পরকালীন জগতে পৃথিবী যে নতুন রূপ নেবে কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় তা বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা ইনশিকাকে বলা হয়েছে
إِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ ”যখন পৃথিবী বিস্তৃত করে দেয়া হবে।” সূরা ইনফিতারের বলা হয়েছে
إِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ “যখন সাগর চিরে ফেলা হবে।” এর অর্থ সম্ভবত এই যে, সমুদ্রের তলদেশ ফেটি যাবে এবং সমস্ত পানি পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগে চলে যাবে। সূরা তাকবীররে বলা হয়েছেঃ
إِذَا الْبِحَارُ سُجِّرَتْ ”যখন সমুদ্র ভরে দেয়া হবে বা সমান করে দেয়া হবে।” এখানে বলা হচ্ছে যে, পাহাড়গুলো ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো করে সারা পৃথিবীকে একটি সমতল প্রান্তরে পরিণত করা হবে। মনের পাতায় এর যে আকৃতি গড়ে উঠে তা হচ্ছে এই যে, পরকালীন দুনিয়ায় সমস্ত সমুদ্র ভরাট করে, পাহাড়গুলো ভেঙ্গে উঁচু নীচু সমান করে, বন-জংগল সাফ করে পুরোপুরি একটি বলের গাত্রাবরণের মতো সমান ও মসৃণ করে দেয়া হবে। এ আকৃতি সম্পর্কে সূরা ইবরাহীমের ৪৮আয়াতে বলা হয়েছে
يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ “এমন দিন যখন পৃথিবীকে পরিবর্তিত করে ভিন্ন কিছু করে দেয়া হবে।” এ আকৃতির পৃথিবীর ওপর হাশর প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আল্লাহ সেখানে আদালত তথা ন্যায়বিচার কায়েম করবেন। তারপর সবশেষে তাকে যে আকৃতি দান করা হবে সূরা যুমারের ৭৪ আয়াতে তা এভাবে বলা হয়েছেঃ
وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي صَدَقَنَا وَعْدَهُ وَأَوْرَثَنَا الْأَرْضَ نَتَبَوَّأُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ نَشَاءُ فَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ
অর্থাৎ মুত্তাকীরা “বলবে, সেই আল্লাহর শোকর যিনি আমাদের দ্বারা তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং আমাদের পৃথিবীর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিয়েছেন। আমরা এ জান্নাতে যেখানে ইচ্ছা নিজেদের জায়গা বানিয়ে নিতে পারি। কাজেই সৎকর্মশীলদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান।”
এ থেকে জানা যায়, সবশেষে এ সমগ্র পৃথিবীটিকেই জান্নাতে পরিণত করা হবে এবং আল্লাহর মুত্তাকী ও সৎকর্মশীল বান্দারা হবে এর উত্তরাধিকারী। সে সময় সারা পৃথিবী একটি দেশে পরিণত হবে। পাহাড়-পর্বত, সাগর, নদী, মরুভূমি আজ পৃথিবীকে অসংখ্য দেশে বিভক্ত করে রেখেছে এবং এ সাথে বিশ্বমানবতাকেও বিভক্ত করে দিয়েছে। এগুলোর সেদিন কোন অস্তিত্বই থাকবে না। (উল্লেখ্য, সাহাবা ও তাবেঈদের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা.) ও কাতাদাহও এ মত পোষন করতেন যে জান্নাত এ পৃথিবীতেই প্রতিষ্ঠিত হবে। সূরা নাজম এর
عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى - عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَى আয়াতের ব্যাখ্যা তারা এভাবে করেন যে, এখানে এমন জান্নাতের কথা বলা হয়েছে যেখানে এখন শহীদদের রূহ রাখা হয়।)