উল্লেখ করা যেতে পারে, বাইতুল মাকদিস মদীনা থেকে সোজা উত্তর দিকে। আর কা’বা হচ্ছে দক্ষিণ দিকে। আর নামাযের মধ্যে কিব্লাহ পরিবর্তন করার জন্য ইমামকে অবশ্যি মুকতাদিদের পেছন থেকে সামনের দিকে আসতে হয়েছে। অন্যদিকে মুকতাদিদের কেবলমাত্র দিক পরিবর্তন করতে হয়নি বরং তাদেরও কিছু কিছু চলাফেরা করে লাইন ঠিকঠাক করতে হয়েছে। কাজেই কোন কোন রেওয়ায়াতে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনাও এসেছে।
আর আয়াতে যে বলা হয়েছে, ‘আমরা তোমাকে বারবার আকাশের দিকে তাকাতে দেখছি’ এবং ‘সেই কিব্লাহর দিকে তোমার মুখ ফিরিয়ে দিচ্ছি যাকে তুমি পছন্দ করো ’ এ থেকে পরিষ্কার জানা যায়, কিব্লাহ পরিবর্তনের নির্দেশ আসার আগে থেকেই নবী ﷺ এ প্রতীক্ষায় ছিলেন। তিনি নিজেই অনুভব করছিলেন, বনী ইসরাঈলের নেতৃত্বের যুগ শেষ হয়ে গেছে এবং তার সাথে সাথে বাইতুল মাকদিসের কেন্দ্রিয় মর্যাদা লাভেরও অবসান ঘটেছে। এখন আসল ইবরাহীমী কেন্দ্রের দিকে মুখ ফিরাবার সময় এসে গেছে।
‘মসজিদে হারাম’ অর্থ সম্মান ও মর্যাদা সম্পন্ন মসজিদ। এর অর্থ হচ্ছে, এমন ইবাদাত গৃহ যার মধ্যস্থলে কা’বাগৃহ অবস্থিত।
কা’বার দিকে মুখ করার অর্থ এ নয় যে, দুনিয়ার যে কোন জায়গা থেকে সোজা নাক বরাবর কা’বার দিকে ফিরে দাঁড়াতে হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য প্রত্যেক জায়গায় সবসময় এটা করা কঠিন। তাই কা’বার দিকে মুখ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সোজা কা’বা বরাবর মুখ করে দাঁড়াবার নির্দেশ দেয়া হয়নি। কুরআনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে যথাসম্ভব কা’বার নির্ভুল দিক নির্দেশ করার জন্য অনুসন্ধান আমাদের অবশ্যি চালাতে হবে। কিন্তু একেবারেই যথার্থ ও নির্ভুল দিক জেনে নেয়ার দায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পণ করা হয়নি। সম্ভাব্য সকল উপায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যে দিকটিতে কা’বার অবস্থিতি হওয়া সম্পর্কে আমরা সবচেয়ে বেশী নিশ্চিত হতে পারি সেদিকে ফিরে নামায পড়াই নিঃসন্দেহে সঠিক পদ্ধতি। যদি কোথাও কিব্লার দিক নির্দেশকরা কঠিন হয়ে পড়ে অথবা এমন অবস্থায় থাকা হয় যার ফলে কিব্লার দিকে মুখ করে থাকা সম্ভব না হয় (যেমন নৌকা বা রেলগাড়ীতে ভ্রমণ কালে) তাহলে এ অবস্থায় যে দিকটার কিব্লাহ হওয়া সম্পর্কে ধারণা হয় অথবা যেদিকে মুখ ফিরিয়ে থাকা সম্ভব হয়, সেদিকে মুখ ফিরিয়ে নামায পড়া যেতে পারে। তবে, হ্যাঁ, নামাযের মধ্যেই যদি কিব্লার সঠিক দিক নির্দেশনা জানা যায় অথবা সঠিক দিকে নামায পড়া সম্ভব হয়, তাহলে নামায পড়া অবস্থায়ই সেদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়া উচিত।