وَوَرِثَ سُلَيْمَـٰنُ دَاوُۥدَ ۖ وَقَالَ يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ عُلِّمْنَا مَنطِقَ ٱلطَّيْرِ وَأُوتِينَا مِن كُلِّ شَىْءٍ ۖ إِنَّ هَـٰذَا لَهُوَ ٱلْفَضْلُ ٱلْمُبِينُ
আর দাউদের উত্তরাধিকারী হলো সুলাইমান ২০ এবং সে বললো, “হে লোকেরা আমাকে শেখানো হয়েছে পাখিদের ভাষা ২১ এবং আমাকে দেয়া হয়েছে সব রকমের জিনিস। ২২ অবশ্যই এ (আল্লাহর) সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।”
২০
উত্তরাধিকার বলতে ধন ও সম্পদ-সম্পত্তির উত্তরাধিকার বুঝানো হয়নি। বরং নবুওয়াত ও খিলাফতের ক্ষেত্রে হযরত দাউদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সম্পদ-সম্পত্তির উত্তরাধিকার বলতে যদি ধরে নেয়াও যায় তা স্থানান্তরিত হয়, তাহলে তা এককভাবে হযরত সুলাইমানের দিকেই স্থানান্তরিত হতে পারতো না। কারণ হযরত দাউদের অন্য সন্তানরাও ছিল। তাই এ আয়াত দ্বারা নবী (সা.) এর নিম্নোক্ত হাদীস দু’টিকে খণ্ডন করা যায় নাঃ
لَا نُوَّرَثُ مَا تَرَكْنَا صَدَقَةٌ
“আমাদের নবীদের উত্তরাধিকার বণ্টন করা হয় না, যা কিছু আমরা পরিত্যাগ করে যাই তা হয় সাদকা।” (বুখারী, খুমুস প্রদান করা ফরয অধ্যায়) এবং
إِنَّ النَّبِىَّ لاَ يُورَثُ وَإِنَّمَا مِيرَاثُهُ فِى فُقَرَاءِ الْمُسْلِمِينَ وَالْمَسَاكِينِ
“নবীর কোন উত্তরাধিকারী হয় না। যা কিছু তিনি ত্যাগ করে যান তা মুসলমানদের গরীব ও মিসকীনদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়।” (মুসনাদে আহমাদ, আবু বকর সিদ্দিক বর্ণিত ৬০ ও ৭৮ নং হাদীস)।
হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ছিলেন হযরত দাউদের (আ) সবচেয়ে ছোট ছেলে। তাঁর আসল ইবরানী নাম ছিল সোলোমোন। এটি ছিল “সলীম” শব্দের সমার্থক। খৃস্টপূর্ব ৯৬৫ অব্দে তিনি হযরদ দাউদের স্থলাভিষিক্ত হন এবং খৃঃ পূর্ব ৯২৬ পর্যন্ত প্রায় ৪০ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। (তাঁর বিস্তারিত জীবন বৃত্তান্ত জানার জন্য পড়ুন তাফহীমুল কুরআন আল হিজর, ৭ টীকা, আল আম্বিয়া ৭৪-৭৫ টীকা।) তাঁর রাজ্যসীমা সম্পর্কে আমাদের মুফাসসিরগণ অতি বর্ণনের আশ্রয় নিয়েছেন অনেক বেশী। তারা তাঁকে দুনিয়ার অনেক বিরাট অংশের শাসক হিসাবে দেখিয়েছেন। অথচ তাঁর রাজ্য কেবলমাত্র বর্তমান ফিলিস্তিন ও জর্দান রাষ্ট্র সমন্বিত ছিল এবং সিরিয়ার একটি অংশ এর অর্ন্তভুক্ত ছিল। (দেখুন বাদশাহ সুলাইমানের রাজ্যের মানচিত্র, তাফহীমুল কুরআন সূরা বনী ইসরাঈল)।
২১
হযরত সুলাইমানকে (আ) যে পশু-পাখির ভাষা শেখানো হয়েছিল, বাইবেলে সে কথা আলোচিত হয়নি। কিন্তু বনী ইসরাঈলের বর্ণনাসমূহে এর সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। (জুয়িশ ইনসাইকোপেডিয়া, ১১ খণ্ড, ৪৩৯ পৃষ্ঠা)।
২২
অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া সবকিছু আমার কাছে আছে। একথাটিকে শাব্দিক অর্থে গ্রহণ করা ঠিক নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর দেয়া ধন-দৌলত ও সাজ-সরঞ্জামের আধিক্য। সুলাইমান অহংকারে স্ফীত হয়ে একথা বলেননি। বরং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর দান ও দাক্ষিণ্যের শোকর আদায় করা।