لَعَلِّىٓ أَعْمَلُ صَـٰلِحًۭا فِيمَا تَرَكْتُ ۚ كَلَّآ ۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَآئِلُهَا ۖ وَمِن وَرَآئِهِم بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ
আশা করি এখন আমি সৎকাজ করবো। ৯০ কখনোই নয়, ৯১ এটা তার প্রলাপ ছাড়া আর কিছু আর নয়। ৯২ এখন এ মৃতদের পেছনে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে একটি অন্তরবর্তীকালীন যুগ—বরযখ যা পরবর্তী জীবনের দিন পর্যন্ত থাকবে। ৯৩
৯০
কুরআন মজীদের বহু জায়গায় এ বক্তব্যটি উচ্চারিত হয়েছে। অপরাধীরা মৃত্যুর সীমানায় প্রবেশ করার সময় থেকে নিয়ে আখেরাতে প্রবেশ করে জাহান্নামে দাখিল হওয়া পর্যন্ত বরং তার পরও বারবার এ আবেদনই করতে থাকবেঃ আমাদের আর একবার মাত্র দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হোক। এখন আমরা তাওবা করছি, আর কখনো নাফরমানি করবো না, এবার আমরা সোজা পথে চলবো। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, সূরা আল আন’আম, ২৭ ও ২৮; আল আ’রাফ, ৫৩; ইবরাহীম ৪৪ ও ৪৫; আল মু’মিনূন, ১০৫ থেকে ১১৫; আশ শু’আরা, ১০২; আস সাজ্দাহ, ১২ থেকে ১৪; ফাতের, ৩৭; আয যুমার, ৫৮ ও ৫৯; আল মু’মিন, ১০ থেকে ১২ ও আশ্ শূরা, ৪৪ আয়াত এবং এ সঙ্গে টীকাগুলোও)।
৯১
অর্থাৎ ফেরত পাঠানো হবে না। নতুন করে কাজ শুরু করার জন্য তাকে আর দ্বিতীয় কোন সুযোগ দেয়া যেতে পারে না। এর কারণ হচ্ছে, মানুষকে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করার জন্য পুনরায় যদি এ দুনিয়ায় ফেরত পাঠানো হয় তাহলে অনিবার্যভাবে দু’টি অবস্থার মধ্য থেকে একটি অবলম্বন করতে হবে। মৃত্যুর পর সে যা কিছু করেছে সেসব তার স্মৃতি ও চেতনায় সংরক্ষিত করে রাখতে হবে। অথবা এসব কিছু নিশ্চিহ্ন করে দিয়েপ্রথমবার যেমন স্মৃতির কোঠা শূন্য করে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল ঠিক তেমনি অবস্থায় আবার তাকে সৃষ্টি করা হবে। উল্লেখিত প্রথম অবস্থায় পরীক্ষার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ এ দুনিয়ায় মানুষ সত্যকে প্রত্যক্ষ না করে নিজেই বুদ্ধি-বিবেকেরসাহায্যে সত্যকে জেনে তাকে মেনে নেয় কিনা এবং আনুগত্য ও অবাধ্যতা করার স্বাধীনতা লাভ করা সত্ত্বেও এ দু’টি পথের মধ্য থেকে কোন্টি অবলম্বন করে-এরি ভিত্তিতেই হচ্ছে তার পরীক্ষা। এখন যদি তাকে সত্য দেখিয়েও দেয়া হয় এবং গোনাহের পরিণাম বাস্তবে দেখিয়ে দিয়ে গোনাহকে নির্বাচন করার পথই তার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে এরপর তাকেপরীক্ষাগৃহে পাঠানোই অর্থহীন হয়ে যায়। এরপর কে ঈমান আনবে না এবং কে আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবে? আর দ্বিতীয় অবস্থাটি সম্পর্কে বলা যায় যে, এটি পরীক্ষিতকে আবার পরীক্ষা করার মতো অবস্থা। যে ব্যক্তি একবার এ পরীক্ষায়অকৃতকার্য হয়েছে তাকে আবার সে একই ধরনের আর একটি পরীক্ষায় পাঠানো নিরর্থক। কারণ সে আবার সেই আগের মতোই করবে। (আরো বেশী ব্যাখ্যা জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, সূরা আল বাকারাহ, ২২৮; আল আন’আম, ৬, ১৩৯ ও ১৪০ এবং ইউনুস, ২৬ টীকা)।
৯২
এ অনুবাদও হতে পারে, “এ তো এখন সে বলবেই”। এর অর্থ হচ্ছে, তার এ কথা ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য নয়। সর্বনাশ হবার পর এখন সে একথা বলবে না তো আর কি বলবে। এ নিছক কথার কথা। ফিরে আসবে যখন তখন আবার সেসব কিছু করবে যা আগে করে এসেছে। কাজেই তাকে প্রলাপ বকতে দাও ফেরার দরজা তার জন্য খোলা যেতে পারে না।
৯৩
“বরযখ”-----শব্দটি ফার্সী “পরদা”-----শব্দটি আরবীকরণ। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, এখন তাদের ও দুনিয়ার মধ্যে রয়েছে একটি প্রতিবন্ধক। এটি তাদেরকে দুনিয়ায় ফিরে যেতে দেবে না এবং কিয়ামত পর্যন্ততারা দুনিয়া ও আখেরাতের মাঝখানের এ যবনিকার আড়ালে অবস্থান করবে।