একঃ মহাকাশের জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর সাথে পৃথিবীর সম্পর্ক, পৃথিবীর সাথে সূর্য ও চন্দ্রের সম্পর্ক, পৃথিবীর অসংখ্য সৃষ্টির প্রয়োজনের সাথে পাহাড়-পর্বত ও নদী-সাগরের সম্পর্ক-এসব জিনিস এ মর্মে সুস্পষ্টভাবে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, কোন পৃথক এক স্রষ্টা এদেরকে সৃষ্টি করেনি এবং বিভিন্ন স্বাধীন ক্ষমতাসম্পন্ন সত্তা এদেরকে পরিচালনা করছে না। যদি এমনটি হতো তাহলে এসব জিনিসের মধ্যে এত বেশি পারস্পরিক সম্পর্ক সামঞ্জস্য ও একাত্মতা সৃষ্টি হতো না এবং তা স্থায়ী ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকতেও পারতো না। পৃথক পৃথক স্রষ্ঠার জন্য এটা কেমন করে সম্ভবপর ছিল যে, তারা সবাই মিলে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের সৃষ্টি ও পরিচালনার জন্য এমন পরিকল্পনা তৈরী করতেন, যার প্রত্যেকটি জিনিস পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত একটার সাথে আর একটা মিলে যেতে থাকতো এবং কখনো তাদের স্বার্থের মধ্যে কোন প্রকার সংঘাত হতো না?
দুইঃ পৃথিবীর এ বিশাল গ্রহটির মহাশূন্যে ঝুলে থাকা, এর উপরিভাগে এত বড় বড় পাহাড় জেগে ওঠা, এর বুকের ওপর এ বিশালকায় নদী ও সাগর গুলো প্রবাহিত হওয়া, এর মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের অসংখ্য বৃক্ষরাজির ফলে ফুলে সুশোভিত হওয়া এবং অত্যন্ত নিয়ম-শৃংখলাবদ্ধভাবে অনবরত রাত ও দিনের নিদর্শনের বিস্ময়করভাবে আবর্তিত হওয়া এসব জিনিস যে আল্লাহ এদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর শক্তিমত্তার সাক্ষ্য দিচ্ছে। এহেন অসীম শক্তিধর মহান সত্তাকে মানুষের মৃত্যুর পর পুনর্বার তাকে জীবন দান করতে অক্ষম মনে করা বুদ্ধি ও বিচক্ষনতার নয়, নিরেট নির্বুদ্ধিতার প্রমাণ।
তিনঃ পৃথিবীর ভৌগোলিক রূপকাঠামো, তার ওপর পর্বতমালা সৃষ্টি, পাহাড় থেকে নদী ও ঝরণাধারা প্রবাহিত হবার ব্যবস্থা, সকল প্রকার ফলের মধ্যে দু'ধরণের ফল সৃষ্টি এবং রাতের পরে দিন ও দিনের পরে রাতকে নিয়মিতভাবে আনার মধ্যে যে সীমাহীন প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে তা সরবে সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে যে, যে আল্লাহ সৃষ্টির এ নকশা তৈরী করেছেন তিনি একজন পূর্ণ জ্ঞানী। এ সমস্ত জিনিসই এ সংবাদ পরিবেশন করে যে, এগুলো কোন সংকল্পবিহীন শক্তির কার্যক্রম এবং কোন উদ্দেশ্য বিহীন খেলোয়াড়ের খেলনা নয়। এর প্রত্যেকটি জিনিসের মধ্যে একজন জ্ঞানীর জ্ঞান এবং চূড়ান্ত পর্যায়ের পরিপক্ক প্রজ্ঞার সক্রিয়তা দৃষ্টিগোচর হয়। এসব কিছু দেখার পর শুধুমাত্র অজ্ঞ ও মূর্খই এ ধারণা করতে পারে যে, পৃথিবীতে মানুষকে সৃষ্টি করে এবং তাকে এমন সংঘাতমুখর ঘটনাপ্রবাহ সৃষ্টির সুযোগ দিয়ে তিনি তাকে কোন প্রকার হিসেব নিকেশ ছাড়া এমনিই মাটিতে মিশিয়ে দেবেন।