এ প্রসঙ্গে আরো এতটুকু কথা জেনে রাখতে হবে যে, অসহনীয় নিপীড়ন, ক্ষতি বা মারাত্মক ভীতিজনক অবস্থায়কোন ব্যক্তির কুফরী কথা বলে নিজেকে রক্ষা করা শরীয়াতের দৃষ্টিতে জায়েয। তবে এ জন্য শর্ত হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আন্তরিকতা সহকারে ঈমানের ওপর অবিচল থাকতে হবে। কিন্তু যে আন্তরিকতা সম্পন্ন মুসলমানটি অক্ষম অবস্থায় প্রাণ বাঁচাবার জন্য কুফরীর প্রকাশ করে এবং যে সুবিধাবাদী লোকটি আদর্শ ও মতবাদ হিসেবে ইসলামকে সত্য জানে এবং সে হিসেবে তাকে মানে কিন্তু ঈমানী জীবনধারার বিপদ ও বিঘ্ন-বিপত্তি দেখে কাফেরদের সাথে হাত মিলায় তাদের দু’জনের মধ্যে ফারাকটি অনেক বড়। আপাত দৃষ্টিতে তাদের দু’জনের অবস্থা পরস্পর থেকে কিছু বেশি ভিন্ন মনে হবে না কিন্তু আসলে যে জিনিসটি তাদের মধ্যে আকাশ পাতালের ব্যবধান সৃষ্টি করে সেটি হচ্ছে এই যে, বাধ্য হয়ে কুফরীর প্রকাশকারী আন্তরিকতা সম্পন্ন মুসলমানটি কেবলমাত্র আকীদার দিক দিয়ে ইসলামের ভক্ত থাকে না বরং কার্যতও তার আন্তরিক সহানুভূতি ইসলাম ও মুসলমানদের সাথেই থাকে। তাদের সাফল্যে সে খুশিহয় এবং তাদের ব্যর্থতা তাকে অস্থির করে তোলে। অক্ষম অবস্থায়ও সে মুসলমানদের সাহায্য করার কয়েকটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করে। তার ওপর ইসলামের শত্রুদের বাঁধন যখনই ঢিলে হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গেই সে মুসলমানদের সাথে যোগ দেয়, এ সুযোগের অপেক্ষাই সে থাকে। পক্ষান্তরে সুযোগ সন্ধানী লোক যখনই দেখে ইসলামের পথ কঠিন হয়ে গেছে এবং খুব ভালভাবে মাপজোক করে দেখে নেয়, ইসলামের সহযোগী হবার ক্ষতি কাফেরদের সাথে সহযোগিতা করার লাভের চেয়ে বেশি তখনই সে নিছক নিরাপত্তা ও লাভের খাতিরে ইসলাম ও মুসলমানদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে। নিজের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষে তাদের জন্য এমন কোনো কাজ করতে সে পিছপা ও হয় না যা ইসলামের মারাত্মক বিরোধী এবং মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কিন্তু এই সাথে হয়তো কোন সময় ইসলামের বিজয় সাধিত হতে পারে, এ সম্ভাবনার দিক থেকেও সে একেবারে চোখ বন্ধ করে রাখে না। তাই যখনই মুসলমানদের সাথে কথা বলার সুযোগ হয় তখনই সে তাদের আদর্শকে সত্য বলে মেনে নেবার, তাদের সামনে নিজের ঈমানের অঙ্গীকার করে এবং সত্যেও পথে ত্যাগ ও কুরবানীর জন্য তাদেরকে বাহবা দেবার ব্যাপারে একটুও কার্পণ্য করেন না। এ মৌখিক স্বীকৃতিকে প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করে প্রয়োজনের সময় সে তাকে কাজে লাগাতে চায়। কুরআন মাজীদে অন্য এক জায়গায় মুনাফিকদের এ বেনিয়া মানসিকতাকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ
الَّذِينَ يَتَرَبَّصُونَ بِكُمْ فَإِنْ كَانَ لَكُمْ فَتْحٌ مِنَ اللَّهِ قَالُوا أَلَمْ نَكُنْ مَعَكُمْ وَإِنْ كَانَ لِلْكَافِرِينَ نَصِيبٌ قَالُوا أَلَمْ نَسْتَحْوِذْ عَلَيْكُمْ وَنَمْنَعْكُمْ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
“এরা হচ্ছে এমন সব লোক যারা তোমাদের ব্যাপারে অপেক্ষা করছে (অর্থাৎ দেখছে, অবস্থা কোনদিকে মোড় নেয়)। যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের বিজয় হয়, তাহলে এসে বলবে, আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? আর যদি কাফেরদের পাল্লা ভারী থাকে, তাহলে তাদেরকে বলবে, আমরা কি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সক্ষম ছিলাম না এবং এরপরও তোমাদেরকে মুসলমানদের হাত থেকে বাঁচাইনি? (আন নিসাঃ১৪১)