ফেরাউন ঢেঁড়া পিটিয়ে যে জনগোষ্ঠীকে সমবেত করেছিল তাদের সবার সামনে যাদুকরদের এ জবাব দু’টি কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেঃ
একঃ ফেরাউন একজন মহা মিথ্যুক, হটকারী ও প্রতারক। সে নিজে ফায়সালা করার জন্য যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলো তাতে মূসা আলাইহিস সালামের সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন বিজয়কে সোজাভাবে মেনে নেবার পরিবর্তে এখন সে সহসা একটি মিথ্যা ষড়যন্ত্রের গল্প ফেঁদে বসেছে এবং হত্যা ও শাস্তির হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক তার স্বীকৃতি আদায় করার চেষ্টা করছে। এ গল্প যদি সামান্যও সত্য হতো, তাহলে যাদুকররা হাত-পা কাটাবার ও শূলবিদ্ধ হয়ে প্রাণ দেবার জন্য এতো হন্যে হয়ে যেতো না। এ ধরণের কোন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যদি কোন রাজত্ব লাভের লোভ থেকে থাকতো, তাহলে এখন তো আর তার কোন অবকাশ নেই। কারণ রাজত্ব এখন যাদের ভাগ্যে আছে তারাই তা ভোগ করবে, এ ভাগ্যাহতরা এখন শুধুমাত্র নিহত হওয়া ও শাস্তি লাভ করার জন্য রয়ে গেছে। এ ভয়াবহ বিপদ মাথায় নিয়েও এ যাদুকরদের নিজেদের ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা পরিষ্কারভাবে একথা প্রমাণ করে যে, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ সবৈর্ব মিথ্যা। বরং এক্ষেত্রে সত্য কথা হচ্ছে, যাদুকররা নিজেদের যাদুবিদ্যায় পারদর্শী হবার কারণে যথার্থই জানতে পেরেছে যে, মূসা আলাইহিস সালাম যা কিছু দেখিয়েছেন তা কোনক্রমেই যাদু নয় বরং প্রকৃতপক্ষে তা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কুদরতের প্রকাশ।
দুইঃ এ সময় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত হাজার হাজার জনতার সামনে যে কথাটি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল সেটি ছিল এই যে, আল্লাহ রব্বুল আলামীনের প্রতি ঈমান আনার সাথে সাথেই এ যাদুকরদের চরিত্রে কেমন নৈতিক বিপ্লব সাধিত হয়ে গেলো। ইতিপূর্বে তাদের অবস্থা ছিলঃ তারা পূর্বপুরুষদের ধর্মকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিল এবং এজন্য ফেরাউনের সামনে হাত জোড় করে ইনাম চাইছিল। আর এখন মুহূর্তের মধ্যে তাদের হিম্মত ও সংকল্পের বলিষ্ঠতা এমনি উন্নত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যার ফলে সেই ফেরাউন তাদের কাছে তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিল, তার সমগ্র রাজশক্তিকে তারা হেয় প্রতিপন্ন করেছিল এবং নিজেদের ঈমানের খাতিরে মৃত্যু ও নিকৃষ্টতম শারীরিক শাস্তি বরদাশত করতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। এ নাজুক মনস্তাত্বিক পরিবেশে মিসরীয়দের মুশরীকি ধর্মের লাঞ্ছনা এবং মূসা আলাইহিস সালাম প্রচারিত সত্য দ্বীনের বলিষ্ঠ প্রচারণা সম্ভবত এর চাইতে বেশী আর হতে পারতো না।