“পর্বত হইতে নামিতে মোশির বিলম্ব হইতেছে দেখিয়া লোকেরা হারোণের নিকটে একত্র হইয়া তাহাকে কহিল, উঠুন আমাদের অগ্রগামী হইবার জন্য আমাদের নিমিত্ত দেবতা নির্মাণ করুন, কেননা যে মোশি মিসর দেশ হইতে আমাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন, সেই ব্যক্তির কি হইল, আমরা জানি না। তখন হারোণ তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আপন আপন স্ত্রী ও পুত্রকন্যাগণের কর্ণের সুবর্ণ কুণ্ডল খুলিয়া আমার কাছে আন। তাহাতে সমস্ত লোক তাহাদের কর্ণ হইতে সুবর্ণ কুণ্ডল খুলিয়া হারোণের নিকটে আনিল। তখন তিনি তাহাদের হস্ত হইতে তাহা গ্রহণ করিয়া শিল্পাস্ত্রে গঠন করিলেন; এবং একটি ঢালা গো-বৎস নির্মাণ করিলেন, তখন লোকেরা বলিতে লাগিল, হে ইস্রায়েল, এ তোমার দেবতা, যিনি মিসর দেশ হইতে তোমাকে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। আর হারোণ তাহা দেখিয়া তাহার সম্মুখে এক বেদি নির্মাণ করিলেন এবং হারোণ ঘোষণা করিয়া দিলেন, বলিলে, কল্য সদাপ্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসব হইবে।” (যাত্রা পুস্তক ৩২: ১-৬)
বনী ইসরাঈলের সমাজে এ ভুল বর্ণনার খ্যাতি লাভের সম্ভাব্য কারণ এও হতে পারে যে, হয়তো সামেরীর নাম হারুণই ছিল এবং পরবর্তী লোকেরা এই হারুণকে হারুণ নবীর সাথে মিশিয়ে ফেলেছে। কিন্তু আজ খৃস্টান মিশনারী ও পশ্চিমের প্রাচ্যবিদরা জোর দিয়ে একথাই বলতে চায় যে, এখানেও কুরআন নিশ্চয়ই ভুল করেছে। তাদের পাক-পবিত্র নবী-ই বাছুরকে ইলাহ বানিয়েছিলেন এবং তাঁর গাত্রাবরণ থেকে এ দাগটি তুলে দিয়ে কুরআন একটি উপকার করেনি বরং উলটো অপরাধ করেছে। এ হচ্ছে তাদের হঠকারিতার অবস্থা। তবে তারা এটা দেখছেন না যে, এ একই অধ্যায়েই মাত্র কয়েক লাইন পরেই বাইবেল কিভাবে নিজেই নিজের ভুল বর্ণনার রহস্য ভেদ করছে। এ অধ্যায়ের শেষ দশটি শ্লোকে বাইবেল বর্ণনা করছে যে, হযরত মূসা (আ) এরপর লেবীর সন্তানদেরকে একত্র করলেন এবং তাদেরকে আল্লাহর এ হুকুম শুনালেন যে, যারা এ শিরকের মহাপাপে লিপ্ত হয়েছে তাদেরকে হত্যা করতে হবে এবং প্রত্যেক মু’মিন নিজ হাতে নিজের যেসব ভাই, সাথী ও প্রতিবেশী গো-বৎস পূজায় লিপ্ত হয়েছিল তাদেরকে হত্যা করবে। এভাবে সেদিন তিন হাজার লোক নিহত হলো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হযরত হারুণকে কেন ছেড়ে দেয়া হলো? যদি তিনিই এ অপরাধের মূল উদগাতা ও স্রষ্টা হয়ে থাকেন তাহলে তাকে এ গণহত্যা থেকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা হলো? লেবীর সন্তানরা কি তাহলে একথা বলতো না যে, হে মূসা! আমাদের তো হুকুম দিচ্ছো নিজেদের গুনাহগার ভাই, সাথী ও প্রতিবেশীদেরকে নিজেদের হাতে হত্যা করার কিন্তু নিজের ভাইয়ের গায়ে হাত উঠাচ্ছো না কেন, অথচ আসল গোনাহগার তো সে-ই ছিল? সামনের দিকে গিয়ে আরো বলা হয়েছে, মূসা সদাপ্রভুর কাছে গিয়ে আবেদন জানান, এবার বনী ইসরাঈলের গোনাহ মাফ করে দেন, নয়তো তোমার কিতাব থেকে আমার নাম কেটে দাও। এ কথায় আল্লাহ জবাব দেন,”যে ব্যক্তি আমার বিরুদ্ধে গোনাহ করেছে আমি তার নাম আমার কিতাব থেকে মুছে ফেলবো।” কিন্তু আমরা দেখছি, হযরত হারুণের নাম মুছে ফেলা হয়নি। বরং তার পরিবর্তে তাঁকে ও তাঁর সন্তান সন্ততিদেরকে বনী ইসরাঈলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পদ অর্থাৎ নবী লেবীর নেতৃত্বও বায়তুল মাকদিসের সেবায়েতের দায়িত্ব দান করা হয়। (গণনা পুস্তক ১৮: ১-৭) বাইবেলের এ আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য কি তার নিজের পূর্ববর্তী বর্ণনার প্রতিবাদ ও কুরআনের বর্ণনার সত্যতা প্রমাণ করছে না?