إِنَّ ٱلَّذِى فَرَضَ عَلَيْكَ ٱلْقُرْءَانَ لَرَآدُّكَ إِلَىٰ مَعَادٍۢ ۚ قُل رَّبِّىٓ أَعْلَمُ مَن جَآءَ بِٱلْهُدَىٰ وَمَنْ هُوَ فِى ضَلَـٰلٍۢ مُّبِينٍۢ
হে নবী! নিশ্চিত জেনো, যিনি এ কুরআন তোমার ওপর ন্যস্ত করেছেন ১০৭ তিনি তোমাকে একটি উত্তম পরিণতিতে পৌঁছিয়ে দেবেন। ১০৮ তাদেরকে বলে দাও, “আমার রব ভালো করেই জানেন কে হিদায়াত নিয়ে এসেছে এবং কে প্রকাশ্য গোমরাহীতে লিপ্ত রয়েছে।”
১০৭
অর্থাৎ এই কুরআনকে আল্লাহর বান্দাদের কাছে পৌঁছাবার, তাদেরকে এর শিক্ষা দান করার এবং এর পথনির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ব সংস্কার করার দায়িত্ব তোমার প্রতি অর্পণ করেছেন।
১০৮
আসল শব্দ
لَرَادُّكَ إِلَى مَعَادٍ অর্থাৎ তোমাকে একটি মা’আদের দিকে পৌঁছিয়ে দেবেন। মা’আদ এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে এমন স্থান যেদিকে মানুষকে ফিরে যেতে হবে। এ শব্দটিকে অনির্দিষ্টবাচক হিসেবে ব্যবহার করার কারণে এর দ্বারা আপনা আপনি এ অর্থ বুঝানো হয় যে, এ স্থানটি বড়ই মহিমান্বিত ও মর্যাদা সম্পন্ন। কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ করেছেন জান্নাত। কিন্তু একে শুধুমাত্র জান্নাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেয়ার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। আল্লাহ শব্দটিকে যেমন ব্যাপক অর্থে বর্ণনা করেছেন তেমনি ব্যাপক অর্থে একে ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়। এর ফলে এ প্রতিশ্রুতি দুনিয়া ও আখেরাত উভয়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট হয়ে যাবে। আয়াতের পূর্ববর্তী আলোচনাও এ কথাই দাবী করে যে, একে কেবলমাত্র আখেরাতেই নয় বরং দুনিয়াতেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিরাট শান-শওকত এবং মাহাত্ন্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করার প্রতিশ্রুতি মনে করা হোক। মক্কার কাফেরদের যে উক্তি নিয়ে ৫৭ আয়াত থেকে এ পর্যন্ত লাগাতার আলোচনা চলছে তাতে তারা বলেছিল, হে মুহাম্মাদ! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তুমি নিজের সাথে আমাদেরকেও নিয়ে ডুবাতে চাও। যদি আমরা তোমার সাথে সহযোগিতা করি এবং এ ধর্ম গ্রহণ করে নিই, তাহলে আরবের সরযমীনে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। এর জবাবে আল্লাহ তাঁর নবীকে বললেন, হে নবী! যে আল্লাহ এ কুরআনের পতাকা বহন করার দায়িত্ব তোমার ওপর অর্পণ করেছেন তিনি তোমাকে ধ্বংস করে দেবেন না। বরং তিনি তোমাকে এমন উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে চান যার কল্পনাও আজ এরা করতে পারে না। আর প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ মাত্র কয়েক বছর পর নবী করীম ﷺ কে এ দুনিয়ায় এদেরই চোখের সামনে সমগ্র আরব দেশে এমন নিরংকুশ কর্তৃত্ব দান করলেন যে, তাঁকে বাঁধাদানকারী কোন শক্তিই সেখানে টিকতে পারলো না এবং তাঁর দ্বীন ছাড়া অন্য কোন দ্বীনের জন্য সেখানে কোন অবকাশই থাকলো না। আরবের ইতিহাসে এর আগে সমগ্র আরব উপদ্বীপে কোন এক ব্যক্তির একচ্ছত্র আধিপত্যের এ ধরণের কোন নজীর সৃষ্টি হয়নি, যার ফলে সারা দেশে তার কোন প্রতিদ্বন্দী থাকেনি, তার হুকুমের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করার ক্ষমতা কেউ রাখেনি এবং লোকেরা কেবল রাজনৈতিকভাবেই তার দলভূক্ত হয়নি বরং সমস্ত দ্বীনকে বিলুপ্ত করে দিয়ে সেই এক ব্যক্তি সবাইকে তার দ্বীনের অনুসারীও করে নিয়েছে।
কোন কোন মুফাসসির এ অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, সূরা কাসাসের এ আয়াতটি মক্কা থেকে মদীনায় হিজরাত করার সময় পথে নাযিল হয়েছিল। তাঁদের মতে এতে আল্লাহ তাঁর নবীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি আবার তাঁকে মক্কায় ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু প্রথমত এর শব্দাবলীর মধ্যে “মা’আদ” কে “মক্কা” অর্থে গ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই। দ্বিতীয়ত, বিষয়বস্তু ও আভ্যন্তরীন সাক্ষ্য-প্রমাণের দিক দিয়ে বিচার করলে এ সূরাটি হচ্ছে হাব্শায় হিজরাতের নিকটবর্তী সময়ের এবং এ কথা বুঝা যাচ্ছে না যে, কয়েক বছর পর মদীনায় হিজরাতের সময় পথে যদি এ আয়াতটি নাযিল হয়ে থাকে তাহলে কোন্ সম্পর্কের ভিত্তিতে এখানে এ ধারাবাহিক আলোচনার মধ্যে একে এনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, এ প্রেক্ষাপটে মক্কার দিকে নবী করীমের ﷺ ফিরে যাবার আলোচনা একেবারেই বেমানান ঠেকে। আয়াতের এ অর্থ গ্রহণ করা হলে এটা মক্কার কাফেরদের কথার জবাব হবে না বরং তাদের ওজরকে শক্তিশালী করা হবে। এর অর্থ হবে, অবশ্যই হে মক্কাবাসীরা! তোমরা ঠিকই বলছো, মুহাম্মাদ ﷺ কে এ শহর থেকে বের করে দেয়া হবে কিন্তু তিনি স্থায়ীভাবে নির্বাসিত হবেন না বরং শেষ পর্যন্ত আমি তাঁকে আবার এখানে ফিরিয়ে আনবো। এ হাদীসটি যদিও বুখারী, নাসাঈ, ইবনে জারীর ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে উদ্ধৃত করেছেন কিন্তু আসলে এটি ইবনে আব্বাসের নিজস্ব অভিমত। এটি সরাসরি রসূল ﷺ এর বক্তব্য সম্বলিত কোন মারফূ হাদীস নয় যে, একে মেনে নিতেই হবে।