إِنَّآ أَنزَلْنَـٰهُ قُرْءَٰنًا عَرَبِيًّۭا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
আমি একে আরবী ভাষায় কুরআন বানিয়ে নাযিল করেছি, ১ যাতে তোমরা (আরববাসীরা) একে ভালোভাবে বুঝতে পারো। ২
১
قٌرأَنٌ হচ্ছে قَراءٌ ক্রিয়াপদের শব্দমূল। এর আসল মানে হচ্ছে ‘পড়া’, শব্দমূলকে যখন কোন জিনিসের জন্য নাম হিসেবে ব্যবহার করা হয় তখন তার অর্থ হয় সংশ্লিষ্ট জিনিসটির মধ্যে তার শব্দমূলের অর্থ পুরোপুরি পাওয়া যায়। যেমন যখন কোন ব্যক্তিকে বীর বলার পরিবর্তে ‘বীরত্ব’ বলা হবে যখন তার মানে হবে, তার মধ্যে সাহসিকতা ও বীর্যবত্তা এমন পূর্ণাঙ্গ পর্যায়ে পাওয়া যায় যেন সে এবং বীরত্ব একই জিনিস হয়ে গেছে। কাজেই এ কিতাবের নাম ‘কুরআন’ (পড়া) রাখার অর্থ হচ্ছে এই যে, এ কিতাব সাধারণ ও অসাধারণ নির্বিশেষে সকলের পড়ার জন্য এবং খুব বেশী বেশী করে পঠিত হবার জিনিস।
২
এর মানে এ নয় যে, এ কিতাবটি বিশেষভাবে আরববাসীদের জন্য নাযিল করা হয়েছে। বরং এ বাক্যাংশটির আসল বক্তব্য হচ্ছে, “হে আরববাসীরা! এসব কথা তোমাদের ইরানী ও গ্রীক ভাষায় শুনানো হচ্ছে না, তোমাদের নিজেদেরই ভাষায় শুনানো হচ্ছে। কাজেই তোমরা এ ওজর পেশ করতে পারো না যে, এসব কথা তো আমরা বুঝতে পারছি না। আর এ কিতাবে অলৌকিকতার যে দিকগুলো রয়েছে, যা এর আল্লাহর বাণী হওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছে, সেগুলোও যে তোমাদের দৃষ্টির অগোচরে থেকে যাবে, এটাও সম্ভব নয়।”
কেউ কেউ কুরআন মজীদে এ ধরনের বাক্য দেখে আপত্তি করে থাকেন যে, এ কিতাব তো আরববাসীদের জন্য নাযিল হয়েছে, অনারবদের জন্য নয়। এক্ষেত্রে একে সমগ্র মানবজাতির জন্য হেদায়াত কেমন করে বলা যেতে পারে? কিন্তু এটি নিছক একটি হালকা ও ফাঁকা আপত্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। আসল সত্য উপলব্ধি করার চেষ্টা না করেই এ আপত্তি উত্থাপন করা হয়। মানবজাতির ব্যাপক ও সার্বজনীন হেদায়াতের জন্য যে জিনিসই পেশ করা হবে তা অবশ্যই মানব সমাজে প্রচলিত ভাষাগুলোর যে কোন একটিতেই পেশ করা হবে। এ হেদায়াত পেশকারী এটিকে যে জাতির ভাষায় পেশ করছেন প্রথমে তাকে এর শিক্ষাবলী দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন। তারপর এ জাতিই অন্যান্য জাতির কাছে এর শিক্ষা পৌঁছাবার মাধ্যমে পরিণত হবে। কোন দাওয়াত ও আন্দোলনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য এটিই একটি বাস্তব ও স্বাভাবিক পদ্ধতি।