وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰٓ أُمِّ مُوسَىٰٓ أَنْ أَرْضِعِيهِ ۖ فَإِذَا خِفْتِ عَلَيْهِ فَأَلْقِيهِ فِى ٱلْيَمِّ وَلَا تَخَافِى وَلَا تَحْزَنِىٓ ۖ إِنَّا رَآدُّوهُ إِلَيْكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ ٱلْمُرْسَلِينَ
আমি ৯ মূসার মাকে ইশারা করলাম, “একে স্তন্যদান করো, তারপর যখন এর প্রাণের ভয় করবে তখন একে দরিয়ায় ভাসিয়ে দেবে এবং কোন ভয় ও দুঃখ করবে না, তাঁকে তোমারই কাছে ফিরিয়ে আনবো এবং তাঁকে রসূলদের অন্তর্ভুক্ত করবো।” ১০
৯
মাঝখানে এ আলোচনা উহ্য রাখা হয়েছে যে, এ অবস্থায় এক ইসরাঈলী পরিবারে একটি শিশুর জন্ম হয়, সারা দুনিয়ায় যাঁকে মূসা (আঃ) বলে জানে। বাইবেল ও তালমুদের বর্ণনা অনুযায়ী এটি ছিল হযরত ইয়াকুবের পুত্র লাভীর সন্তানদের মধ্য থেকে কারোর পরিবার। ঐ গ্রন্থ দু’টিতে হযরত মূসার পিতার নাম বলা হয়েছে ঈমরাম। কুরআন একেই ইমরান শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। মূসার (আ) জন্মের পূর্বে তাদের আরো দু’টি সন্তান হয়েছিল। সবচেয়ে বড় মেয়েটির নাম ছিল মার্য়াম (Miriam)। তার আলোচনা সামনের দিকে আসছে। তার ছোট ছিল হযরত হারুন। সম্ভবত বনী ইসরাঈলী পরিবারে কোন পুত্র সন্তান জন্ম নিলে তাকে হত্যা করতে হবে--- এই ফেরাউনী নির্দেশনামা জারী হবার পূর্বে হযরত হারুনের জন্ম হয়েছিল। তাই তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। এরপর এ আইন জারী হয় এবং ভয়ংকর পরিবেশে তৃতীয় সন্তানের জন্ম হয়।
১০
অর্থাৎ জন্মের সাথে সাথেই সাগরে ভাসিয়ে দেয়ার হুকুম দেয়া হয়নি। বরং বলা হয়, যতক্ষণ ভয়ের কারণ না থাকে শিশুকে স্তন্য দান করতে থাকো। যখন গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে গেছে বলে মনে হবে এবং আশঙ্কা দেখা দেবে শিশুর আওয়াজ শুনে বা অন্য কোনভাবে শত্রুরা তার জন্মের কথা জানতে পারবে অথবা স্বয়ং বনী ঈসরাঈলীদের নীচ ব্যক্তি গোয়েন্দাগিরী করবে, তখন নির্ভয়ে একটি বাক্সের মধ্যে রেখে তাকে সাগরে ভাসিয়ে দেবে। বাইবেলের বর্ণনা মতে জন্মের পর তিন মাস পর্যন্ত হযরত মূসার মা তাঁকে লুকিয়ে রাখেন। তালমুদ এর উপর আরো বাড়তি খবর দিয়েছে যে, ফেরাউন সে সময় নারী গোয়েন্দা নিযুক্ত করেছিল। তারা নিজেদের সাথে ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে ইসরাঈলী পরিবারে যেতো এবং কোন না কোনভাবে তাদেরকে সেখানে কাদাঁতো। এর ফলে কোন ইসলাঈলী শিশু যদি সেখানে থাকতো তবে শিশুর কান্না শুনে সেও কাঁদতো। এই নতুন ধরণের গোয়েন্দাগিরী হযরত মূসার মাকে পেরেশান করে দেয়। তিনি নিজ পুত্রের প্রাণ বাঁচানোর জন্য জন্মের তিন মাস পরে তাঁকে দরিয়ায় ভাসিয়ে দেন। এ পর্যন্ত এ দু’টি গ্রন্থের বর্ণনা কুরআনের সাথে মিলে যায়। আর দরিয়ায় ভাসিয়ে দেবার অবস্থাও তারা ঠিক একই ধরণের বর্ণনা করেছে যা কুরআনে বলা হয়েছে। সূরা তা-হা এ বলা হয়েছে اقْذِفِيهِ فِي التَّابُوتِ فَاقْذِفِيهِ فِي الْيَمِّ “শিশুকে একটি সিন্দুকে রেখে দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও।” বাইবেল ও তালমূদ এরই সমর্থন করে। তাদের বর্ণনা হচ্ছে, হযরত মূসার মাতা নলখাগড়ার একটি ঝুড়ি বানিয়ে তার গায়ে তৈলাক্ত মাটি আর আলকাতরা লেপন করে তাদের পানি থেকে সংরক্ষিত করে। তারপর হযরত মূসাকে তার মধ্যে শায়িত করে নীল নদের মধ্যে ভাসিয়ে দেয়। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, যা কুরআনে বণর্না করা হয়েছে তার কোন উল্লেখ ইসরাঈলী বর্ণনাগুলোতে নেই। অর্থাৎ হযরত মূসার মাতা আল্লাহর ইশারায় এ কাজ করেছিলেন এবং আল্লাহ এ ব্যাপারে পূর্বেই তাকে নিশ্চয়তা দান করেছিলেন যে, এভাবে কাজ করলে শুধু তোমার পুত্রের প্রাণ রক্ষাই পাবে তাই নয় বরং আমি শিশুকে আবার তোমার কাছেই ফিরিয়ে আনবো এবং তোমার এ শিশুকে ভবিষ্যতে রসূলের মর্যাদা লাভ করবে।