قَالُوا۟ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلْعَزِيزُ إِنَّ لَهُۥٓ أَبًۭا شَيْخًۭا كَبِيرًۭا فَخُذْ أَحَدَنَا مَكَانَهُۥٓ ۖ إِنَّا نَرَىٰكَ مِنَ ٱلْمُحْسِنِينَ
তারা বললো, “হে ক্ষমতাসীন সরদার (আযীয)! ৬২ এর বাপ অত্যন্ত বৃদ্ধ, এর জায়গায় আপনি আমাদের কাউকে রেখে দিন। আমরা আপনাকে বড়ই সদাচারী ব্যক্তি হিসেবে পেয়েছি।”
৬২
এখানে “আযীয” শব্দটি হযরত ইউসুফের জন্য ব্যবহার করার কারণে তাফসীরকারগণ ধারণা করে নিয়েছেন যে, যুলায়খার স্বামী ইতিপূর্বে যে পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন হযরত ইউসুফ সেই পদেই অধিষ্ঠিত হন। এরপর আরো ধারণা করা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী আযীয মারা গিয়েছিল এবং হযরত ইউসুফ তার স্থলাভিষিক্ত হন। যুলায়খাকে নতুন করে অলৌকিকভাবে যুবতী বানিয়ে দেয়া হয় এবং মিসরের বাদশাহ হযরত ইউসুফের সাথে তার বিয়ে দেন। এমন কি বাসর রাতে হযরত ইউসুফের সাথে যুলায়খার যে কথাবার্তা হয় তাও পর্যন্ত আমাদের একশ্রেণীর তাফসীরকারগণের কাছে পৌঁছে যায়। অথচ একথাগুলো সবই কাল্পনিক। “আযীয” শব্দটি সম্পর্কে আমি আগেই একথা বলে এসেছি যে, মিসরে এটি কোন বিশেষ পদবী হিসেবে চিহ্নিত ছিল না বরং ছিক “কর্তৃত্বশালী” অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। সম্ভবত মিসরে বড় বড় লোকদের জন্য এ ধরনের কিছু শব্দ পারিভাষিক অর্থে প্রচলিত ছিল, যেমন আমাদের দেশে “সরকার” শব্দটির প্রচলন দেখা যায়। এরই অনুবাদ কুরআনে “আযীয” শব্দের মাধ্যমে করা হয়েছে। আর যুলায়খার সাথে হযরত ইউসুফের বিয়ের যে গল্প ফাঁদা হয়েছে এর ভিত্তি শুধু এতটুকুই যে, বাইবেল ও তালমূদে পোটিফেরের মেয়ে আস্নাত এর সাথে তার বিয়ের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। ওদিকে যুলায়খার স্বামীর নামও ছিল পোটিফর। এ ঘটনাগুলো ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্ধৃত হতে হতে মুফাস্সিরগণের কাছে পৌঁছে যায়। তারপর গুজব ও জনশ্রুতির বিস্তার লাভের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী। পোটিফের সহজেই পোটিফর হয়ে গেছে। মেয়ে হয়ে গেছে স্ত্রী। আর এ স্ত্রী নিশ্চিতভাবেই হয়ে গেছে যুলায়খা। কাজেই তার সাথে হযরত ইউসুফের বিয়ে দেবার জন্য পোটিফরকে হত্যা করা হয়েছে। এভাবেই “ইউসুফ যুলায়খার” উপাখ্যান পূর্ণতা লাভ করেছে।