حَـٰفِظُوا۟ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلْوُسْطَىٰ وَقُومُوا۟ لِلَّهِ قَـٰنِتِينَ
তোমাদের নামাযগুলো ২৬২ সংরক্ষণ করো, বিশেষ করে এমন নামায যাতে নামাযের সমস্ত গুণের সমন্বয় ঘটেছে। ২৬৩ আল্লাহর সামনে এমনভাবে দাঁড়াও যেমন অনুগত সেবকরা দাঁড়ায়।
২৬২
সামাজিক ও তামাদ্দুনিক বিধান বর্ণনা করার পর নামাযের তাগিদ দিয়ে আল্লাহ এই ভাষণটির সমাপ্তি টানছেন। কারণ নামায এমন একটি জিনিস, যা মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয়, সততা, সৎকর্মশীলতা ও পবিত্রতার আবেগ এবং আল্লাহর বিধানের আনুগত্যের ভাবধারা সৃষ্টি করে। আর এই সঙ্গে তাকে ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখে। মানুষের মধ্যে এ বস্তুগুলো না থাকলে সে কখনো আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করার ক্ষেত্রে অবিচল নিষ্ঠার পরিচয় দিতে পারতো না। সেক্ষেত্রে সে ইহুদি জাতির মতো নাফরামানির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতো।
২৬৩
মূলে ‘সালাতুল উস্তা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কোন কোন মুফাস্সির এর অর্থ করেছেন ফজরের নামায। কেউ যোহরের, কেউ মাগরিবের। আবার কেউ এশার নামাযও মনে করেছেন। কিন্তু এর কোন একটিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বক্তব্য নয়। এগুলো কেবলমাত্র ব্যাখ্যাদাতাদের স্বকীয় উদ্ভাবন ছাড়া আর কিছুই নয়। সব চাইতে বেশী মত ব্যক্ত হয়েছে আসরের নামাযের পক্ষে। বলা হয়ে থাকে, নবী ﷺ এ নামাযটিকে ‘সালাতুল উস্তা’ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু যে ঘটনাটি থেকে এই সিদ্ধান্ত টানা হয়েছে তাতে কেবলমাত্র এতটুকু কথা বলা হয়েছেঃ আহযাব যুদ্ধের সময় মুশিরকদের আক্রমণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এতদূর ব্যস্ত রেখেছিল যার ফলে বেলা গড়িয়ে একেবারে সূর্য ডুবু ডুবু হয়েছিল। অথচ তখনো তিনি আসরের নামায পড়তে পারেননি। তখন তিনি বললেনঃ “আল্লাহ তাদের কবর ও তাদের ঘর আগুনে ভরে দিন। তারা আমাদের ‘সালাতুল উস্তা’ পড়তে দেয়নি।” এ বক্তব্য থেকেই একথা মনে করা হয়েছে যে, রসূল ﷺ আসরের নামাযকে সালাতুল উস্ত বলেছেন। অথচ এই বক্তব্যের সবচেয়ে বেশী নির্ভুল অর্থ আমাদের কাছে এটাই মনে হচ্ছে যে, এই ব্যস্ততার কারণে উন্নত পর্যায়ে নামায থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি। এখন অসময়ে এটি পড়তে হবে। তাড়াতাড়ি পড়তে হবে। খুশু-খুযু তথা নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে ধীরে-স্থিরে এ নামাযটি পড়া যাবে না।
‘উস্তা’ অর্থ মধ্যবর্তী জিনিসও হয়। আবার এ শব্দটি এমন জিনিস সম্পর্কেও ব্যবহৃত হয় যা উন্নত ও উৎকৃষ্ট। ‘সালাতুল উস্তা’ এর মধ্যবর্তী নামাযও হতে পারে আবার এমন নামাযও হতে পারে, যা সঠিক সময়ে পূর্ণ একাগ্রতার সাথে আল্লাহর প্রতি গভীরভাবে মন সংযোগ সহকারে পড়া হয় এবং যার মধ্যে নামাযের যাবতীয় গুণেরও সমাবেশ ঘটে। আল্লাহর সামনে অনুগত বান্দার মতো দাঁড়াও-এই পরবর্তী বাক্যটি নিজেই ‘সালাতুল উস্তা’ শব্দটির ব্যাখ্যা করে দিচ্ছে।