এ আয়াতের দু’টি দিক। বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক। বাহ্যিক দিক থেকে আয়াতটি মুশরিকদের বলছে, যদি তোমরা পৃথিবীতে পশুর মতো জীবন ধারণ না করতে এবং কিছুটা বুদ্ধি-বিবেচনা ও সচেতনতার সাথে এগিয়ে চলতে, তাহলে প্রতিনিয়ত তোমরা এই যে ছায়া দেখতে পাচ্ছো এটিই তোমাদের এ শিক্ষা দেবার জন্য যথেষ্ট ছিল যে, নবী তোমাদের যে তাওহীদের শিক্ষা দিচ্ছেন তা যথার্থই সত্য ও সঠিক। তোমাদের সারা জীবন এ ছায়ার জোয়ার-ভাটার সাথে বিজড়িত। যদি চিরন্তন ছায়া হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীতে কোন প্রাণী এমন কি উদ্ভিদও জীবিত থাকতে পারে না। কারণ সূর্যের আলো ও উত্তাপের উপর তাদের সবার জীবন নির্ভর করে। ছায়া যদি একেবারেই না থাকে তাহলেও জীবন অসাধ্য। কারণ সর্বক্ষণ সূর্যের মুখোমুখি থাকার এবং তার রশ্মি থেকে কোন আড়াল না পাওয়ার ফলে কোন প্রাণী এবং কোন উদ্ভিদও বেশীক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। বরং পানিও উধাও হয়ে যাবে। রোদ ও ছায়ার মধ্যে যদি হঠাৎ করে পরিবর্তন হতে থাকে তাহলে পৃথিবীর সৃষ্টিকূল পরিবেশের এসব আকস্মিক পরিবর্তন বেশীক্ষণ বরদাশত করতে পারবে না। কিন্তু একজন মহাজ্ঞানী স্রষ্টা ও সর্বময় ক্ষমতাসম্পন্ন সত্তা পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যে এমন একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত করে রেখেছেন যার ফলে স্থায়ীভাবে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ধীরে ধীরে ছায়া পড়ে ও হ্রাস-বৃদ্ধি হয় এবং রোদ ক্রমান্বয়ে বের হয়ে আসে এবং বাড়তে ও কমতে থাকে। এ ধরনের বিজ্ঞ ব্যবস্থাপনা কোন অন্ধ প্রকৃতির হাতে আপনা আপনি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। অথবা বহুসংখ্যক ক্ষমতাসম্পন্ন প্রভুও একে প্রতিষ্ঠিত করে এভাবে একটি ধারাবাহিক নিয়ম-শৃংখলা সহকারে চালিয়ে আসতে পারে না।
কিন্তু এসব বাহ্যিক শব্দের অভ্যন্তর থেকে আর একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিতও পাওয়া যায়। সেটি হচ্ছে, বর্তমানে এই যে কুফরী ও শিরকের অজ্ঞতার ছায়া চতুর্দিকে ছেয়ে আছে এটা কোন স্থায়ী জিনিস নয়। কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আকারে হেদায়াতের সূর্য উদিত হয়েছে। বাহ্যত ছায়া বিস্তার লাভ করেছে দূর দূরান্তে। কিন্তু এ সূর্য যতই উপরে উঠতে থাকবে ততই ছায়া সংকুচিত হতে থাকবে। তবে একটু সবরের প্রয়োজন। আল্লাহর আইন কখনো আকস্মিক পরিবর্তন আনে না। বস্তুজগতে যেমন সূর্য ধীরে ধীরে উপরে উঠে এবং ছায়া ধীরে ধীরে সংকুচিত হয় ঠিক তেমনি চিন্তা ও নৈতিকতার জগতেও হেদায়াতের সূর্যের উত্থান ও ভ্রষ্টতার ছায়ার পতন ধীরে ধীরেই হবে।