ٱنظُرْ كَيْفَ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ ۚ وَلَلْـَٔاخِرَةُ أَكْبَرُ دَرَجَـٰتٍۢ وَأَكْبَرُ تَفْضِيلًۭا
কিন্তু দেখো, দুনিয়াতেই আমি একটি দলকে অন্য একটির ওপর কেমন শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে রেখেছি এবং আখেরাতে তার মর্যাদা আরো অনেক বেশী হবে এবং তার শ্রেষ্ঠত্বও আরো অধিক হবে। ২৩
২৩
অর্থাৎ আখেরাত প্রত্যাশীরা যে দুনিয়া পূজারীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী দুনিয়াতেই এ পার্থক্যটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। এ পার্থক্য এ দৃষ্টিতে নয় যে, এদের খাবার-দাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, গাড়ি-বাড়ি ও সভ্যতা-সংস্কৃতির ঠাটবাট ও জৌলুস ওদের চেয়ে বেশী। বরং পার্থক্যটা এখানে যে, এরা যা কিছু পায় সততা, বিশ্বস্ততা ও ঈমানদারীর সাথে পায় আর ওরা যা কিছু লাভ করে জুলুম, নিপীড়ন, ধোঁকা, বেঈমানী এবং নানান হারাম পথ অবলম্বনের কারণে লাভ করে। তার ওপর আবার এরা যা কিছু পায় ভারসাম্যের সাথে খরচ হয়। এ থেকে হকদারদের হক আদায় হয়। এ থেকে বঞ্চিত ও প্রার্থীদের অংশও দেয়া হয়। আবার এ থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে অন্যান্য সৎকাজেও অর্থ ব্যয় করা হয়। পক্ষান্তরে দুনিয়া পূজারীরা যা কিছু পায় তা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বিলাসিতা, বিভিন্ন হারাম এবং নানান ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজে দু’হাতে ব্যয় করা হয়ে থাকে। এভাবে সব দিক দিয়েই আখেরাত প্রত্যাশীদের জীবন আল্লাহভীতি ও পরিচ্ছন্ন নৈতিকতার এমন আদর্শ হয়ে থাকে যা তালি দেয়া কাপড়ে এবং ঘাস ও খড়ের তৈরী কুঁড়ে ঘরেও এমনই ঔজ্জ্বল্য বিকীরণ করে, যার ফলে এর মোকাবিলায় প্রত্যেক চক্ষুষ্মানের দৃষ্টিতে দুনিয়া পূজারীদের জীবন অন্ধকার মনে হয়। এ কারণেই বড় বড় পরাক্রমশালী বাদশাহ ও ধনাঢ্য আমীরদের জন্যও তাদের সমগোত্রীয় জনগণের হৃদয়ে কখনো নিখাদ ও সাচ্চা মর্যাদাবোধ এবং ভালোবাসা ও ভক্তির ভাব জাগেনি। অথচ এর বিপরীতে অভুক্ত, অনাহরী ছিন্ন বস্ত্র ধারী, খেজুর পাতার তৈরী কুঁড়ে ঘরের অধিবাসী আল্লাহ ভীরু মর্দে দরবেশের শ্রেষ্টত্ব মেনে নিতে দুনিয়া পূজারীরা নিজেরাই বাধ্য হয়েছে। আখেরাতের চিরস্থায়ী সাফল্য এ দু’দলের মধ্যে কার ভাগে আসবে এ সুস্পষ্ট আলামতগুলো সেই সত্যটির প্রতি পরিষ্কার ইঙ্গিত করছে।