমন করে সম্ভবপর হতে পারে? আর দ্বিতীয় অর্থের প্রেক্ষিতে হযরত শো’আয়েবকে তারা ভর্ৎসনা করেছিল এ আয়াতটিকে তার জওয়াব বলা যায়। হযরত শো’আয়বকে তারা ভর্ৎসনা করে বলেছিলঃ “ব্যস শুধু তুমিই রয়ে গেছো একজন উদারমনা ও সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তি। এ কড়া ও তিক্ত আক্রমণের জবাব এভাবে দেয়া হয়েছেঃ “ভাইয়েরা! যদি আমার রব সত্যকে চিনবার মতো অন্তরদৃষ্টি এবং হালাল রিযিক আমাকে দিয়ে থাকেন তাহলে তোমাদের নিন্দাবাদের কারণে এ অনুগ্রহ কি করে বিগ্রহে পরিণত হবে? আল্লাহ যখন আমর প্রতি মেহেরবানী করেছেন তখন তোমাদের ভ্রষ্টতা ও হারাম খাওয়াকে আমি সত্য ও হালাল গণ্য করে তাঁর প্রতি অকৃতজ্ঞ হই কেমন করে?
৯৯
অর্থাৎ একথা থেকেই তোমরা আমার সত্যতা আন্দাজ করে নিতে পারো যে, অন্যদের আমি যা কিছু বলি আমি নিজেও তা করি। যদি আমি তোমাদের আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহর পূজা বেদীতে যেতে নিষেধ করতাম এবং নিজে কোন বেদীর সেবক হয়ে বসতাম তাহলে নিঃসন্দেহে তোমরা বলতে পারতে, নিজের পীরগিরির ব্যবসায়ের প্রসারের জন্য অন্য দোকানগুলোর সুনাম নষ্ট করতে চাচ্ছি। যদি আমি তোমাদের হারাম জিনিস খেতে নিষেধ করতাম এবং নিজের কারবারে বেঈমানী করতে থাকতাম তাহলে তোমরা অবশ্যই এ সন্দেহ পোষণ করতে পারতে যে, আমি নিজের সুনাম প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ঈমানদারীর ঢাক পিটাচ্ছি। কিন্তু তোমরা দেখছো, যেসব অসৎকাজ থেকে আমি তোমাদের নিষেধ করছি, আমি নিজেও সেগুলো থেকে দূরে থাকছি। যেসব কলঙ্ক থেকে আমি তোমাদের মুক্ত দেখতে চাচ্ছি আমার নিজের জীবনও তা থেকে মুক্ত। তোমাদের আমি যে পথের দিকে আহবান জানাচ্ছি আমার নিজের জন্যও আমি সেই পথটিই পছন্দ করেছি। এসব জিনিস একথা প্রমাণ করে যে, আমি যে দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছি সে ব্যাপারে আমি সত্যবাদী ও একনিষ্ঠ।