প্রথম বিপর্যয় সম্পর্কে সর্বপ্রথম সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেন হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম। তাঁর কথা ছিল নিম্নরূপঃ
“তাহারা জাতিগুলিকে ধ্বংস করিল না, যাহা সদাপ্রভু করিতে আজ্ঞা করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহারা জাতিগুলির সহিত মিশিয়া গেল, উহাদের কার্যকলাপ শিখিল। আর উহাদের প্রতিমার পূজা করিল, তাহাতে সে সকল তাহাদের ফাঁদ হইয়া উঠিল, ফলে তাহারা আপনাদের পুত্রদিগকে আর আপনাদের কন্যাদিগকে শয়তানদের উদ্দেশ্যে বলিদান করিল। তাহারা নির্দোষদের রক্তপাত, তথা স্ব স্ব পুত্র কন্যাদেরই রক্তপাত করিল, কেনানীয় প্রতিমাগণের উদ্দেশ্যে তাহাদিগকে বলিদান করিল; দেশ রক্তে অশুদ্ধ হইল। এই রূপে তাহারা আপনাদের কার্যে অশুচি, আপনাদের ক্রিয়ায় ব্যভিচারী হইল। তাহাতে আপন প্রজাদের উপরে সদাপ্রভূর ক্রোধ জ্বলিয়া উঠিল, তিনি আপন অধিকারকে ঘৃণা করিলেন। তিনি তাহাদিগকে জাতিগণের হস্তে সমর্পণ করিলেন, তাহাতে তাহাদের শত্রুরা তাহাদের শাসক হইয়া গেল।” [গীতসংহিতা ১০৬: ৩৪-৪১ ]
যেসব ঘটনা পরে ঘটতে যাচ্ছিল এ বাক্যগুলোয় সেগুলোকে অতীত কালের ক্রিয়াপদে বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ সেগুলো যেন ঘটে গেছে। এটি হচ্ছে আসমানী কিতাবের একটি বিশেষ বর্ণনারীতি।
তারপর যখন এ বিরাট বিপর্যয় সংঘটিত হয়ে গেল তখন এর ফলে যে ধ্বংস সংঘটিত হলো হযরত ইয়াসঈয়াহ নবী নিজের সহীফায় তার খবর এভাবে দিচ্ছেনঃ
“আহা, পাপিষ্ঠ জাতি, অপরাধে ভারগ্রস্ত লোক, দুষ্কর্মকারীদের বংশ, নষ্টাচারী সন্তানগণ; তাহারা সদাপ্রভূকে ত্যাগ করিয়াছে, ইসরাঈলের পবিত্রাত্মাকে অবজ্ঞা করিয়াছে, বিপথে গিয়াছে, পরান্মুখ হইয়াছে। তোমরা আর কেন প্রহৃত হইবে? হইলে অধিক বিদ্রোহাচরণ করিবে।” [ যিশইয় ১: ৪-৫ ]
“সতী নগরী কেমন বেশ্যা হইয়াছে। সে তো ন্যায় বিচারে পূর্ণা ছিল। ধার্মিকরা তাহাতে বাস করিত, কিন্তু এখন হত্যাকরী লোকেরা থাকে ...................... তোমার সরদাররা বিদ্রোহী ও চোরদের সখা; তাহাদের প্রত্যেক জন উৎকোচ ভালবাসে ও পারিতোষিকের অনুধাবন করে; তাহারা পিতৃহীন লোকের প্রতি ইনসাফ করে না এবং বিধবার বিবাদ তাহাদের নিকট আসিতে পায় না। এজন্য প্রভু বাহিনীগণের সদাপ্রভূ ইসরাঈলের এক বীর কহেন, আহা, আমি আপন বিপক্ষদিগকে (দণ্ড দিয়া) শাস্তি পাইব ও আমার শত্রুদের নিকট হইতে প্রতিশোধ নিব।” [যিশাইয় ১: ২১-২৪]
“তাহারা পূর্বদেশের প্রথায় পরিপূর্ণ ও পলেষ্টীয়দের ন্যায় গণক হইয়াছে এবং বিজাতীয় সন্তানদের হস্তে হস্ত দিয়াছে। ....................আর তাহাদের দেশ প্রতিমায় পরিপূর্ণ, তাহারা আপনাদের হস্ত নির্মিত বস্তুর কাছে প্রণিপাত করে, তাহাত তাহাদেরই আংগুলি দ্বারা নির্মিত।” [ যিশাইয় ২: ৬-৮ ]
“সদাপ্রভূ আরো বলিলেন, সিয়োনের কন্যাগণ গর্বিতা, তাহারা গলা বাড়াইয়া কটাক্ষ করিয়া বেড়ায়, লঘুপদ সঞ্চারে চলে ও চরণে রুনু রুনু শব্দ করে। অতএব প্রভু সিয়োনের কন্যাগণের মস্তক টাক পড়া করিবেন, ও সদাপ্রভূ তাহাদের গুহ্যস্থান অনাবৃত করিবেন। ........... তোমার পুরুষেরা খড়গ দ্বারা ও তোমার বিক্রমীগণ সংগ্রামে পতিত হইবে। তাহার পুরদ্বার সকল ক্রন্দন ও বিলাপ করিবে; আর সে উৎসন্না হইয়া ভূমিতে বসিবে।” [যিশাইয় ৩: ১৬-২৬]
“এখন দেখ, প্রভু [ফরাৎ] নদীর প্রবল ও প্রচুর জল, অর্থাৎ অশূর-রাজ ও তাহার সমস্ত প্রতাপকে, তাহাদের উপরে আনিবেন; সে ফাঁপিয়া সমস্ত খাল পূর্ণ করিবে ও সমস্ত তীর ভূমির ওপর দিয়া যাইবে।” [ যিশাইয় ৮: ৭ ]
“কেননা, উহারা বিদ্রোহী জাতি ও মিথ্যাবাদী সন্তান; উহারা সদাপ্রভূর ব্যবস্থা শুনিতে অসম্মত। তাহারা দর্শকদিগকে বলে, তোমরা দর্শন করিও না, নবীগণকে বলে, তোমরা আমাদের কাছে সত্য নবুওয়াত প্রকাশ করিও না, আমাদিগকে স্নিগ্ধ বাক্য বল, মিথ্যা নবুওয়াত প্রকাশ কর, পথ হইতে ফির, রাস্তার ছাড়িয়া দাও, ইসরাঈলের পবিত্রতমকে আমাদের দৃষ্টিপথ হইতে দূর কর। অতএব ইসরাঈলের পবিত্রতম এই কথা কহেন, তোমরা এই বাক্য হেয় জ্ঞান করিয়াছ এবং উপদ্রবের ও কূটিলতার উপর নির্ভর করিয়াছ ও তাহা অবলম্বন করিয়াছ, এইহেতু সেই অপরাধ তোমাদের জন্য উচ্চ ভিত্তির পতনশীল দেয়ালের ন্যায় হইবে। যাহার ভঙ্গ হঠাৎ মুহূর্ত মধ্যে উপস্থিত হয়। আর যেমন কুম্ভকারের পাত্র ভাঙ্গা যায়, তেমনি তিনি তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিবেন, চূর্ণ করিবেন, মমতা করিবেন না; যাহাতে চূলা হইতে অগ্নি তুলিতে কিম্বা কূপ হইতে জল তুলিতে একখানা খোলাও পাওয়া যাইবে না।” [৩০: ৯-১৪ ]
তারপর যখন বন্যায় বাঁধ একেবারেই ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয় তখন ইয়ারমিয়াহ (যিরমিয়) নবীর আওয়াজ বুলন্দ হয় এবং তিনি বলেনঃ
“সদাপ্রভূ এই কথা বলেন, তোমাদের পিতৃপুরুষেরা আমার কি অন্যায় দেখিয়াছে যে, তাহারা আমা হইতে দূরে গিয়াছে, অসারতার অনুগামী হইয়া অসার হইয়াছে? ............ আমি তোমাদিগকে এই ফলবান দেশে আনিয়াছিলাম যেন তোমরা এখানকার ফল ও উত্তম উত্তম সামগ্রী ভোজন কর। কিন্তু তোমরা প্রবেশ করিয়া আমার দেশ অশুচি করিলে, আমার অধিকার ঘৃণাস্পদ করিলে। ................. বস্তুত দীর্ঘকাল হইল আমি তোমার যোয়ালি ভগ্ন করিয়াছিলাম, তোমার বন্ধন ছিন্ন করিয়াছিলাম; আর তুমি বলিয়াছিলে, আমি দাসত্ব করিব না; বাস্তবিক সমস্ত উচ্চ পর্বতের উপরে ও সমস্ত হরিৎপূর্ণ বৃক্ষের তলে তুমি নত হইয়া ব্যভিচার করিয়া আসিতেছ। (অর্থাৎ প্রত্যেকটি শক্তির সামনে নত হইয়াছ এবং প্রত্যেকটি মূর্তিকে সিজদা করিয়াছ। ............ চোর ধরা পড়িলে যেমন লজ্জিত হয় তেমনি ইসরাঈলকুল, আপনারা ও তাহাদের রাজাগণ, অধ্যক্ষবর্গ, যাজকগণ ও ভাববাদিগণ লজ্জিত হইয়াছে, বস্তুত তাহারা কাষ্ঠকে বলে, তুমি আমার পিতা, শিলাকে বলে, তুমি আমার জননী, তাহারা আমার প্রতি পৃষ্ঠ ফিরাইয়াছে, মুখ নয়, কিন্তু বিপদকালে তহারা বলিবে, ‘তুমি উঠ, আমাদিগকে রক্ষা কর।’ কিন্তু আপনার জন্য যাহাদিগকে নির্মাণ করিয়াছ, তোমার সেই দেবতারা কোথায়? তাহারাই উঠুক, যদি বিপদকালে তোমাকে রক্ষা করিতে পারে; কেননা হে যিহূদা! তোমার যত নগর তত দেবতা।” [ যিরমিয় ২: ৫-২৮ ]
“যোশিয় রাজার সময়ে সদাপ্রভূ আমাকে কহিলেন, বিপথগামিনী ইসরাঈল যাহা করিয়াছে, তাহা কি তুমি দেখিয়াছ? সে প্রত্যেক উচ্চ পর্বতের উপরে ও প্রত্যেক হরিৎপূর্ণ বৃক্ষের তলে গিয়া সেই সকল স্থানে ব্যভিচার করিয়াছে। সে এই সকল কর্ম করিলে পরে আমি কহিলাম, সে আমার কাছে ফিরিয়া আসিবে কিন্তু সে ফিরিয়া আসিল না এবং তাহার বিশ্বাসঘাতিনী ভগিনী যিহূদা তাহা দেখিল। আর আমি দেখিলাম, বিপথগামিনী ইসরাঈল ব্যভিচার (অর্থাৎ শিরক) করিয়াছিল, এই কারণ প্রযুক্তই যদ্যপি আমি তাহাকে ত্যাগপত্র দিয়া ত্যাগ করিয়াছিলাম, তথাপি তাহার ভগিনী বিশ্বাসঘাতিনী যিহূদা ভয় করিল না, কিন্তু আপনিও গিয়া ব্যভিচার করিল। তাহার ব্যভিচারের নির্লজ্জতায় দেশ অশুচি হইয়াছিল; সে প্রস্তর ও কাষ্ঠের সহিত ব্যভিচার (অর্থাৎ মূর্তিপূজা) করিত।” [যিরমিয় ৩: ৬-৯ ]
“তোমরা জেরুশালেমের সড়কে সড়কে দৌড়াদৌড়ি কর, দেখ, জ্ঞাত হও এবং তথাকার সকল চকে অন্বেষণ কর, যদি এমন একজনকেও পাইতে পার, যে ন্যায়াচরণ করে, সত্যের অনুশীলন করে, তবে আমি নগরকে ক্ষমা করিব। ......... আমি কিরূপে তোমাকে ক্ষমা করিব? তোমার সন্তানগণ আমাকে ত্যাগ করিয়াছে, অনীশ্বরদের নাম লইয়া শপথ করিয়াছে; আমি তাহাদিগকে পরিতৃপ্ত করিলে তাহারা ব্যভিচার করিল ও দলে দলে বেশ্যার বাটিতে গিয়া একত্র হইল। তাহারা খাদ্যপুষ্ট অশ্বের ন্যায় ঘুরিয়া বেড়াইল, প্রত্যেকজন পরস্ত্রীর প্রতি হ্রেষা করিল। আমি এই সকলের প্রতিফল দিব না, ইহা সদাপ্রভূ কহেন, আমর প্রাণ কি এই প্রকার জাতির প্রতিশোধ দিবে না?” [যিরমিয় ৫: ১-৯]
“হে ইসরাঈল কুল, দেখ, আমি তোমাদের বিরুদ্ধে দূর হইতে এক জাতিকে আনিব; সে বলবান জাতি, সে প্রাচীন জাতি; তুমি সেই জাতির ভাষা জান না, তাহারা কি বলে তাহা বুঝিতে পার না। তাহাদের তূন খোলা কবরের ন্যায়, তাহারা সকলে বীর পুরুষ। তাহারা তোমার পক্ক শস্য ও তোমার অন্ন, তোমার পুত্রকন্যাগণের খাদ্য গ্রাস করিবে; তাহারা তোমার মেষপাল ও গোপাল গ্রাস করিবে, তোমার দ্রাক্ষালতা ও ডুমুরবৃক্ষ গ্রাস করিবে, তুমি যেসব প্রাচীরবেষ্টিত নগরে বিশ্বাস করিতেছ, সে সকল তাহারা খড়গ দ্বারা চুরমার করিবে।” [যিরমিয় ৫: ১৫-১৭]
“এই জাতির শব আকাশের পক্ষীসমূহের ও ভূমির পশুগণের ভক্ষ্য হইবে, কেহ তাহাদিগকে খেদাইয়া দিবে না। তখন আমি যিহূদার সকল নগরে ও জেরুশালেমের সকল পথে আমাদের রব ও আনন্দের রব, বরের রব ও কন্যার রব নিবৃত্ত করিব; কেননা দেশ ধ্বংসস্থান হইয়া পড়িবে।” [ যিরমিয় ৭: ৩৩-৩৪ ]
“তুমি আমার সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে বিদায় কর, তাহারা চালিয়া যাউক। আর যদি তাহারা তোমাকে বলে কোথায় চলিয়া যাইবে? তবে তাহাদিগকে বলিও, সদাপ্রভূ এইকথা কহেন, মৃত্যুর পাত্র মৃত্যুর স্থানে, খড়গের পাত্র খড়গের স্থানে, দুর্ভিক্ষের পাত্র দুর্ভিক্ষের স্থানে ও বন্দিত্বের পাত্র বন্দিত্বের স্থানে গমন করুক।” [যিরমিয় ১৫: ১-৩]
তারপর যথাসময়ে যিহিষ্কেল নবী উঠেন এবং তিনি জেরুশালেমকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ
“হে নগরী, তুমি নিজের মধ্যে রক্তপাত করিয়া থাকো, যেন তোমার কাল উপস্থিত হয়; তুমি নিজের জন্য পুত্তলিগণকে নির্মাণ করিয়া থাকো, যেন তুমি অশুচি হও। ........ দেখ, ইসরাঈলের অধ্যক্ষগণ, প্রত্যেক আপন আপন ক্ষমতা অনুসারে, তোমার মধ্যে রক্তপাত করিবার জন্য প্রস্তুত ছিল। তোমাদের মধ্যে পিতা মাতাকে তুচ্ছ করা হইয়াছে, তোমার মধ্যে বিদেশীর প্রতি উপদ্রব করা হইয়াছে; তোমার মধ্যে পিতৃহীনের ও বিধবার প্রতি জুলুম করা হইয়াছে। তুমি আমার পবিত্র বস্তুসমূহ অবজ্ঞা করিয়াছ ও আমার বিশ্রামের দিনগুলিকে অপবিত্র করিয়াছ। রক্তপাত করণার্থে তোমার মধ্যে চোগলখোররা আসিয়াছে; তোমার মধ্যে লোক কুকর্ম করিয়াছে; তোমার মধ্যে লোকে পিতার উলঙ্গতা অনাবৃত করিয়াছে; তোমার মধ্যে লোকে ঋতুমতী অশুচি স্ত্রীকে বলাৎকার করিয়াছে; তোমার মধ্যে কেহ আপন প্রতিবেশীর স্ত্রীর সহিত ঘৃণার্হ কাজ করিয়াছে; কেহবা আপন পুত্রবধূকে কুকর্মে অশুচি করিয়াছে; আর কেহ বা তোমার মধ্যে আপনার ভগিনীকে, আপন পিতার কন্যাকে বলাৎকার করিয়াছে। রক্তপাত করণার্থে তোমার মধ্যে লোকে উৎকোচ গ্রহণ করিয়াছে; তুমি সুদও বৃদ্ধি লইয়াছ, উপদ্রপ করিয়া লোভে প্রতিবেশীদের কাছে লাভ করিয়াছ এবং আমাকেই ভুলিয়া গিয়াছ, ইহা প্রভু সদাপ্রভূ বলেন। ....... তোমার হস্ত কি সবল থাকিবে? আমি সদাপ্রভূ ইহা বলিলাম, আর ইহা সিদ্ধ করিব। আমি তোমাকে জাতিগণের মধ্যে ছিন্ন ভিন্ন ও নানা দেশে বিকীর্ণ করিব এবং তোমার মধ্য হইতে তোমার অশুচিতা দূর করিব। তুমি জাতিগণের সাক্ষাতে আপনার দোষে অপবিত্রীকৃত হইবে, তাহাতে তুমি জানিবে যে, আমিই সদাপ্রভূ।” [ যিহিষ্কেল ২২: ৩-১৬ ]
প্রথম মহাবিপর্যয়ের সময় বনী ইসরাঈলকে এই হুশিয়ার বাণীগুলো শুনানো হয়। তারপর দ্বিতীয় মহাবিপর্যয় ও তার ভয়াবহ ফলাফলের সম্মুখীন হবার পর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাদেরকে সতর্ক করেন। মথি ২৩ অধ্যায়ে তাঁর একটি বিস্তারিত ভাষণ লিপিবদ্ধ হয়েছে। তাতে তিনি নিজের জাতির মারাত্মক নৈতিক অধঃপতনের আলোচনা করে বলেনঃ
“হা জেরুশালেম, জেরুশালেম তুমি ভাববাদিগণকে (নবীগণ) বধ করিয়া থাক ও তোমার নিকট যাহারা প্রেরিত হয়, তাহাদিগকে পাথর মারিয়া থাক। কুক্কুটী যেমন আপনা শাবকদিগকে পক্ষের নীচে একত্র করে, তদুরূপ আমিও কতবার তোমার সন্তানদিগকে একত্র করিতে ইচ্ছা করিয়াছি, কিন্তু তোমরা সম্মত হইলে না। দেখ, তোমাদের গৃহ তোমাদের জন্য উৎসন্ন পড়িয়া রহিল।” [ ২৩: ৩৭-৩৮ ]
“আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, এই স্থানের একখানি পাথর অন্য পাথরের উপর থাকিবে না, সমস্ত ভূমিস্মাৎ হইবে।” [ মথি ২৪: ২ ]
তারপর রোমান সরকারের কর্মকর্তারা তাঁকে শূলে চড়াবার (তাদের কথা মতো) জন্য নিয়ে যাচ্ছিল এবং নারীসহ বিপুল সংখ্যক জনতা বিলাপ করতে করতে তাঁর পেছনে পেছনে চলছিল তখন তিনি শেষবার জনতাকে সম্বোধন করে বলেনঃ
“ওগো জেরুশালেমের কন্যাগণ, আমার জন্য কাঁদিওনা বরং আপনাদের ও আপন আপন সন্তান-সন্তুতিদের জন্য কাঁদ। কেননা দেখ, এমন সময় আসিতেছে, যে সময় লোকে বলিবে, ধন্য সেই স্ত্রী লোকেরা, যাহারা বন্ধ্যা, যাহাদের উদর কখনো প্রসব করে নাই, যাহাদের স্তন কখনো দুগ্ধ দেয় নাই। সেই সময় লোকেরা পর্বতগণকে বলিতে আরম্ভ করিবে, আমাদের উপরে পড়; এবং উপপর্বতগণকে বলিবে, আমাদিগকে ঢাকিয়া রাখ।” [লুক ২৩: ২৮-৩০]