বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনা অনুসারে এ আয়াতটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা আবু তালেবের প্রসঙ্গে নাযিল হয়। তাঁর শেষ সময় উপস্থিত হলে নবী ﷺ নিজের সামর্থ্য মোতাবেক কালেমা লা-ইলাহা ইল্লালাহু-এর প্রতি তাঁর ঈমান আনবার জন্য চূড়ান্ত চেষ্টা চালান। তিনি চাচ্ছিলেন তাঁর চাচা ঈমানের মধ্য দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করুন। কিন্তু চাচা তা গ্রহণ না করে আব্দুল মুত্তালিবের অনুসৃত ধর্মের মধ্যে অবস্থান করে জীবন দেয়াকে অগ্রাধিকার দেন। এ ঘটনায় আল্লাহ বলেন إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ “তুমি যাকে ভালবাসো তাকে হিদায়াত করতে পারো না” কিন্তু মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণের পরিচিত পদ্ধতি হচ্ছে এই যে, একটি আয়াত নবীর জামানায় যে বিশেষ ঘটনা বা ব্যাপারের সাথে সামঞ্জস্যশীল হয় তাকে তাঁরা আয়াতটির শানে নুযুল বা নাযিল হওয়ার উপলক্ষ্য ও কার্যকারণ হিসেবে বর্ণনা করেন। তাই এ হাদীসটি এবং এ বিষয়বস্তু সম্বলিত তিরমিযী ও মুসনাদে আহমদ ইত্যাদিতে আবু হুরাইরা (রাঃ) ইবনে আব্বাস (রা.) ইবনে উমর (রা.) প্রমূখ সাহাবীগণ বর্ণিত অন্যান্য হাদীসগুলো থেকে অনিবার্যভাবে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় না যে, সূরা আল কাসাসের এ আয়াতটি আবু তালেবের ইন্তেকালের সময় নাযিল হয়েছিল। বরং এ থেকে শুধুমাত্র এতটুকু জানা যায় যে, এ আয়াতের বিষয়বস্তুর সত্যতা ও বাস্তবতা এ ঘটনার সময়ই সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হয়। যদিও আল্লাহর প্রত্যেকটি বান্দাকে সঠিক পথে নিয়ে আসা ছিল নবী করীমের ﷺ আন্তরিক ইচ্ছা, তথাপি কোন ব্যক্তির কুফরীর ওপর মৃত্যুবরণ করা যদি তাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি কষ্টকর হতো এবং ব্যক্তিগত ভালবাসা ও সম্পর্কের ভিত্তিতে যদি কোন ব্যক্তির হিদায়াত লাভ করার তিনি সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ও আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন তাহলে তিনি ছিলেন আবু তালেব। কিন্তু তাঁকেই হিদায়াত দান করার শক্তি যখন তিনি লাভ করলেন না তখন একথা একেবারে সুস্পষ্ট হয়ে গেলো যে, কাউকে হিদায়াত দান করা বা কাউকে হিদায়াত বঞ্চিত করা নবীর কাজ নয়। এ বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর হাতে। আর আল্লাহর কাছ থেকে এ সম্পদটি কোন আত্নীয়তা ও পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে নয় বরং মানুষের সত্যানুরাগ, সত্যপ্রীতি ও সত্যাগ্রহী মানসিকতার ভিত্তিতেই দান করা হয়।