মারয়াম

৯৮ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
১১ ) কাজেই সে মিহরাব থেকে বের হয়ে নিজের সম্প্রদায়ের সামনে এলো এবং ইশারায় তাদেরকে সকাল-সাঁঝে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করার নির্দেশ দিল।
فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوْمِهِۦ مِنَ ٱلْمِحْرَابِ فَأَوْحَىٰٓ إِلَيْهِمْ أَن سَبِّحُوا۟ بُكْرَةً وَعَشِيًّا ١١
১২ ) “হে ইয়াহইয়া! আল্লাহর কিতাবকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো।” আমি তাকে শৈশবেই “হুকুম” ১০ দান করেছি
يَٰيَحْيَىٰ خُذِ ٱلْكِتَٰبَ بِقُوَّةٍ وَءَاتَيْنَٰهُ ٱلْحُكْمَ صَبِيًّا ١٢
১৩ ) এবং নিজের পক্ষ থেকে হৃদয়ের কোমলতা ১১ ও পবিত্রতা দান করেছি, আর সে ছিল খুবই আল্লাহভীরু
وَحَنَانًا مِّن لَّدُنَّا وَزَكَوٰةً وَكَانَ تَقِيًّا ١٣
১৪ ) এবং নিজের পিতামাতার অধিকার সচেতন, সে উদ্ধত ও নাফরমান ছিল না।
وَبَرًّۢا بِوَٰلِدَيْهِ وَلَمْ يَكُن جَبَّارًا عَصِيًّا ١٤
১৫ ) শান্তি তার প্রতি যেদিন সে জন্ম লাভ করে এবং যেদিন সে মৃত্যুবরণ করে আর যেদিন তাকে জীবিত করে উঠানো হবে। ১২
وَسَلَٰمٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا ١٥
১৬ ) আর (হে মুহাম্মাদ) ! এই কিতাবে মারয়ামের অবস্থা বর্ণনা করো। ১৩ যখন সে নিজের লোকদের থেকে আলাদা হয়ে পূর্ব দিকে নির্জনবাসী হয়ে গিয়েছিল
وَٱذْكُرْ فِى ٱلْكِتَٰبِ مَرْيَمَ إِذِ ٱنتَبَذَتْ مِنْ أَهْلِهَا مَكَانًا شَرْقِيًّا ١٦
১৭ ) এবং পর্দা টেনে তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিল। ১৪ এ অবস্থায় আমি তার কাছে নিজের রূহকে (অর্থাৎ ফেরেশতাকে) পাঠালাম এবং সে তার সামনে একটি পূর্ণ মানবিক কায়া নিয়ে হাযির হলো।
فَٱتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَآ إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا ١٧
১৮ ) মারয়াম অকস্মাৎ বলে উঠলো, “তুমি যদি আল্লাহকে ভয় করে থাকো তাহলে আমি তোমার হাত থেকে করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি।”
قَالَتْ إِنِّىٓ أَعُوذُ بِٱلرَّحْمَٰنِ مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيًّا ١٨
১৯ ) সে বললো, “আমি তো তোমার রবের দূত এবং আমাকে পাঠানো হয়েছে এ জন্য যে, আমি তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র দান করবো?”
قَالَ إِنَّمَآ أَنَا۠ رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَٰمًا زَكِيًّا ١٩
২০ ) মারয়াম বললো, “আমার পুত্র হবে কেমন করে যখন কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শও করেনি এবং আমি ব্যভিচারিনীও নই?”
قَالَتْ أَنَّىٰ يَكُونُ لِى غُلَٰمٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِى بَشَرٌ وَلَمْ أَكُ بَغِيًّا ٢٠
৭.
মিহরাবের ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আলে ইমরান, ৩৬ টীকা।
৮.
লুক লিখিত সুসমাচারে এই ঘটনার যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে তা আমরা এখানে উদ্ধৃত করেছি। এভাবে পাঠকের সামনে কুরআনের পাশাপাশি খৃষ্টীয় বর্ণনাও রাখা যাবে এবং মাঝে মাঝে বন্ধনীর মধ্যে থাকছে আমাদের বক্তব্যঃ

“যিহূদিয়ার রাজা হেরোদের সময়ে (দেখুন তাফহীমুল কুরআন, বনী ইসরাঈল, ৯ টীকা) অবিয়ের পালার মধ্যে সখরীয় (যাকারিয়া) নামাক একজন যাজক ছিলেন, তাঁহার স্ত্রী হারোণ বংশীয়া, তাঁহার নাম ইলীশাবেৎ(Elizabeth) তাঁহারা দুইজন ঈশ্বরের সাক্ষাতে ধার্মিক ছিলেন, প্রভুর সমস্ত আজ্ঞা ও বিধি অনুসারে নির্দ্দোষরূপে চলিতেন। তাঁহাদের সন্তান ছিল না, কেননা, ইলীশাবেত বন্ধ্যা ছিলেন এবং দুই জনেরই অধিক বয়স হয়েছিল। একদা যখন সখরীয় (যাকারিয়া) নিজ পালার অনুক্রমে ঈশ্বরের সাক্ষাতের যাজকীয় কার্য করিতেছিলেন, তখন যাজকীয় কার্যের প্রথানুসারে গুলিবাঁট ক্রমে তাঁহাকে প্রভুর মন্দিরে প্রবেশ করিয়া ধূপ জ্বালাইতে হইল। সেই ধূপদাহের সময়ে সমস্ত লোক বাহিরে থাকিয়া প্রার্থনা করতেছিল। তখন প্রভুর এক দূত ধূপবেদির দক্ষিণ পার্শ্বে দাঁড়াইয়া তাঁহাকে দর্শন দিলেন। দেখিয়া সখরিয়(যাকারিয়া) ত্রাসযুক্ত হইলেন, ভয় তাঁহাকে আক্রমণ করিল। কিন্তু দূত তাঁহাকে বলিলেন, সখরিয়, ভয় করিওনা কেননা, তোমার বিনীত গ্রাহ্য হইয়াছে, (বাইবেলের কোথাও হযরত সখরিয়ার (যাকারিয়ার) দোয়ার উল্লেখ নেই। তোমার স্ত্রী ইলীশাবেৎ তোমার জন্য পুত্র প্রসব করিবেন ও তুমি তাহার নাম যোহন (অর্থাৎ ইয়াহইয়া) রাখিবে। আর তোমার আনন্দ ও উল্লাস হইবে এবং তাহার জন্মে অনেকে আনন্দিত হইবে। কারণ সে প্রভুর সম্মুখে মহান হইবে, (এ বিষয়টি ব্যক্ত করার জন্য সূরা আলে ইমরানে سَيِدًا শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে) এবং দ্রাক্ষারস কি সূরা কিছুই পান করিবে না। تَقِيًّا আর সে মাতার গর্ভে হইতেই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইবে;وَآتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا এবং ইস্রায়েল সন্তানদের মধ্যে অনেককেই তাহাদের ঈশ্বর প্রভুর প্রতি ফিরাইবে। সে তাহার সম্মুখে এলিয়ের (ইলিয়াস আলাইহিস সালাম) আত্মায় ও পরাক্রমে গমন করিবে, যেন পিতৃগণের হৃদয় সন্তানদের প্রতি ও অনাজ্ঞাবহদিগকে ধার্মিকদের বিজ্ঞতায় চলিবার জন্য ফিরাইতে পারে, প্রভুর নিমিত্ত সুসজ্জিত এক প্রজামণ্ডলী প্রস্তুত করিতে পারে।

“তখন সখরিয়া (যাকারিয়া) দূতকে কহিলেন, কিসে ইহা জানিব? কেননা আমি বৃদ্ধা এবং আমার স্ত্রীরও অধিক বয়স হইয়াছে। দূত উত্তর করিয়া তাঁহাকে কহিলেন, আমি গাব্রিয়েল (জিব্রীল), ঈশ্বরের সম্মুখে দাঁড়াইয়া থাকি, তোমার সহিত কথা কহিবার ও তোমাকে এ সকল বিষয়ের সুসমাচার দিবার জন্য প্রেরিত হইয়াছি। আর দেখ, এই সকল যেদিন ঘটিবে, সেই দিন পর্যন্ত নীরব থাকিবে, কথা কহিতে পারিবে না; যেহেতু আমার এই যে সকল বাক্য যথাসময়ে সফল হইবে, ইহাতে তুমি বিশ্বাস করিলে না। (এ বর্ণনাটি কুরআন থেকে ভিন্নতর। কুরআন একে নিদর্শন গণ্য করে এবং লুকের বর্ণনা একে বলে শাস্তি। তাছাড়া কুরআন কেবলমাত্র তিন দিন কথা না বলার কথা বলে এবং লুক বলেন, সেই থেকে হযরত ইয়াহিয়ার জন্ম হওয়া পর্যন্ত হযরত যাকারিয়া নীরব থাকেন।) আর লোক সকল সখরিয়ের অপেক্ষা করিতেছিল;এবং মন্দিরের মধ্যে তাহার বিলম্ব হওয়াতে তাহারা আশ্চর্য জ্ঞান করিতে লাগিল। পরে তিনি বাহিরে আসিয়া তাহাদের কাছে কথা কহিতে পারিলেন না; তখন তাহারা বুঝিল যে, মন্দিরের মধ্যে তিনি কোন দর্শন পাইয়াছেন; আর তিনি তাহাদের নিকটে নানা সংকেত করিতে থাকিলেন এবং বোবা হইয়া রহিলেন।” (লুক১: ৫-২২)

৯.
মাঝখানে এই বিস্তারিত তথ্য পরিবেশিত হয়নি যে, আল্লাহর ফরমান অনুযায়ী হযরত ইয়াহিয়ার (আ) জন্ম হয় এবং শৈশব থেকে তিনি যৌবনে পদার্পণ এখন বলা হচ্ছে, যখন তিনি জ্ঞানলাভের নির্দিষ্ট বয়ঃসীমায় পৌঁছেন তখন তাঁর ওপর কি দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এখানে মাত্র একটি বাক্যে নবুওয়াতের মহান মর্যাদায় অভিষিক্ত করার সময় তার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয় তার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি তাওরাতকে সদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবেন এবং বনী ইসরাঈলকে এ পথে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করবেন।
১০.
“হুকুম” অর্থাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের শক্তি, ইজতিহাদ করার শক্তি, দ্বীনের গভীর তত্বজ্ঞান, জীবন সমস্যার ক্ষেত্রে সঠিক মত প্রকাশের যোগ্যতা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে ফয়সালা দান করার ক্ষমতা।
১১.
আসলে حَنَان শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এটি মমতার প্রায় সমার্থক শব্দ। অর্থাৎ একজন মায়ের মনে নিজের সন্তানের জন্য যে চূড়ান্ত পর্যায়ের স্নেহশীলতা থাকে, যার ভিত্তিক সে শিশুর কষ্টে অস্থির হয়ে পড়ে, আল্লাহর বান্দাদের জন্য হযরত ইয়াহিয়ার মনে এই ধরনের স্নেহ-মমতা সৃষ্টি হয়েছিল।
১২.
বাইবেলের বিভিন্ন পুস্তকে হযরত ইয়াহিয়ার জীবনের যে ঘটনাবলী ছড়িয়ে আছে সেগুলো একত্র করে আমি এখানে তাঁর পূতপবিত্র জীবনের একটি চিত্র তুলে ধরছি। এর সাহায্যে সূরা আলে ইমরান এবং এ সূরাটির সংক্ষিপ্ত ইশারা ইঙ্গিতগুলোর ব্যাখ্যা হয়ে যাবে।

লুকের বর্ণনা অনুসারে হযরত ইয়াহইয়া (আ) ছিলেন, হযরত ঈসা (আ) চেয়ে ৬ মাসের বড়। তাঁর মাতা হযরত ঈসার (আ) মাতার নিকটাত্মীয়া ছিলেন। প্রায় ৩০ বছর বয়সে তিনি কার্যকরভাবে নবুওয়াতের দায়িত্ব লাভ করেন। যোহনের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ট্রান্স জর্ডন এলাকায় আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেবার কাজ শুরু করেন। তিনি বলতেনঃ

“আমি প্রান্তরে এক জনের রব যে ঘোষণা করিতেছে তোমরা প্রভুর সরল পথ ধর।” (যোহন১: ২৩)

মার্কের বর্ণনা মতে তিনি লোকদের পাপের জন্য তাদের তাওবা করাতেন এবং তাওবাকারীদেরকে বাপ্তাইজ করতেন। অর্থাৎ তাওবা করার পর তাদেরকে গোসল করাতেন, যাতে আত্মা ও শরীর উভয়ই পবিত্র হয়ে যায়। ইয়াহুদিয়া (যিহূদা) ও জেরুসালেমের অধিকাংশ লোক তাঁর ভক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁর দ্বারা বাপ্তাইজিত হচ্ছিল। (মার্ক ১: ৪-৫) এ জন্য তিনি বাপ্তাইজক ইয়াহইয়া (Jhon The Baptist) নামে পরিচিত হয়ে গিয়েছিলেন। সাধারণভাবে বনী ইসরাঈল তাঁর নবুওয়াত স্বীকার করে নিয়েছিল। (মথি২১: ২৬) ঈসা আলাইহিস সালামের উক্তি ছিল, “স্ত্রী লোকের গর্ভজাত সকলের মধ্যে যোহন বাপ্তাইজক হইতে মহান কেহই উৎপন্ন হয় নাই।” (মথি ১১: ১১)।

তিনি উটের লোমের কাপড় পরতেন, চর্মপটুকা কোমরে বাঁধতেন এবং তার খাদ্য ছিল পঙ্গপাল ও বনমধু। (মথি৩: ৪) এই ফকিরী জীবন যাপনের সাথে সাথে তিনি প্রচার করে বেড়াতেনঃ “মন ফিরাও (অর্থাৎ তাওবা কর) কেননা স্বর্গ রাজ্য সন্নিকট হইল।” (মথি৩: ২) অর্থাৎ ঈসা আলাইহিস সালামের নবুওয়াতের দাওয়াতের সূচনা হতে যাচ্ছে। এ কারণে তাঁকে সাধারণ হযরত ঈসার (আ) ‘আরহাস’ বলা হতো। কুরআন মজীদেও তাঁর সম্পর্কে একথাই এভাবে বলা হয়েছেঃ

مُصَدِّقًا بِكَلِمَةٍ مِنَ اللَّهِ

অর্থাৎ “সে আল্লাহর বাণী সত্যতার সাক্ষ্যদানকারী”(আলে ইমরান ৩৯) তিনি লোকদের নামায পড়ার ও রোযা রাখার উপদেশ দিতেন (মথি ৯: ১৪, লুক, ৫: ৩৩, লুক১১: ১)

তিনি লোকদের বলতেন, “যাহার দুইটি আঙ্রাখা আছে, সে, যাহার নাই, তাহাকে একটি দিউক; আর যাহার কাছে খাদ্যদ্রব্য আছে সেও তদ্রূপ করুক।” কর গ্রাহীরাও তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, গুরু আমরা কি করবো? তাতে তিনি জবাব দেন, “তোমাদের জন্য যাহা নিরূপিত তাহার অধিক আদায় করিও না।” সৈনিকরা জিজ্ঞেস করলো, আমাদের প্রতি কি নির্দেশ? জবাব দেন, “কাহারও প্রতি দৌরাত্ম্য করিও না, অন্যায় পূর্বক কিছু আদায়ও করিও না এবং তোমাদের বেতনে সন্তুষ্ট থাকিও।” (লুক ৩: ১০-১৪) বনী ইসরাঈলদের বিপথগামী উলামা, ফরীশী ও সদ্দুকীরা তাঁর কাছে বাপ্তাইজ হবার জন্য এলে তিনি তাদেরকে ধমক দিয়ে বলেন, “হে সর্পের বংশেরা আগামী কোপ হইতে পলায়ন করিতে তোমাদিগকে কে চেতনা দিল? . . . . . . . . . . . . . . . আর ভাবিও না যে, তোমরা মনে মনে বলিতে পার আব্রাহাম আমাদের পিতা, ……………… আর এখন গাছগুলোর মুলে কুড়াল লাগান আছে, অতএব যে কোন গাছে উত্তম ফল ধরে না তাহা কাটিয়া আগুনে ফেলিয়া দেওয়া যায়।” (মথি ৩: ৭-১০)

তাঁর যুগের ইহুদী শাসনকর্তা হীরোদ এন্টিপাসের রাজ্যে তিনি সত্যের দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করছিলেন। এই শাসনকর্তা ছিল আপাদমস্তক রোমীয় সভ্যতার প্রতিভূ। তারই কারণে সারাদেশে দুষ্কৃতি, নৈতিকতা বিরোধী ও আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতামূলক কার্যকলাপ প্রসার লাভ করছিল। সে নিজের ভাই ফিলিপের স্ত্রী হিরোদিয়াসকে নিজের গৃহে রক্ষিতা রেখেছিল। হযরত ইয়াহইয়াএ জন্য হিরোদকে ভর্ৎসনা করেন এবং তার পাপাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এ অপরাধে হিরোদ তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। তবুও সে তাঁকে একজন পবিত্রাত্মা ও সৎকর্মশীল মনে করে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতো এবং জনগণের মধ্যে তাঁর প্রভাবের কারণে তাঁকে ভয়ও করতো। কিন্তু হিরোদিয়াস মনে করতো, ইয়াহইয়া, আলাইহিস সালাম জনগণের মধ্যে যে নৈতিক চেতনা সঞ্চার করেছেন তার ফলে জনগণের দৃষ্টিতে তার মতো মেয়েরা ঘৃণিত হয়ে যাচ্ছে। তাই তাঁর প্রাণ সংহারের প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত হিরোদের জন্ম বার্ষিকী উৎসবে সে তার কাংখিত সুযোগ পেয়ে যান। উৎসবে তার মেয়ে মনোমুগ্ধকর নৃত্য প্রদর্শন করে হিরোদের চিত্ত জয় করে। হিরোদ সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বলে, কি পুরস্কার চাও বলো। মেয়ে তার ব্যভিচারী মাকে জিজ্ঞেস করে, কি চাইবো? মা বলে, ইয়াহিয়ার মস্তক চাও। তাই সে হিরোদের সামনে হাত জোড় করে বলে, জাহাঁপনা! আমাকে এখনি ইয়াহইয়া বাপ্তাইজকের মাথা একটি থালায় করে আনিয়ে দিন। হিরোদ একথা শুনে বড়ই বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। কিন্তু প্রিয়ার মেয়ের দাবী না মেনে উপায় ছিল না। সে তৎক্ষণাত কারাগার থেকে ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের মাথা কেটে আনলো এবং তা একটি থালায় রেখে নর্তকীকে নজরানা দিল। (মথি ১৪: ৩-১২, মার্ক ৬: ১৭-১৯ ও লুক ৩: ১৯-২০)

১৩.
তুলনামুলক অধ্যয়নের জন্য তাফহীমুল কুরআন সূরা আলে ইমরান ৪২ ও ৫৫ টীকা এবং সূরা নিসা ১৯০-১৯১ টীকা দেখুন।
১৪.
সূরা আলে ইমরানে এ কথা বলা হয়েছে যে, হযরত মারয়ামের মা তাঁর মানত অনুযায়ী তাঁকে বাইতুল মাকদিসে ইবাদতের জন্য বসিয়ে দিয়েছিলেন। হযরত যাকারিয়া তাঁর হেফাজত ও রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সেখানে একথাও বলা হয়েছে যে, হযরত মারয়াম বাইতুল মাকদিসের একটি মিহরাবে ইতিকাফ করেছিলেন। এখন এখানে বলা হচ্ছে, যে মিহরাবটিতে হযরত মারয়ামের ই’তিকাফরত ছিলেন সেটি বাইতুল মাকদিসের পূর্বাংশে অবস্থিত ছিল। সেখানে তিনি ইতিকাফকারীদের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী একটি চাদর টাঙ্গিয়ে দিয়ে নিজেকে অন্যদের দৃষ্টি থেকে আড়াল করে নিয়েছিলেন। যারা বাইবেলের সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য পূর্বাংশ অর্থে “নাসেরাহ” নিয়েছেন তারা ভুল করেছেন কারণ নাসেরাহ জেরুশালেমের উত্তর দিকে অবস্থিত, পূর্বদিকে নয়।
অনুবাদ: