فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِۦٓ إِلَّآ أَن قَالُوا۟ ٱقْتُلُوهُ أَوْ حَرِّقُوهُ فَأَنجَىٰهُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلنَّارِ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَـَٔايَـٰتٍۢ لِّقَوْمٍۢ يُؤْمِنُونَ
তারপর ৩৭ সেই জাতির জবাব এছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, তারা বললো, “একে হত্যা করো অথবা পুড়িয়ে ফেলো।” ৩৮ শেষ পর্য্ন্ত আল্লাহ তাকে আগুন থেকে রক্ষা করেন। ৩৯ অবশ্যই এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন লোকদের জন্য যারা ঈমান আনে। ৪০
৩৭
এখান থেকে বর্ণনা আবার ইবরাহীমের কাহিনীর দিকে মোড় নিচ্ছে।
৩৮
অর্থাৎ হযরত ইবরাহীমের ন্যায়সঙ্গত যুক্তির কোন জবাব তাদের কাছে ছিল না। তাদের যদি কোন জবাব থেকে থাকে তাহলে তা এই ছিল যে, হক কথা বলছে যে কণ্ঠটি সেটি স্তব্ধ করে দাও এবং যে ব্যক্তি আমাদের ভুল আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরছে এবং তা থেকে আমাদের বিরত থাকতে বলছে তাকে জীবন্ত রেখো না। “হত্যা করো ও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারো” শব্দাবলী থেকে একথা প্রকাশিত হচ্ছে যে, সমগ্র জনতা হযরত ইবরাহীমকে মেরে ফেলার ব্যাপারে একমত ছিল তবে মেরে ফেলার পদ্ধতির ব্যাপারে ছিল বিভিন্ন মত। কিছু লোকের মত ছিল, তাকে হত্যা করা হোক। আবার কিছু লোকের মত ছিল, জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হোক, এর ফলে ভবিষ্যতে যারা এ ভূখণ্ডে হক কথা বলার পাগলামী করতে চাইবে এটা তাদের জন্য একটা শিক্ষা হয়ে থাকবে।
৩৯
এ থেকে স্বতঃষ্ফুর্তভাবে একথা প্রকাশ হয় যে, তারা শেষ পর্যন্ত হযরত ইবরাহীমকে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত করেছিল। তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এখানে শুধুমাত্র এতটুকু কথা বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ তাকে আগুনের হাত থেকে রক্ষা করেন। কিন্তু সূরা আল আম্বিয়ায় পরিষ্কার করে বলা হয়েছেঃ আল্লাহর নির্দেশে আগুন হযরত ইবরাহীমের জন্য ঠাণ্ডা ও নিরাপদ বস্তু হয়ে যায়,قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَى إِبْرَاهِيمَ “আমি বললাম, হে আগুন! ঠাণ্ডা হয়ে যাও এবং শান্তি ও নিরাপত্তা হয়ে যাও ইবরাহীমের প্রতি।” (৬৯ আয়াত) একথা বলা নিষ্প্রয়োজন, তাকে যদি আগুনের মধ্যে নিক্ষেপই না করা হয়ে থাকতো তাহলে আগুনকে ঠাণ্ডা হয়ে যাও এবং তার প্রতি শান্তি ও নিরাপত্তা হয়ে যাও এ হুকুম দেবার কোন অর্থই হয় না। এ থেকে এ কথা পরিষ্কার প্রমাণিত হয় যে, সমস্ত বস্তুর ধর্ম বা প্রকৃতি মহান আল্লাহর হুকুমের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং তিনি যখনই চান যে কোন বস্তুর ধর্ম ও বিশেষত্ব পরিবর্তন করতে পারেন। সাধারণভাবে আগুনের ধর্ম হচ্ছে জ্বালানো এবং দগ্ধীভূত হবার মতো প্রত্যেকটি জিনিসকে পুড়িয়ে ফেলা। কিন্তু আগুনের এ ধর্ম তার নিজের প্রতিষ্ঠিত নয় বরং আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত। তার এ ধর্ম আল্লাহকে এমনভাবে বেঁধে ফেলেনি যে, তিনি এর বিরুদ্ধে কোন হুকুম দিতে পারেন না। তিনি নিজে আগুনের মালিক। যে কোন সময় তিনি তাকে জ্বালাবার কাজ পরিত্যাগ করার হুকুম দিতে পারেন। যে কোন সময় নিজের এক ইঙ্গিতে তিনি অগ্নিকুণ্ডকে ফুল বাগানে পরিণত করতে পারেন। এ অস্বাভাবিক নিয়মের ব্যত্যয় তার রাজ্যে প্রতিদিন হয় না। কোন বড় রকমের তাৎপর্যবহ শিক্ষা ও প্রয়োজনের খাতিরেই হয়ে থাকে। কিন্তু নিয়মমাফিক যেসব জিনিস প্রতিদিন দেখতে আমরা অভ্যস্ত সেগুলোকে কোনক্রমেই এর স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে খাড়া করা যেতে পারে না যে, সেগুলোর মধ্যে তার শক্তি আবদ্ধ হয়ে গেছে এবং নিয়ম বিরোধী কোন ঘটনা আল্লাহর হুকুমেও সংঘটিত হতে পারে না।
৪০
এর মধ্যে ঈমানদারদের জন্য এ মর্মে নিদর্শন রয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পরিবার, বংশ, জাতি ও দেশের ধর্ম পরিত্যাগ করে যে সত্য জ্ঞানের ভিত্তিতে তিনি শিরকের অসারতা ও তাওহীদের সত্যতা জানতে পেরেছিলেন তারই অনুসরণ করেন। আবার এ মর্মেও নিদর্শন রয়েছে যে, তিনি নিজ জাতির হঠকারিতা ও কঠোর জাতীয় স্বার্থ প্রীতি ও বিদ্বেষ অগ্রাহ্য করে তাকে মিথ্যার পথ থেকে সরিয়ে আনার ও সত্য গ্রহণ করার জন্য অনবরত প্রচার কার্য চালিয়ে যেতে থাকেন। তাছাড়া এ ব্যাপারেও নিদর্শন রয়েছে যে, তিনি আগুনের ভয়াবহ শাস্তি মেনে নিতে প্রস্তুত হয়ে যান এবং সত্য ও ন্যায়ের পথ পরিহার করতে প্রস্তুত হননি। নিদর্শন এ ব্যাপারেও রয়েছে যে, মহান আল্লাহ হযরত ইবরাহীম আলাইহিম সালামকেও পরীক্ষার পুলসেরাত পার না করিয়ে ছাড়েননি। আবার এ ব্যাপারেও যে, হযরত ইবরাহীমকে আল্লাহ যে পরীক্ষার সম্মুখীন করেন তাতে তিনি সাফল্যেও সাথে উত্তীর্ণ হন, তবেই আল্লাহর সাহায্য তার জন্য আসে এবং এমন অলৌকিক পদ্ধতিতে আসে যে, জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড তার জন্য ঠাণ্ডা করে দেয়া হয়।