যে পটভূমিতে এখানে এ কাহিনী বর্ণনা করা হচ্ছে তা অনুধাবন করতে হলে সূরার প্রথম দিকের আয়াতগুলোর সামনে রাখতে হবে। সেখানে একদিকে মু’মিনদেরকে বলা হয়েছে, তোমাদের আগে যেসব মু’মিন অতিক্রান্ত হয়েছে তাদেরকে আমি পরীক্ষার সম্মুখীন করেছি। অন্যদিকে জালেম কাফেরদেরকে বলা হয়েছে, তোমরা আমাকে ছাড়িয়ে চলে যাবে এবং আমার পাকড়াও থেকে বেঁচে যাবে, এ ভুল ধারণা পোষণ করো না। এ দু’টি কথা উপলব্ধি করার জন্য এ ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনা করা হচ্ছে।
হযরত নূহের বয়সের ব্যাপারে কুরআন মাজীদ ও বাইবেলের বর্ণনায় পার্থক্য রয়েছে। বাইবেল বলে তার বয়স ছিল সাড়ে ন’শ বছর। তার বয়স যখন ছ’শ বছর তখন প্লাবন আসে। এরপর তিনি আর সাড়ে তিনশো বছর জীবিত থাকেন। (আদি পুস্তক ৭: ৬, ৯: ২৮-২৯) কিন্তু কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী তার বয়স এক হাজার বছর হওয়া উচিত। কারণ সাড়ে ন’শ বছর তো হচ্ছে শুধুমাত্র নবুয়তের দায়িত্বে আসীন হবার পর থেকে নিয়ে প্লাবন শুরু হওয়া পর্যন্তকার সময়টি। এ সময়-কালটি তিনি ব্যয় করেন দ্বীনের দাওয়াত দেবার ও তার প্রচারের কাজে। একথা সুস্পষ্ট, জ্ঞান ও বুদ্ধিও ক্ষেত্রে তিনি পরিপক্কতা অর্জন করেছেন এমন এক বয়সেই তিনি নবুয়ত লাভ করেন এবং প্লাবনের পরও তিনি কিছুকাল জীবিত থেকে থাকবেন। এত দীর্ঘকাল বেঁচে থাকা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়। কিন্তু আল্লাহর এ বিশ্বে বিস্ময়কর ঘটনাবলীর অভাব নেই। যেদিকেই তাকানো যাবে তার অসীম ক্ষমতার নিদর্শনই অস্বাভাবিক ঘটনাবলীর আকারে দৃষ্টিগোচর হবে। কিছু ঘটনা ও অবস্থার প্রথমত একটি বিশেষ আকারে আত্মপ্রকাশ করে যেতে থাকাটা এমন কোন যুক্তি পেশ করে না ফলে একথা মনে করা যেতে পারে যে, অন্য কোন অস্বাভাবিক অবস্থায় ভিন্নধর্মী কোন ঘটনা আত্মপ্রকাশ করতে পারে না। এ পর্যায়ের ধারণাগুলোর ভিত ধসিয়ে দেবার জন্য বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন স্থানে এবং সৃষ্টির প্রত্যেকটি প্রজাতির মধ্যে অস্বাভাবিক অবস্থা ও ঘটনাবলীর একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। বিশেষ করে যে ব্যক্তির মনে আল্লাহর অসীম শক্তিশালী হবার সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে সে কখনো জীবন মৃত্যুও স্রষ্টা আল্লাহর পক্ষে কোন মানুষকে এক হাজার বছর বা তার চেয়ে কম-বেশি বয়স দান করা সম্ভব নয়, এ ধরনের কোন ভুল ধারণা পোষণ করতে পারে না। আসলে মানুষ নিজে চাইলেও এক মুহূর্তের জন্যও জীবিত থাকতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ চাইলে যতদিন যত বছর চান তাকে জীবিত রাখতে পারেন।