وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْبَغِي لَهُ
“আমি তাঁকে কবিতা শিখাইনি এবং এটা তাঁর করার মতো কাজও নয়।” (ইয়াসিন, ৬৯)
এটি এমন একটি সত্য ছিল, যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ব্যক্তিগতভাবে জানতেন তাঁরা সবাই একথা জানতেন। নির্ভরযোগ্য হাদীসে বলা হয়েছেঃ কোন একটি কবিতাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুরোপুরি মুখস্থ ছিল না। কথাবার্তার মাঝখানে কোন কবির ভালো কবিতার চরণ তাঁর মুখে এলেও তা অনুপযোগীভাবে পড়ে যেতেন অথবা তার মধ্যে শব্দের হেরফের হয়ে যেতো। হযরত হাসান বাসরী বলেন, একবার ভাষণের মাঝখানে তিনি এক কবিতার চরণ এভাবে পড়লেনঃ
كفى بالاسلام والشيب للمرء ناهيا-
হযরত আবু বকর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! চরণটি হবে এ রকম,
كفى الشيب والاسلام للمرء ناهيا-
একবার তিনি আব্বাস ইবনে মিরদাস সুলামীকে জিজ্ঞেস করলেন, এ কবিতাটা কি তোমার?
أَتَجْعَلُ نَهْبِى وَنَهْبَ الْعُبَيْدِ وبَيْنَ وَالأَقْرَعِ وعُيَيْنَةَ আব্বাস বললেন, শেষ বাক্যাংশটি ওভাবে নয়, বরং এভাবে হবেঃ بَيْنَ عُيَيْنَةَ وَالأَقْرَعِ একথায় রসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, কিন্তু অর্থ তো উভয়ের এক।
হযরত আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞেস করা হয়, নবী ﷺ কি কখনো নিজের ভাষণের মধ্যে কবিতা ব্যবহার করতেন? তিনি বলেন, কবিতার চেয়ে বেশী তিনি কোন জিনিসকে ঘৃণা করতেন না। তবে কখনো কখনো তিনি বনী কায়েসের কবিতা পড়তেন। কিন্তু প্রথমটা শেষে এবং শেষেরটা প্রথম দিকে পড়ে ফেলতেন। হযরত আবু বকর (রা.) বলতেন, হে আল্লাহর রসূল! এভাবে নয় বরং এভাবে। তখন তিনি বলতেন, “আমি কবি নই এবং কবিতা পাঠ করা আমার কাজ নয়।” আরবের কবিতা অঙ্গনে যে ধরনের বিষয়বস্তুর সমাবেশ ঘটেছিল তা ছিল যৌন আবেদন ও অবৈধ প্রেমচর্চা অথবা শরাব পান কিংবা গোত্রীয় ঘৃণা, বিদ্বেষ ও যুদ্ধবিগ্রহ বা বংশীয় ও বর্ণগত অহংকার। কল্যাণ ও সুকৃতির কথার স্থান সেখানে অতি অল্পই ছিল। এছাড়া মিথ্যা, অতিরঞ্জন, অপবাদ, নিন্দাবাদ, অযথা প্রশংসা, আত্মগর্ব, তিরস্কার, দোষারোপ, পরিহাস ও মুশরিকী অশ্লীল পৌরানিকতা তো এ কাব্যধারার শিরায় শিরায় প্রবাহিত ছিল। তাই এ কাব্য সাহিত্য সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রায় ছিলঃ
لَأَنْ يَمْتَلِئَ جَوْفُ أَحَدِكُمْ قَيْحًا , خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمْتَلِئَ شِعْرًا
“তোমাদের কারো পেট পুঁজে ভরা থাকা কবিতায় ভরা থাকার চেয়ে ভালো। তবুও যে কবিতায় কোন ভালো কথা থাকতো তিনি তার প্রশংসা করতেন।” তাঁর উক্তি ছিলঃ امن شعره وكفر قلبه “তার কবিতা মু’মিন কিন্তু অন্তর কাফের।” একবার একজন সাহাবী একশোটা ভালো ভালো কবিতা তাঁকে শুনান এবং তিনি চলে যেতে থাকলে বলেনঃ هيه অর্থাৎ “আরো শুনাও।”