আল-ফুরকান

৭৭ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
২১ ) যারা আমার সামনে হাজির হবার আশা করে না তারা বলে, “কেন আমাদের কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয় না? ৩৩ অথবা আমরা আমাদের রবকে দেখি না কেন? ৩৪ বড়ই অহংকার করে তারা নিজেদের মনে মনে ৩৫ এবং সীমা অতিক্রম করে গেছে তারা অবাধ্যতায়।
وَقَالَ ٱلَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَآءَنَا لَوْلَآ أُنزِلَ عَلَيْنَا ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ أَوْ نَرَىٰ رَبَّنَا لَقَدِ ٱسْتَكْبَرُوا۟ فِىٓ أَنفُسِهِمْ وَعَتَوْ عُتُوًّا كَبِيرًا ٢١
২২ ) যেদিন তারা ফেরেশতাদের দেখবে সেটা অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদের দিন হবে না। ৩৬ চিৎকার করে উঠবে তারা, “হে আল্লাহ! বাচাও, বাচাও”
يَوْمَ يَرَوْنَ ٱلْمَلَٰٓئِكَةَ لَا بُشْرَىٰ يَوْمَئِذٍ لِّلْمُجْرِمِينَ وَيَقُولُونَ حِجْرًا مَّحْجُورًا ٢٢
২৩ ) এবং তাদের সমস্ত কৃতকর্ম নিয়ে আমি ধূলোর মতো উড়িয়ে দেবো। ৩৭
وَقَدِمْنَآ إِلَىٰ مَا عَمِلُوا۟ مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَٰهُ هَبَآءً مَّنثُورًا ٢٣
২৪ ) সেদিন যারা জান্নাতের অধিকারী হবে তারাই উৎকৃষ্ট স্থানে অবস্থান করবে এবং দুপুর কাটাবার জন্য চমৎকার জায়গা পাবে। ৩৮
أَصْحَٰبُ ٱلْجَنَّةِ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ مُّسْتَقَرًّا وَأَحْسَنُ مَقِيلًا ٢٤
২৫ ) আকাশ ফুঁড়ে একটি মেঘমালার সেদিন উদয় হবে এবং ফেরেশতাদের দলে দলে নামিয়ে দেয়া হবে।
وَيَوْمَ تَشَقَّقُ ٱلسَّمَآءُ بِٱلْغَمَٰمِ وَنُزِّلَ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ تَنزِيلًا ٢٥
২৬ ) সেদিন প্রকৃত রাজত্ব হবে শুধুমাত্র দয়াময়ের ৩৯ এবং সেটি হবে অস্বীকারকারীদের জন্য বড়ই কঠিন দিন।
ٱلْمُلْكُ يَوْمَئِذٍ ٱلْحَقُّ لِلرَّحْمَٰنِ وَكَانَ يَوْمًا عَلَى ٱلْكَٰفِرِينَ عَسِيرًا ٢٦
২৭ ) জালেমরা সেদিন নিজেদের হাত কামড়াতে থাকবে এবং বলতে থাকবে, “হায়! যদি আমি রসুলের সহযোগী হতাম।
وَيَوْمَ يَعَضُّ ٱلظَّالِمُ عَلَىٰ يَدَيْهِ يَقُولُ يَٰلَيْتَنِى ٱتَّخَذْتُ مَعَ ٱلرَّسُولِ سَبِيلًا ٢٧
২৮ ) হায়! আমার দুর্ভাগ্য, হায়! যদি আমি অমুক লোককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম।
يَٰوَيْلَتَىٰ لَيْتَنِى لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا ٢٨
২৯ ) তার প্ররোচনার কারণে আমার কাছে আসা উপদেশ আমি মানিনি। মানুষের জন্য শয়তান বড়ই বিশ্বাসঘাতক প্রমাণিত হয়েছে।” ৪০
لَّقَدْ أَضَلَّنِى عَنِ ٱلذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَآءَنِى وَكَانَ ٱلشَّيْطَٰنُ لِلْإِنسَٰنِ خَذُولًا ٢٩
৩০ ) আর রসূল বলবে, “হে আমার রব! আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা এ কুরআনকে হাসি-ঠাট্টার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল।” ৪১
وَقَالَ ٱلرَّسُولُ يَٰرَبِّ إِنَّ قَوْمِى ٱتَّخَذُوا۟ هَٰذَا ٱلْقُرْءَانَ مَهْجُورًا ٣٠
৩৩.
অর্থাৎ যদি সত্যিই আল্লাহর ইচ্ছা হয়ে থাকে আমাদের কাছে তাঁর পয়গাম পৌঁছাবেন, তাহলে একজন নবীকে মাধ্যমে পরিণত করে তার কাছে ফেরেশতা পাঠানো যথেষ্ট নয় বরং প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে একজন করে ফেরেশতা পাঠানো উচিত। ফেরেশতা এসে বলবে, তোমার রব তোমার কাছে এ পয়গাম পাঠাচ্ছেন। অথবা ফেরেশতাদের একটি প্রতিনিধদল প্রকাশ্যে জনসমাবেশে সবার সামনে এসে যাবে এবং সবাইকে আল্লাহর পয়গাম শুনিয়ে দেবে। সূরা আন’আমেও তাদের এ আপত্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে এভাবেঃ

وَإِذَا جَاءَتْهُمْ آيَةٌ قَالُوا لَنْ نُؤْمِنَ حَتَّى نُؤْتَى مِثْلَ مَا أُوتِيَ رُسُلُ اللَّهِ اللَّهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ

“যখন কোন আয়াত তাদের সামনে পেশ হতো, তারা বলতো আমরা কখনো মেনে নেবো না যতক্ষণ না আমাদের সেসব কিছু দেয়া হবে যা আল্লাহর রসূলদের দেয়া হয়েছে। অথচ আল্লাহই ভালো জানেন কিভাবে তাঁর পয়গাম পৌঁছাবার ব্যবস্থা করবেন।” (১২৪ আয়াত)
৩৪.
অর্থাৎ আল্লাহ‌ নিজে আসবেন এবং বলবেন, হে আমার বান্দারা! তোমাদের কাছে এ হচ্ছে আমার অনুরোধ।
৩৫.
অন্য অনুবাদ এও হতে পারেঃ “নিজেদের জ্ঞানে তারা নিজেদেরকে অনেক বড় কিছু মনে করে নিয়েছে।”
৩৬.
এ একই বিষয়বস্তু সূরা আন’আমের ৮ আয়াতে এবং সূরা হিজরের ৭-৮ এবং ৫১-৬৪ আয়াতে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও সূরা বনী ইসরাঈলের ৯০ থেকে ৯৫ পর্যন্ত আয়াতেও কাফেরদের অনেকগুলো অদ্ভূত এ অভিনব দাবীর সাথে এগুলোর উল্লেখ করে তার জবাব দেয়া হয়েছে।
৩৭.
ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইবরাহীম ৩৫ ও ৩৬ টীকা।
৩৮.
অর্থাৎ হাশরের ময়দানে জান্নাতের হকদার লোকদের সাথে অপরাধীদের থেকে ভিন্নতর ব্যবহার করা হবে। তাদের সম্মানের সাথে বসানো হবে। হাশরের দিনের কঠিন দুপুর কাটাবার জন্য তাদের আরাম করার জায়গা দেয়া হবে। সেদিনের সব রকমের কষ্ট ও কঠোরতা হবে অপরাধীদের জন্য। সৎকর্মশীলদের জন্য নয়। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে নবী ﷺ বলেছেন,

وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ إِنَّهُ لَيُخَفَّفُ عَلَى الْمُؤْمِنِ حَتَّى يَكُونَ أَخَفَّ عَلَيْهِ مِنْ صَلاَةٍ مَكْتُوبَةٍ يُصَلِّيهَا فِى الدُّنْيَا

“সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ আবদ্ধ, কিয়ামতের মহা ও ভয়াবহ দিবস একজন মু’মিনের জন্য অনেক সহজ করে দেয়া হবে। এমনকি তা এতই সহজ করে দেয়া হবে, যেমন একটি ফরয নামায পড়ার সময়টি হয়।” (মুসনাদে আহমদ, আবু সাঈদ খুদরী কতৃক বর্ণিত)
৩৯.
অর্থাৎ যে সমস্ত নকল রাজত্ব ও রাজ্যশাসন দুনিয়ায় মানুষকে প্রতারিত করে তা সবই খতম হয়ে যাবে। সেখানে কেবলমাত্র একটি রাজত্বই বাকি থাকবে এবং তা হবে এ বিশ্ব-জাহানের যথার্থ শাসনকর্তা আল্লাহর রাজত্ব। সূরা মু’মিনে বলা হয়েছেঃ

يَوْمَ هُمْ بَارِزُونَ لَا يَخْفَى عَلَى اللَّهِ مِنْهُمْ شَيْءٌ لِمَنِ الْمُلْكُ الْيَوْمَ لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ

“সেদিন যখন এরা সবাই প্রকাশ হয়ে যাবে, আল্লাহর কাছে এদের কোন জিনিস গোপন থাকবে না, জিজ্ঞেস করা হবে আজ রাজত্ব কার? সবদিক থেকে জবাব আসবে, একমাত্র আল্লাহর যিনি সবার উপর বিজয়ী।” (১৬ আয়াত)

হাদীসে এ বিষয়বস্তুকে আরো বেশী স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ‌ এক হাতে পৃথিবী ও অন্য হাতে আকাশ নিয়ে বলবেনঃ

أَنَا الْمَلِكُ أَنَا الدَّيَّانُ أَيْنَ مُلُوكُ الأَرْضِ؟ أَيْنَ الْجَبَّارُونَ؟ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ؟

“আমিই বাদশাহ, আমিই শাসনকর্তা। এখন সেই পৃথিবীর বাদশাহরা কোথায়? কোথায় স্বৈরাচারী একনায়কের দল? অহংকারী ক্ষমতাদর্পীরা কোথায়?” (মুসনাদে আহমদ, বুখারী, মুসলিম ও আবু দাউদে সামান্য শাব্দিক হেরফের সহকারে এ হাদীসটি উদ্ধৃত হয়েছে)।
৪০.
এটিও কাফেরদের উক্তির একটি অংশ হতে পারে। আবার এও হতে পারে যে, তাদের উক্তির উপর এটি আল্লাহর নিজের উক্তি। দ্বিতীয় অবস্থায় এর যথার্থ উপযোগী অনুবাদ হবে, “আর ঠিক সময়ে মানুষকে প্রতারণা করার জন্য শয়তান তো আছেই।”
৪১.
মূল শব্দ مَهْجُورًا ---এর কয়েকটি অর্থ হয়। যদি একে هجر থেকে গঠিত ধরা হয় তাহলে অর্থ হবে পরিত্যক্ত। অর্থাৎ তারা কুরআনের প্রতি দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে বলে মনেই করেনি, তাকে গ্রহণ করেনি এবং তার থেকে কোনভাবে প্রভাবিতও হয়নি। আর যদি একে هجر থেকে গঠিত ধরা হয় তাহলে এর দু’টি অর্থ হতে পারেঃ এক, তারা একে প্রলাপ ও অর্থহীন বাক্য মনে করেছে। দুই, তারা একে নিজেদের প্রলাপ ও অর্থহীন বাক্য প্রয়োগের লক্ষ্যস্থলে পরিণত করেছে এবং একে নানান ধরনের বাক্যবাণে বিদ্ধ করতে থেকেছে।
অনুবাদ: