وَجَدتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُونَ لِلشَّمْسِ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ ٱلشَّيْطَـٰنُ أَعْمَـٰلَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ ٱلسَّبِيلِ فَهُمْ لَا يَهْتَدُونَ
আমি তাকে ও তার জাতিকে আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যের সামনে সিজদা করতে দেখেছি” ৩০ ---শয়তান ৩১ তাদের কার্যাবলী তাদের জন্য শোভন করে দিয়েছে ৩২ এবং তাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে দিয়েছে এ কারণে তারা সোজা পথ পায় না।
৩০
এ থেকে জানা যায়, সেকালে এ জাতিটি সূর্য দেবতার পূজা করতো। আরবের প্রাচীন বর্ণনাগুলো থেকেও এ জাতির এ একই ধর্মের কথা জানা যায়। ইবনে ইসহাক কুলজি বিজ্ঞান (Genenalogies) অভিজ্ঞদের উক্তি উদ্ধৃত করে বলেন, সাবা জাতির প্রাচীনতম পূর্বপুরুষ হলো আবদে শামস (অর্থাৎ সূর্যের দাস বা সূর্য উপাসক) এবং উপাধি ছিল সাবা। বনী ইসরাঈলের বর্ণনাও এর সমর্থক। সেখানে বলা হয়েছে, হুদহুদ যখন সুলাইমানের (আ) পত্র নিয়ে পৌঁছে যায় সাবার রাণী তখন সূর্য দেবতার পূজা করতে যাচ্ছিলেন। হুদহুদ পথেই পত্রটি রাণীর সামনে ফেলে দেয়।
৩১
বক্তব্যের ধরন থেকে অনুমিত হয় যে, এখান থেকে শেষ প্যারা পর্যন্তকার বাক্যগুলো হুদহুদের বক্তব্যের অংশ নয়। বরং “সূর্যের সামনে সিজদা করে” পর্যন্ত তার বক্তব্য শেষ হয়ে যায়। এরপর এ উক্তিগুলো আলাহর পক্ষ থেকে করা হয়েছে এ অনুমানকে যে জিনিস শক্তিশালী করে তা হচ্ছে এ বাক্যটি وَيَعْلَمُ مَا تُخْفُونَ وَمَا تُعْلِنُونَ “আর তিনি সবকিছু জানেন, যা তোমরা লুকাও ও প্রকাশ করো।” এ শব্দগুলো থেকে প্রবল ধারণা জন্মে যে, বক্তা হুদহুদ এবং শ্রোতা সুলাইমান ও তার দরবারীগণ নন বরং বক্তা হচ্ছেন আল্লাহ এবং তিনি সম্বোধন করছেন মক্কার মুশরিকদেরকে, যাদেরকে নসিহত করার জন্যই এ কাহিনী শুনানো হচ্ছে। মুফাসসিরগণের মধ্যে রূহুল মা’আনী-এর লেখক আল্লামা আলূসীও এ অনুমানকে অগ্রগণ্য মনে করেছেন।
৩২
অর্থাৎ দুনিয়ার ধন-সম্পদ উপার্জন এবং নিজের জীবনকে অত্যধিক জাঁকালো ও বিলাসী করার যে কাজে তারা নিমগ্ন ছিল, শয়তান তাদেরকে বুঝিয়ে দেয় যে, বুদ্ধি ও চিন্তার এটিই একমাত্র নিয়োগ ক্ষেত্র এবং দৈহিক ও মানসিক শক্তিসমূহ প্রয়োগের একমাত্র উপযুক্ত স্থান। তাই এ পার্থিব জীবন ও তার আরাম-আয়েশ ছাড়া আর কোন জিনিস সম্পর্কে গুরুত্ব সহকারে চিন্তা-ভাবনা করার দরকার নেই। এ আপাতদৃষ্ট পার্থিব জীবনের পিছনে কোন বাস্তব সত্য নিহিত রয়েছে এবং তোমাদের প্রচলিত ধর্ম, নৈতিকতা, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও জীবন ব্যবস্থার ভিত্তিসমূহ এ সত্যের সাথে সামঞ্জস্য রাখে, না পুরোপুরি তার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে সেসব নিয়ে অযথা মাথা ঘামাবার দরকার নেই বলে শয়তান তাদেরকে নিশ্চিন্ত করে দেয় যে, তোমরা যখন ধন-দৌলত, শক্তি-সামর্থ্য ও শান-শওকতের দিক দিয়ে দুনিয়ায় অগ্রসর হয়েই যাচ্ছো তখন আবার তোমাদের প্রচলিত আকীদা-বিশ্বাস ও মতবাদকে সঠিক কিনা, তা চিন্তা করার প্রয়োজনই বা কি! এসব সঠিক হবার সপক্ষে তো এই একটি প্রমাণই যথেষ্ট যে, তোমরা আরামে ও নিশ্চিন্তে অর্থ ও বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলছো এবং আয়েশী জীবন যাপন করছো।