۞ يَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلْأَهِلَّةِ ۖ قُلْ هِىَ مَوَٰقِيتُ لِلنَّاسِ وَٱلْحَجِّ ۗ وَلَيْسَ ٱلْبِرُّ بِأَن تَأْتُوا۟ ٱلْبُيُوتَ مِن ظُهُورِهَا وَلَـٰكِنَّ ٱلْبِرَّ مَنِ ٱتَّقَىٰ ۗ وَأْتُوا۟ ٱلْبُيُوتَ مِنْ أَبْوَٰبِهَا ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
লোকেরা তোমাকে চাঁদ ছোট বড়ো হওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছে। বলে দাওঃ এটা হচ্ছে লোকদের জন্য তারিখ নির্ণয় ও হজ্জ্বের আলামত ১৯৮ তাদেরকে আরো বলে দাওঃ তোমাদের পেছন দিক দিয়ে গৃহে প্রবেশ করার মধ্যে কোন নেকী নেই। আসলে নেকী রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার মধ্যেই, কাজেই তোমরা দরজা পথেই নিজেদের গৃহে প্রবেশ করো। তবে আল্লাহকে ভয় করতে থাকো, হয়তো তোমরা সাফল্য লাভে সক্ষম হবে। ১৯৯
১৯৮
চাঁদের হ্রাস বৃদ্ধি হওয়ার দৃশ্যটি প্রতি যুগের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অতীতে দুনিয়ার বিভিন্ন জাতির মধ্যে এ সম্পর্কে নানা ধরনের রহস্যময়তা, কাল্পনিকতা ও কুসংস্কারের প্রচলন ছিল এবং আজও রয়েছে। আরবের লোকদের মধ্যেও এ ধরনের কুসংস্কার ও অমূলক ধারণা-কল্পনার প্রচলন ছিল। চাঁদ থেকে ভালো মন্দ ‘লক্ষণ’ গ্রহণ করা হতো। কোন তারিখকে সৌভাগ্যের ও কোন তারিখকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক মনে করা হতো। কোন তারিখকে বিদেশ-বিভুঁইয়ে যাত্রার জন্য, কোন তারিখকে কাজ শুরু করার জন্য এবং কোন তারিখকে বিয়ে-সাদীর জন্য অপয়া বা অকল্যাণকর মনে করা হতো। আবার একথাও মনে করা হতো যে, চাঁদের উদয়াস্ত, হ্রাস-বৃদ্ধি ও আবর্তণ এবং চন্দ্রগ্রহণের প্রভাব মানুষের ভাগ্যের ওপর পড়ে। দুনিয়ার অন্যান্য অজ্ঞ ও মূর্খ জাতিদের মতো আরবদের মধ্যেও এ সমস্ত ধারণা-কল্পনার প্রচলন ছিল। এ সম্পর্কিত নানা ধরনের কুসংস্কার, রীতিনীতি ও অনুষ্ঠানাদি তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসব বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। জবাবে মহান আল্লাহ বলেন, চাঁদের হ্রাস-বৃদ্ধি হওয়ার তাৎপর্য এছাড়া আর কিছুই নয় যে, এটা একটা প্রাকৃতিক ক্যালেণ্ডার যা আকাশের গায়ে টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন আকাশ কিনারে উঁকি দিয়ে এ ক্যালেণ্ডারটি একই সাথে সারা দুনিয়ার মানুষকে তারিখের হিসেব জানিয়ে দিতে থাকে। এখানে হজ্জের উল্লেখ বিশেষ করে করার কারণ হচ্ছে এই যে, আরবের ধর্মীয় তামাদ্দুনিক ও অর্থনৈতিক জীবনে এর গুরুত্ব ছিল সবচেয়ে বেশি। বছরের এক-তৃতীয়াংশ সময় অর্থাৎ চারটি মাসই ছিল হজ্জ ও উমরাহর সাথে সম্পর্কিত। এ মাসগুলোয় যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ থাকতো, পথঘাট সংরক্ষিত ও নিরাপদ থাকতো এবং শান্তি ও নিরাপত্তার পরিবেশ বজায় থাকার কারণে ব্যবসা বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটতো।
১৯৯
আরবে যে সমস্ত কুসংস্কারমূলক প্রথার প্রচলন ছিল তার মধ্যে একটি ছিল হজ্জ সম্পর্কিত। কোন ব্যক্তি হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধার পর নিজের গৃহের দরজা দিয়ে আর ভেতরে প্রবেশ করতো না। বরং গৃহে প্রবেশ করার জন্য পেছন থেকে দেয়াল টপকাতো বা দেয়াল কেটে জানালা বানিয়ে তার মধ্য দিয়ে গৃহে প্রবেশ করতো। তাছাড়া সফর থেকে ফিরে এসেও পেছন থেকে গৃহে প্রবেশ করতো। এই আয়াতে কেবলমাত্র এই প্রথাটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদই জানানো হয়নি বরং এই বলে সকল প্রকার কুসংস্কার ও কুপ্রথার মূলে আঘাত হানা হয়েছে যে, নেকী ও সৎকর্মশীলতা হচ্ছে আসলে আল্লাহকে ভয় করা এবং তাঁর বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করা থেকে বিরত থাকার নাম। নিছক বাপ-দাদার অন্ধ অনুসরণের বশবর্তী হয়ে যেসব অর্থহীন নিয়ম প্রথা পালন করা হচ্ছে এবং যেগুলোর সাথে মানুষের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের কোন সম্পর্কই নেই, সেগুলো আসলে নেকী ও সৎকর্ম নয়।