وَلَقَدْ فَتَنَّا ٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۖ فَلَيَعْلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ صَدَقُوا۟ وَلَيَعْلَمَنَّ ٱلْكَـٰذِبِينَ
অথচ আমি তাদের পূর্ববর্তীদের সবাইকে পরীক্ষা করে নিয়েছি, ২ আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন ৩ কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যুক।
২
অর্থাৎ তোমাদের সাথে যা কিছু হচ্ছে, তা কোন নতুন ব্যাপার নয়। ইতিহাসে হরহামেশা এমনটিই হয়ে এসেছে। যে ব্যক্তিই ঈমানের দাবী করেছে তাকে অবশ্যই পরীক্ষার অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে দগ্ধ করা হয়েছে। আর অন্যদেরকেও যখন পরীক্ষা না করে কিছু দেয়া হয়নি তখন তোমাদের এমন কি বিশেষত্ব আছে যে, কেবলমাত্র মৌখিক দাবীর ভিত্তিতেই তোমাদেরকে দেয়া হবে?
৩
মূল শব্দ হচ্ছে فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ এর শাব্দিক অনুবাদ হবে, “আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন” একথায় কেউ প্রশ্ন করতে পারে, আল্লাহ তো সত্যবাদীর সত্যবাদিতা এবং মিথ্যুকের মিথ্যাচার ভালোই জানেন, পরীক্ষা করে আবার তা জানার প্রয়োজন কেন? এর জবাব হচ্ছে, যতক্ষণ এক ব্যক্তির মধ্যে কোন জিনিসের কেবলমাত্র যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতাই থাকে, কার্যত তার প্রকাশ হয় না ততক্ষণ ইনসাফ ও ন্যায়নীতির দৃষ্টিতে সে কোন পুরস্কারবা শাস্তিও অধিকারী হতে পারে না। যেমন এক ব্যক্তির মধ্যে আমানতদার হবার যোগ্যতা আছে এবং অন্যজনের মধ্যে যোগ্যতা আছে আত্মসাৎ করার। এরা দু’জন যতক্ষণ না পরীক্ষার সম্মুখীন হয় এবং একজনের থেকে আমানতদারী এবং অন্যজনের থেকে আত্মসাতের কার্যত প্রকাশ না ঘটে ততক্ষণ নিছক নিজের অদৃশ্য জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহ একজনকে আমানতদারীর পুরস্কার দিয়ে দেবেন এবং অন্যজনকে আত্মসাতের শাস্তি দিয়ে দেবেন, এটা তার ইনসাফের বিরোধী। তাই মানুষের ভালো কাজ ও মন্দ কাজ করার আগে তাদের কর্মযোগ্যতা ও ভবিষ্যত কর্মনীতি সম্পর্কে আল্লাহর যে পূর্ব জ্ঞান আছে তা ইনসাফের দাবী পূরণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। অমুক ব্যক্তির মধ্যে চুরির প্রবণতা আছে, সে চুরি করবে অথবা করতে যাচ্ছে, এ ধরনের জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহ বিচার করেন না। বরং সে চুরি করেছে-এ জ্ঞানের ভিত্তিতে তিনি বিচার করেন। এভাবে অমুক ব্যক্তি উন্নত পর্যায়ের মু’মিন ও মুজাহিদ হতে পারে অথবা হবে এ জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহ তার ওপর অনুগ্রহ ও নিয়ামত বর্ষণ করেন না বরং অমুক ব্যক্তির নিজের কাজের মাধ্যমে তার সাচ্চা ঈমানদার হবার কথা প্রমাণ করে দিয়েছে এবং আল্লাহর পথে জীবন সংগ্রাম করে দেখিয়ে দিয়েছে-এরি ভিত্তিতে বর্ষণ করেন। তাই আমি এ আয়াতের অনুবাদ করেছি “আল্লাহ অবশ্যই দেখবেন।”