وَلَقَدْ ءَاتَيْنَـٰكَ سَبْعًۭا مِّنَ ٱلْمَثَانِى وَٱلْقُرْءَانَ ٱلْعَظِيمَ
আমি তোমাকে এমন সাতটি আয়াত দিয়ে রেখেছি, যা বারবার আবৃত্তি করার মতো ৪৯ এবং তোমাকে দান করেছি মহান কুরআন। ৫০
৪৯
অর্থাৎ সূরা ফাতিহার সাতটি আয়াত। যদিও কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন দু’ দু’শো আয়াত বিশিষ্ট সাতটি বড় বড় সূরা। অর্থাৎ আল বাকারাহ, আলে ইমরান, আন নিসা, আল মায়েদাহ, আল আন’আম, আল আ’রাফ ও ইউনূস অথবা আল আনফাল ও আত্ তাওবাহ। কিন্তু পূর্ববর্তী আলেমগণের অধিকাংশই এ ব্যাপারে একমত যে, এখানে সূরা ফাতিহার কথাই বলা হয়েছে। বরং খোদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাতটি বারবার আবৃত্তি করার মত সূরা বলে যে সূরা ফাতিহার দিকে ইঙ্গিত করেছেন এর প্রমাণ স্বরূপ ইমাম বুখারী দু’টি “মরফূ” হাদীসও বর্ণনা করেছেন।
৫০
একথাটিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাথীদেরকে সান্তনা দেবার জন্য বলা হয়েছে। তখন এমন একটা সময় ছিল যখন নবী ﷺ এবং তাঁর সাথীরা সবাই চরম দুরাবস্থার মধ্যে জীবন যাপন করছিলেন। নবুওয়াতের গুরু দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেবার সাথে সাথেই নবী করীমের (সা.) ব্যবসায় প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওদিকে দশ বারো বছরের মধ্যে হযরত খাদিজার (রা) সব সম্পদও খরচ হয়ে গিয়েছিল। মুসলমানদের মধ্যে কিছু উঠতি যুবক ছিলেন। তাদেরকে অভিভাবকরা ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল। কতক ছিলেন ব্যবসায়ী ও কারিগর। অনবরত অর্থনৈতিক বয়কটের আঘাতে তাদের কাজ কারবার একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর কতক দুর্ভাগ্য পীড়িত আগেই ছিলেন দাস বা মুক্ত দাস শ্রেণীভুক্ত। তাদের কোন অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডই ছিল না। এরপর দুর্ভাগ্যের ওপর দুর্ভাগ্য হচ্ছে এই যে, নবী (সা.) সহ সমস্ত মুসলমান মক্কা ও তার চারপাশের পল্লীগুলোতে চরম নির্যাতিতের জীবন যাপন করছিলেন। তারা ছিলেন সবদিক থেকে নিন্দিত ও ধিকৃত। সব জায়গায় তাঁরা লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও হাসি-তামাশার খোরাক হয়েছিলেন। এই সঙ্গে মানসিক ও আত্মিক মর্মজ্বালার সাথে সাথে তারা দৈহিক নিপীড়নের হাত থেকেও রেহাই পাননি। অন্যদিকে কুরাইশ সরদাররা পার্থিব অর্থ-সম্পদের ক্ষেত্রে সব রকমের সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্যের অধিকারী ছিল। এ অবস্থায় বলা হচ্ছে, তোমার মন হতাশাগ্রস্ত কেন? তোমাকে আমি এমন সম্পদ দান করেছি যার তুলনায় দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ তুচ্ছ। তোমার এ জ্ঞানগত ও নৈতিক সম্পদ ঈর্ষার যোগ্য ওদের বস্তুগত সম্পদ নয়। ওরা তো নানান হারাম উপায়ে এ সম্পদ আহরণ করছে এবং নানাবিধ হারাম পথে এ উপার্জিত সম্পদ নষ্ট করছে। শেষ পর্যন্ত ওরা একদম কপর্দক শূন্য ও কাংগাল হয়ে নিজেদের রবের সামনে হাজির হবে।