আল বাকারাহ

২৮৬ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
১১১ ) তারা বলে, কোন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না, যে পর্যন্ত না সে ইহুদি হয় অথবা (খৃস্টানদের ধারণামতে) খৃস্টান হয়। এগুলো হচ্ছে তাদের আকাংখা। ১১২ তাদেরকে বলে দাও, তোমাদের প্রমাণ আনো, যদি নিজেদের দাবীর ব্যাপারে তোমরা সত্যবাদী হও।
وَقَالُوا۟ لَن يَدْخُلَ ٱلْجَنَّةَ إِلَّا مَن كَانَ هُودًا أَوْ نَصَٰرَىٰ تِلْكَ أَمَانِيُّهُمْ قُلْ هَاتُوا۟ بُرْهَٰنَكُمْ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِينَ ١١١
১১২ ) (আসলে তোমাদের বা অন্য কারোর কোন বিশেষত্ব নেই। ) সত্য বলতে কি যে ব্যক্তিই নিজের সত্ত্বাকে আল্লাহর আনুগত্যে সোপর্দ করবে এবং কার্যত সৎপথে চলবে, তার জন্য তার রবের কাছে আছে এর প্রতিদান। আর এই ধরনের লোকদের জন্য কোন ভয় বা মর্মবেদনার অবকাশ নেই।
بَلَىٰ مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُۥ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُۥٓ أَجْرُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ١١٢
১১৩ ) ইহুদিরা বলে, খৃস্টানদের কাছে কিছুই নেই। খৃস্টানরা বলে ইহুদিদের কাছে কিছুই নেই। অথচ তারা উভয়ই কিতাব পড়ে। আর যাদের কাছে কিতাবের জ্ঞান নেই তারাও এ ধরনের কথা বলে থাকে। ১১৩ এরা যে মত বিরোধে লিপ্ত হয়েছে কিয়ামতের দিন আল্লাহ‌ এর চূড়ান্ত মীমাংসা করে দেবেন।
وَقَالَتِ ٱلْيَهُودُ لَيْسَتِ ٱلنَّصَٰرَىٰ عَلَىٰ شَىْءٍ وَقَالَتِ ٱلنَّصَٰرَىٰ لَيْسَتِ ٱلْيَهُودُ عَلَىٰ شَىْءٍ وَهُمْ يَتْلُونَ ٱلْكِتَٰبَ كَذَٰلِكَ قَالَ ٱلَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ مِثْلَ قَوْلِهِمْ فَٱللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ فِيمَا كَانُوا۟ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ١١٣
১১৪ ) আর তার চাইতে বড় যালেম আর কে হবে যে আল্লাহর ঘরে তাঁর নাম স্মরণ করা থেকে মানুষকে বাধা দেয় এবং সেগুলো ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালায়? এই ধরনের লোকেরা এসব ইবাদাতগৃহে প্রবেশের যোগ্যতা রাখে না আর যদি কখনো প্রবেশ করে, তাহলে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় প্রবেশ করতে পারে। ১১৪ তাদের জন্য রয়েছে এ দুনিয়ায় লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে বিরাট শাস্তি।
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا ٱسْمُهُۥ وَسَعَىٰ فِى خَرَابِهَآ أُو۟لَٰٓئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَآ إِلَّا خَآئِفِينَ لَهُمْ فِى ٱلدُّنْيَا خِزْىٌ وَلَهُمْ فِى ٱلْءَاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ ١١٤
১১৫ ) পূর্ব ও পশ্চিম সব আল্লাহর। তোমরা যেদিকে মুখ ফিরাবে সেদিকেই আল্লাহর চেহারা বিরাজমান। ১১৫ আল্লাহ বড়ই ব্যাপকতার অধিকারী এবং তিনি সবকিছু জ্ঞাত। ১১৬
وَلِلَّهِ ٱلْمَشْرِقُ وَٱلْمَغْرِبُ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا۟ فَثَمَّ وَجْهُ ٱللَّهِ إِنَّ ٱللَّهَ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ١١٥
১১৬ ) তারা বলে, আল্লাহ‌ কাউকে ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ‌ পবিত্র এসব কথা থেকে। আসলে পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত জিনিসই তাঁর মালিকানাধীন, সবকিছুই তাঁর নির্দেশের অনুগত।
وَقَالُوا۟ ٱتَّخَذَ ٱللَّهُ وَلَدًا سُبْحَٰنَهُۥ بَل لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ كُلٌّ لَّهُۥ قَٰنِتُونَ ١١٦
১১৭ ) তিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা। তিনি যে বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন সে সম্পর্কে কেবলমাত্র হুকুম দেন ‘হও’, তাহলেই তা হয়ে যায়।
بَدِيعُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَإِذَا قَضَىٰٓ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ١١٧
১১৮ ) অজ্ঞ লোকেরা বলে, আল্লাহ‌ নিজে আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন অথবা কোন নিশানী আমাদের কাছে আসে না কেন? ১১৭ এদের আগের লোকেরাও এমনি ধারা কথা বলতো। এদের সবার (আগের ও পরের পথভ্রষ্টদের) মানসিকতা একই। ১১৮ দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য আমরা নিশানীসমূহ সুস্পষ্ট করে দিয়েছি। ১১৯
وَقَالَ ٱلَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ لَوْلَا يُكَلِّمُنَا ٱللَّهُ أَوْ تَأْتِينَآ ءَايَةٌ كَذَٰلِكَ قَالَ ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِم مِّثْلَ قَوْلِهِمْ تَشَٰبَهَتْ قُلُوبُهُمْ قَدْ بَيَّنَّا ٱلْءَايَٰتِ لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ ١١٨
১১৯ ) (এর চাইতে বড় নিশানী আর কি হতে পারে যে) আমি তোমাকে পাঠিয়েছি সত্য জ্ঞান সহকারে সুসংবাদ দানকারী ও ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে। ১২০ যারা জাহান্নামের সাথে সম্পর্ক জুড়েছে তাদের জন্য তুমি দায়ী নও এবং তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে না।
إِنَّآ أَرْسَلْنَٰكَ بِٱلْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَا تُسْـَٔلُ عَنْ أَصْحَٰبِ ٱلْجَحِيمِ ١١٩
১২০ ) ইহুদি ও খৃস্টানরা তোমার প্রতি কখনোই সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের পথে চলতে থাকো। ১২১ পরিষ্কার বলে দাও, পথ মাত্র একটিই, যা আল্লাহ‌ বাতলে দিয়েছেন। অন্যথায় তোমার কাছে যে জ্ঞান এসেছে তারপরও যদি তুমি তাদের ইচ্ছা ও বাসনা অনুযায়ী চলতে থাকো, তাহলে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষাকারী তোমর কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী থাকবে না।
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ ٱلْيَهُودُ وَلَا ٱلنَّصَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ قُلْ إِنَّ هُدَى ٱللَّهِ هُوَ ٱلْهُدَىٰ وَلَئِنِ ٱتَّبَعْتَ أَهْوَآءَهُم بَعْدَ ٱلَّذِى جَآءَكَ مِنَ ٱلْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ ٱللَّهِ مِن وَلِىٍّ وَلَا نَصِيرٍ ١٢٠
১১২.
আসলে এটা নিছক তাদের অন্তরের বাসনা এবং আকাঙ্ক্ষা মাত্র। কিন্তু তারা এটাকে এমনভাবে বর্ণনা করছে যেন সত্যি সত্যিই এমনটি ঘটবে।
১১৩.
অর্থাৎ আরবের মুশরিকরা।
১১৪.
অর্থাৎ ইবাদাত গৃহগুলো এ ধরনের যালেমদের কর্তৃত্বে ও পরিচালানাধীনে থাকার এবং তারা এর রক্ষাণাবেক্ষণকারী হবার পরিবর্তে শাসন কর্তৃত্ব থাকা উচিত আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত এমন সব লোকদের হাতে আর তারাই হবে ইবাদত গৃহগুলোর রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাহলে এ দুষ্কৃতিকারীরা সেখানে গেলেও কোন দুষ্কর্ম করার সাহস করবে না। কারণ তারা জানবে, সেখানে গিয়ে কোন দুষ্কর্ম করলে শাস্তি পেতে হবে। এখানে মক্কার কাফেরদের যুলুমের প্রতিও সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাদের নিজেদের জাতির যেসব লোক ইসলাম গ্রহণ করেছিল তারা তাদেরকে আল্লাহর ঘরে ইবাদাত করতে বাধা দিয়েছিল।
১১৫.
অর্থাৎ আল্লাহ‌ পূর্বেরও নয়, পশ্চিমেরও নয়। তিনি সকল দিকের ও সকল স্থানের মালিক। কিন্তু নিজে কোন স্থানের পরিসরে সীমাবদ্ধ নেই। কাজেই তাঁর ইবাদাতের জন্য কোন দিক বা স্থান নির্দিষ্ট করার অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ‌ সেদিকে বা সে স্থানে থাকেন। কাজেই ইতিপূর্বে তোমরা ওখানে বা ঐ দিকে ফিরে ইবাদাত করতে আর এখন সেই জায়গা বা দিক পরিবর্তন করলে কেন –একথা নিয়ে ঝগড়া বা বিতর্ক করার কোন অবকাশ নেই।
১১৬.
অর্থাৎ মহান আল্লাহ‌ সীমাবদ্ধ নন। তিনি সংকীর্ণ মন, সংকীর্ণ দৃষ্টি ও সংকীর্ণ হাতের অধিকারী নন। অথচ তোমরা আল্লাহকে তোমাদের মতো ভেবে এ রকম মনে করে রেখেছো। বরং তাঁর খোদায়ী কর্তৃত্ব বিশাল-বিস্তৃত এবং তাঁর দৃষ্টিকোণ ও অনুগ্রহ দানের ক্ষেত্র অত্যন্ত ব্যাপক। তাঁর কোন্‌ বান্দা কোথায় কোন্‌ সময় কি উদ্দেশ্যে তাঁকে স্মরণ করছে---একথাও তিনি জানেন।
১১৭.
তারা বলতে চাচ্ছিল, আল্লাহ‌ নিজে তাদের সামনে এসে বলবেনঃ এই ধরো আমার কিতাব আর এ আমার বিধান, তোমরা এর অনুসারী হও। অথবা তাদেরকে এমন কোন নিশানী দেখানো হবে যা দেখে তারা নিশ্চিন্তভাবে বিশ্বাস করতে পারবে যে, মুহাম্মাদ ﷺ যা কিছু বলছেন আল্লাহর পক্ষ থেকেই বলছেন।
১১৮.
অর্থাৎ আজকের পথভ্রষ্টরা এমন কোন অভিযোগ ও দাবী উত্থাপন করেনি, যা এর আগে পথভ্রষ্টরা করেনি। প্রাচীন যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত পথভ্রষ্টতার প্রকৃতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বার বার একই ধরনের সংশয়, সন্দেহ, অভিযোগ ও প্রশ্নের পুনরাবৃত্তিই সে করে চলছে।
১১৯.
“আল্লাহ নিজে এসে আমাদের সাথে কথা বলেন না কেন? ”---এ অভিযোগটি এতবেশী অর্থহীন ছিল যে, এর জবাব দেয়ার প্রয়োজন ছিল না। আমাদের নিশানী দেখানো হয় না কেন?---শুধুমাত্র এ প্রশ্নটির জবাব দেয়া হয়েছে। এর জবাবে বলা হয়েছে, নিশানী তো রয়েছে অসংখ্য কিন্তু যে ব্যক্তি মানতেই চায় না তাকে কোন্‌ নিশানীটা দেখানো যায়?
১২০.
অর্থাৎ অন্যান্য নিশানী আর কি দেখবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিজের ব্যক্তিত্বই সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল নিশানী। তাঁর নবুওয়াত লাভের পূর্বের অবস্থা, যে দেশের ও জাতির মধ্যে তাঁর জন্ম হয়েছিল তার অবস্থা এবং যে অবস্থার মধ্যে তিনি লালিত-পালিত হন ও চল্লিশ বছর জীবন যাপন করেন তারপর নবুওয়াত লাভ করে মহান ও বিস্ময়কর কার্যাবলী সম্পাদন করেন---এসব কিছুই এমন একটি উজ্জ্বল নিশানী হিসেবে চিহ্নিত যে, এরপরে আর কোন নিশানীর প্রয়োজনই হয় না।
১২১.
এর অর্থ হচ্ছে, তাদের অসন্তুষ্টির কারণ এ নয় যে, তারা যথার্থই সত্যসন্ধানী এবং তুমি সত্যকে তাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরোনি। বরং তোমার প্রতি তাদের অসন্তুষ্টির কারণ হচ্ছে এই যে, তুমি আল্লাহর নিদর্শনসমূহ ও তাঁর দ্বীনের সাথে তাদের মতো মুনাফিকসূলভ ও প্রতারণামূলক আচরণ করছো না কেন? আল্লাহ-পূজার ছদ্মবেশে তারা যেমন আত্মপূজা করে যাচ্ছে তুমি তেমন করছো না কেন? দ্বীনের মূলনীতি ও বিধানসমূহের নিজের চিন্তা-ধারণা-কল্পনা এবং নিজের ইচ্ছা–কামন–বাসনা অনুযায়ী পরিবর্তিত করার ব্যাপারে তাদের মতো দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছো না কেন? তাদের মতো প্রদর্শনীমূলক আচরণ, ছল-চাতুরী ও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছো না কেন? কাজেই তাদেরকে সন্তুষ্ট করার চিন্তা ছেড়ে দাও। কারণ যতদিন তুমি নিজে তাদের রঙে রঞ্জিত হয়ে তাদের স্বভাব আচরণ গ্রহণ করবে না, নিজেদের ধর্মের সাথে তারা যে আচরণ করে যতদিন তুমি তোমার দ্বীনের সাথে অনুরূপ আচরণ করবে না এবং যতদিন তুমি ধর্মীয় আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মের ব্যাপারে তাদের মতো ভ্রষ্টনীতি অবলম্বন করবে না, ততদিন পর্যন্ত তারা কোনক্রমেই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না।
অনুবাদ: