إِلَّا مَنِ ٱسْتَرَقَ ٱلسَّمْعَ فَأَتْبَعَهُۥ شِهَابٌۭ مُّبِينٌۭ
তবে আড়ি পেতে বা চুরি করে কিছু শুনতে পারে। ১১ আর যখন সে চুরি করে শোনার চেষ্টা করে তখন একটি জ্বলন্ত অগ্নিশিখা তাকে ধাওয়া করে। ১২
১১
অর্থাৎ যেসব শয়তান তাদের বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষকদেরকে গায়েবের খবর এনে দেবার চেষ্টা করে থাকে, যাদের সাহায্যে অনেক জ্যোতিষী, গণক ও ফকির--- বেশী বহুরূপী অদৃশ্য জ্ঞানের ভড়ং দেখিয়ে থাকে, গায়েবের খবর জানার কোন একটি উপায়-উপকরণও আসলে তাদের আয়ত্বে নেই। তারা চুরি-চামারি করে কিছু শুনে নেবার চেষ্টা অবশ্যি করে থাকে। কারণ তাদের গঠনাকৃতি মানুষের তুলনায় ফেরেশতাদের কিছুটা কাছাকাছি কিন্তু আসলে তাদের কপালে শিকে ছেঁড়ে না।
১২
شِهَابٌ مُبِينٌ এর আভিধানিক অর্থ উজ্জ্বল আগুনের শিখা। কুরআনের অন্য জায়গায় এজন্য
شِهَابٌ ثَاقِبٌ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, অন্ধকার বিদীর্ণকারী অগ্নি-স্ফুলিংগ। এর মানে যে, আকাশ থেকে নিক্ষিপ্ত জ্বলন্ত নক্ষত্র হতে হবে, যাকে আমাদের পরিভাষায় “উল্কাপিণ্ড” বলা হয়, তেমন কোন কথা নেই। এটা হয়তো অন্য কোন ধরনের রশ্মি হতে পারে। যেমন মহাজাগতিক রশ্মি (Cosmic Rays) অথবা এর চেয়েও তীব্র ধরনের অন্য কিছু, যা এখনো আমাদের জ্ঞানের আওতার বাইরে রয়ে গেছে। আবার এ উল্কাপিণ্ডও হতে পারে, যাকে আমরা মাঝে মধ্যে আকাশ থেকে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসতে দেখি। বর্তমানকালের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা যায়, দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর দিকে যেসব উল্কা ছুটে আসতে দেখা যায় তার সংখ্যা হবে প্রতিদিন এক লক্ষ কোটি। এর মধ্যে থেকে প্রায় ২ কোটি প্রতিদিন পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ এলাকার মধ্যে প্রবেশ করে পৃথিবীর দিকে ধাবিত হয়। তার মধ্য থেকে কোন রকমে একটা ভু-পৃষ্ঠে পৌঁছে। মহাশূন্যে এদের গতি হয় কমবেশী প্রতি সেকেণ্ডে ২৬ মাইল এবং কখনো তা প্রতি সেকেণ্ডে ৫০ মাইলেও পৌঁছে যায়। অনেক সময় খালি চোখেও অস্বাভাবিক উল্কা বৃষ্টি দেখা যায়। পুরাতন রেকর্ড থেকে জানা যায়, ১৮৩৩ খৃস্টাব্দের ১৩ নভেম্বর উত্তর আমেরিকার পূর্ব এলাকায় শুধুমাত্র একটি স্থানে মধ্য রাত্র থেকে প্রভাত পর্যন্ত ২ লক্ষ উল্কাপিণ্ড নিক্ষিপ্ত হতে দেখা গিয়েছিল। (ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ১৯৪৬, ১৫ খণ্ড, ৩৩৭-৩৯ পৃঃ) হয়তো এই উল্কা বৃষ্টিই উর্ধ্বজগতের দিকে শয়তানদের উড্ডয়নের পথে বাধার সৃষ্টি করে। কারণ পৃথিবীর উর্ধ্ব সীমানা পার হয়ে মহাশূন্যে প্রতিদিন এক লক্ষ কোটি উল্কাপাত তাদের জন্য মহাশূন্যের ঐ এলাকাকে সম্পূর্ণরূপে অনতিক্রম্য বানিয়ে দিয়ে থাকবে।
এখানে উপরে যে সংরক্ষিত দূর্গগুলোর কথা বলা হয়েছে সেগুলোর ধরন সম্পর্কে কিছুটা অনুমান করা যেতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে মহাশূন্য একেবারে পরিষ্কার। এর মধ্যে কোথাও কোন দেয়াল বা ছাদ দেখা যায় না। কিন্তু আল্লাহ এ মহাশূন্যের বিভিন্ন অংশকে এমন কিছু অদৃশ্য দেয়াল দিয়ে ঘিরে রেখেছেন যা এক অংশের বিপদ ও ক্ষতিকর প্রভাব থেকে অন্য অংশকে সংরক্ষিত করে রাখে। এ দেয়ালগুলোর বদৌলতেই প্রতিদিন গড়ে যে এক লক্ষ কোটি উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে তা সব পথেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং মাত্র একটি এসে পৃথিবী পৃষ্ঠে পড়তে সক্ষম হয়। পৃথিবীতে উল্কা পিণ্ডের যেসব নমুনা দুনিয়ার বিভিন্ন যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড়টির ওজন ৬৪৫ পাউণ্ড। এ পাথরটি ওপর থেকে পড়ে মাটির মধ্যে ১১ ফুট গভীরে প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল। এছাড়াও এক জায়গায় ৩৬.৫ টনের একটি লোহার স্তূপ পাওয়া গেছে। বৈজ্ঞানিকদের মতে আকাশ থেকে এ লোহা নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এছাড়া সেখানে এর স্তূপাকার অস্তিত্বের কোন কারণই তারা খুঁজে পাননি। চিন্তা করুন, পৃথিবীর উর্ধ্ব সীমানাকে যদি মজবুত দেয়ালের মাধ্যমে সংরক্ষিত না করা হতো তাহলে এসব উল্কাপাতে পৃথিবীর কী অবস্থা হতো! এ দেয়ালগুলোকেই কুরআনে বুরুজ (সংরক্ষিত দূর্গ) বলা হয়েছে।