فَأَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْءَٰتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِن وَرَقِ ٱلْجَنَّةِ ۚ وَعَصَىٰٓ ءَادَمُ رَبَّهُۥ فَغَوَىٰ
শেষ পর্যন্ত দু’জন (স্বামী-স্ত্রী) সে গাছের ফল খেয়ে বসলো। ফলে তখনই তাদের লজ্জাস্থান পরস্পরের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়লো এবং দু’জনাই জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেকে ঢাকতে লাগলো। ১০১ আদম নিজের রবের নাফরমানী করলো এবং সে সঠিক পথ থেকে সরে গেল। ১০২
১০১
অন্য কথায় নাফরমানীর প্রকাশ ঘটার সাথে সাথেই সরকারী ব্যবস্থাপনায় তাদেরকে যেসব জীবনোপকরণ দেয়া হয়েছিল সেগুলো তাদের থেকে ছিনিয়ে নেয়া হলো। আর এর প্রথম প্রকাশ ঘটলো পোশাক ছিনিয়ে নেবার মধ্যে দিয়েই। খাদ্য, পানীয় ও বাসস্থান থেকে বঞ্চিত হওয়া তো ছিল পরবর্তীকালের ব্যাপার। ক্ষুধা ও পিপাসা লাগলে তবেই না খাদ্য ও পানীয়ের চাহিদা বুঝা যেতো এবং বাসস্থান থেকে বের করে দেবার ব্যাপারটিও ছিল পরবর্তীকালীন ব্যাপার। কিন্তু নাফরমাণীর প্রথম প্রভাব পড়লো সরকারী পোশাকের ওপর। কারণ তা সঙ্গে সঙ্গেই খুলে নেয়া হয়েছিল।
১০২
এখানে আদম আলাইহিস সালামের মাধ্যমে যে মানবিক দুর্বলতার প্রকাশ ঘটেছিল তার প্রকৃতি স্বরূপ অনুধাবন করা উচিত। তিনি আল্লাহকে নিজের স্রষ্টা ও রব বলে জানতেন এবং অন্তর দিয়ে তা মানতেন। জান্নাতে তিনি যেসব জীবনোপকরণ লাভ করেছিলেন সেগুলো সব সময় তার সামনে ছিল। শয়তানের হিংসা ও শত্রুতার জ্ঞানও তিনি সরাসরি লাভ করেছিলেন। আল্লাহ তাঁকে হুকুম দেবার সাথে সাথেই বলে দিয়েছিলেন, এ হচ্ছে তোমার শত্রু, তোমাকে নাফরমানী করতে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করবে ফলে এজন্য তোমাকে এ ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। শয়তান তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল যে, আমি তাকে পথভ্রষ্ট করতো এবং তার শিকড় উপড়ে ফেলবো। এসব সত্ত্বেও শয়তান যখন তার সামনে স্নেহশীল উপদেশ দাতা ও কল্যাণকামী বন্ধুর বেশে এসে তাঁকে একটি অপেক্ষাকৃত উন্নত অবস্থার (চিরন্তন জীবন ও অন্তহীন শাসন কর্তৃত্ব) লোভ দেখালো তখন তার লোভ দেখানোর মোকাবিলায় তিনি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারলেন না। তার পা পিছলে গেলো। অথচ এখানে আল্লাহর প্রতি তাঁর বিশ্বাসে কোন পার্থক্য দেখা দেয়নি এবং তাঁর ফরমান আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়, এ ধরনের কোন ভাবনাও তার মনে জাগেনি। শয়তানী লালসাবৃত্তির আওতাধীনে যে একটি তাৎক্ষণিক আবেগ তাঁর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল তা তাঁকে ভুলের মধ্যে নিক্ষেপ করলো এবং আত্মসংযমের বাঁধন ঢিলে হবার সাথে সাথেই তিনি আনুগত্যের উন্নত স্থান থেকে গোনাহের নিম্নপংকে নেমে গেলেন। এ “ভুল” ও সংকল্প বিহীনতার উল্লেখ কাহিনীর শুরুতেই করা হয়েছিল। এ আয়াতের শুরুতে এরই ফলশ্রুতি হিসেবে নাফরমানী ও ভ্রষ্টতার কথা বলা হয়েছে। সৃষ্টির সূচনাতেই মানুষের এ দুর্বলতার প্রকাশ ঘটেছিল এবং পরবর্তীতে এমন কোন যুগ আসেনি যখন তার মধ্যে এ দুর্বলতা পাওয়া যায়নি।