আস সাজদাহ

৩০ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
১১ ) এদেরকে বলে দাও, “মৃত্যুর যে ফেরেশতাকে তোমাদের ওপর নিযুক্ত করা হয়েছে সে তোমাদেরকে পুরোপুরি তার কবজায় নিয়ে নেবে এবং তারপর তোমাদেরকে তোমাদের রবের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে। ২১
قُلْ يَتَوَفَّىٰكُم مَّلَكُ ٱلْمَوْتِ ٱلَّذِى وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ ١١
১২ ) হায়, ২২ যদি তুমি দেখতে সে সময় যখন এ অপরাধীরা মাথা নিচু করে তাদের রবের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। (তখন তারা বলতে থাকবে) “হে আমাদের রব! আমরা ভালোভাবেই দেখে নিয়েছি ও শুনেছি, এখন আমাদের ফেরত পাঠিয়ে দাও, আমরা সৎকাজ করবো, এবার আমাদের বিশ্বাস হয়ে গেছে।”
وَلَوْ تَرَىٰٓ إِذِ ٱلْمُجْرِمُونَ نَاكِسُوا۟ رُءُوسِهِمْ عِندَ رَبِّهِمْ رَبَّنَآ أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَٱرْجِعْنَا نَعْمَلْ صَٰلِحًا إِنَّا مُوقِنُونَ ١٢
১৩ ) (জবাবে বলা হবে) “যদি আমি চাইতাম তাহলে পূর্বাহ্নেই প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার হিদায়াত দিয়ে দিতাম। ২৩ কিন্তু আমার সে কথা পূর্ণ হয়ে গেছে, যা আমি বলেছিলাম যে, আমি জাহান্নাম জ্বীন ও মানুষ দিয়ে ভরে দেবো। ২৪
وَلَوْ شِئْنَا لَءَاتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَىٰهَا وَلَٰكِنْ حَقَّ ٱلْقَوْلُ مِنِّى لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ ٱلْجِنَّةِ وَٱلنَّاسِ أَجْمَعِينَ ١٣
১৪ ) কাজেই আজকের দিনের এ সাক্ষাতকারের কথা ভুলে গিয়ে তোমরা যে কাজ করেছো এখন তার মজা ভোগ কর। ২৫ আমিও এখন তোমাদের ভুলে গিয়েছি, নিজেদের কর্মফল হিসেবে চিরন্তন আযাবের স্বাদ আস্বাদন করতে থাকো।”
فَذُوقُوا۟ بِمَا نَسِيتُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هَٰذَآ إِنَّا نَسِينَٰكُمْ وَذُوقُوا۟ عَذَابَ ٱلْخُلْدِ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ١٤
১৫ ) আমার আয়াতের প্রতি তো তারাই ঈমান আনে যাদেরকে এ আয়াত শুনিয়ে যখন উপদেশ দেয়া হয় তখন তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং নিজেদের রবের প্রশংসা সহকারে তার মহিমা ঘোষণা করে এবং অহংকার করে না। ২৬
إِنَّمَا يُؤْمِنُ بِـَٔايَٰتِنَا ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِّرُوا۟ بِهَا خَرُّوا۟ سُجَّدًا وَسَبَّحُوا۟ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ ١٥
১৬ ) তাদের পিঠ থাকে বিছানা থেকে আলাদা, নিজেদের রবকে ডাকে আশঙ্কা ও আকাংখা সহকারে ২৭ এবং যা কিছু রিযিক আমি তাদেরকে দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। ২৮
تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمْ عَنِ ٱلْمَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا وَمِمَّا رَزَقْنَٰهُمْ يُنفِقُونَ ١٦
১৭ ) তারপর কেউ জানে না তাদের কাজের পুরস্কার হিসেবে তাদের চোখের শীতলতার কি সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখা হয়েছে। ২৯
فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّآ أُخْفِىَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعْيُنٍ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ١٧
১৮ ) এটা কি কখনো হতে পারে, যে ব্যক্তি মু’মিন সে ফাসেকের মতো হয়ে যাবে? ৩০ এ দু’পক্ষ সমান হতে পারে না। ৩১
أَفَمَن كَانَ مُؤْمِنًا كَمَن كَانَ فَاسِقًا لَّا يَسْتَوُۥنَ ١٨
১৯ ) যারা ঈমান এনেছে এবং যারা সৎকাজ করেছে তাদের জন্য তো রয়েছে জান্নাতের বাসস্থান, ৩২ আপ্যায়নের জন্য তাদের কাজের প্রতিদানস্বরূপ।
أَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَلَهُمْ جَنَّٰتُ ٱلْمَأْوَىٰ نُزُلًۢا بِمَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ١٩
২০ ) আর যারা ফাসেকীর পথ অবলম্বন করেছে তাদের আবাস হচ্ছে জাহান্নাম। যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে তার মধ্যেই ঠেলে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, আস্বাদন করো এখন সেই আগুনের শাস্তির স্বাদ যাকে তোমরা মিথ্যা বলতে।
وَأَمَّا ٱلَّذِينَ فَسَقُوا۟ فَمَأْوَىٰهُمُ ٱلنَّارُ كُلَّمَآ أَرَادُوٓا۟ أَن يَخْرُجُوا۟ مِنْهَآ أُعِيدُوا۟ فِيهَا وَقِيلَ لَهُمْ ذُوقُوا۟ عَذَابَ ٱلنَّارِ ٱلَّذِى كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ٢٠
২১ .
অর্থাৎ তোমাদের সেই “আমরা” মাটিতে মিশে একাকার হয়ে যাবে না বরং তার কর্মসময় শেষ হতেই আল্লাহর মউতের ফেরেশতা আসবে এবং তাকে দেহ থেকে বের করে পুরোপুরি নিজের কবজায় নিয়ে নেবে। তাকে সম্পূর্ণত এবং একেবারে অবিকৃত ও অটুট অবস্থায় তত্ত্বাবধানে (custody) নিয়ে নেয়া হবে এবং তার রবের সামনে পেশ করা হবে।

এ সংক্ষিপ্ত আয়াতে অনেকগুলো সত্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এগুলোকে হালকা দৃষ্টিতে দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ঠিক নয়।

একঃ এখানে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, মৃত্যু এমনভাবে আসে না যেমন নাকি একটি ঘড়ি চলতে চলতে হঠাৎ দম শেষ হয়ে যাবা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। বরং এ কাজের জন্য আসলে আল্লাহ‌ একজন বিশিষ্ট ফেরেশতা নিযুক্ত করে রেখেছেন। তিনি এসে যথারীতি রূহকে ঠিক তেমনিভাবে গ্রহণ করেন যেমন একজন সরকারী আমীন (official Receiver) কোন জিনিস নিজের কবজায় নিয়ে নেয়। কুরআনের অন্যান্য স্থানে এর আরো যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে তা থেকে জানা যায়, মৃত্যু বিভাগীয় এ অফিসারের অধীনে পুরোপুরি একটি আমলা বাহিনী রয়েছে। তারা মৃত্যু দান করা, রূহকে দেহ থেকে বের করে আনা এবং তাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেবার বহুতর দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া এ আমলারা অপরাধী রূহ ও সৎ মু’মিন রূহদের সাথে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবহার করেন। (এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য সূরা নিসা, ৯৭ ; আন’আম, ৯৩ ; আন নাহল, ২৮; এবং ওয়াকি’আহ ৮৩ ও ৯৪ আয়াত দেখুন।)

দুইঃ এ থেকে একথাও জানা যায় যে, মৃত্যুর ফলে মানুষের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যায় না। বরং তার রূহ দেহ থেকে বের হয়ে সঞ্জীবিত থাকে। কুরআনের “মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদেরকে পুরোপুরি তার কবজায নিয়ে নেবে” শব্দগুলো এ সত্যটির প্রকাশ করে। কারণ কোন বিলুপ্ত জিনিসকে কবজায় নেয়া বা নিয়ন্ত্রণাধীন করা হয় না। কবজায় বা অধিকারে নিয়ে নেবার অর্থই হচ্ছে অধিকৃত জিনিস অধিকারকারীর কাছে রয়েছে।

তিনঃ এ থেকেও জানা যায় যে, মৃত্যুকালে যে জিনিসটি অধিকারে নিয়ে নেয়া হয় তা মানুষের জৈবিক জীবন (Biological life) নয় বরং তার সেই অহম (Ego) যাকে “আমরা” “তুমি”“তোমরা” শব্দাবলীর সাহায্যে চিত্রিত করা হয়। এ অহম দুনিয়ার কাজ করে যে ধরনের ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয় তার সবটুকুই পুরোপুরি (Intact) বের করে নেয়া হয়। এমনভাবে বের করে নেয়া হয় যার ফলে তার গুণাবলীতে কোনো প্রকার কমবেশি দেখা দেয় না। মৃত্যুর পরে এ জিনিসই তার রবের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। একেই পরকালে নবজন্ম ও নতুন দেহ দান করা হবে। এরই বিরূদ্ধে ‘মোকদ্দমা’ চালানো হবে। এর কাছ থেকেই হিসেব নেয়া হবে এবং একেই পুরস্কার ও শাস্তি দেয়া হবে।

২২ .
এবার মানুষের এ “অহম” যখন তার রবের কাছে ফিরে গিয়ে নিজের হিসেব দেবার জন্য তার সামনে দাঁড়াবে তখনকার অবস্থার চিত্র অংকন করা হচ্ছে।
২৩.
অর্থাৎ এভাবে সত্যের সাথে সাক্ষাত ও বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যদি লোকদেরকে পথ দেখানো আমার লক্ষ্য হতো তাহলে দুনিয়ার জীবনে এত বড় পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তোমাদের এখানে আনার কি দরকার ছিল? এ ধরনের পথের দিশা তো আমি তোমাদের কে আগেও দিতে পারতাম্‌ কিন্তু শুরু থেকেই তো তোমাদের জন্য আমার এ পরিকল্পনা ছিল না। আমি তো প্রকৃত সত্যকে দৃষ্টির অন্তরালে এবং ইন্দ্রিয়ের স্পর্শ ও অনুভবের বাইরে রেখে তোমাদের পরীক্ষা নিতে চাচ্ছিলাম। আমি দেখতে চাচ্ছিলাম, তোমরা সরাসরি তাকে আবরণমুক্ত দেখার পরিবর্তে বিশ্ব-জাহানে এবং স্বয়ং তোমাদের নিজেদের মধ্যে তার আলামতগুলো দেখে নিজের বুদ্ধির সাহায্যে তাকে চিনতে পারো কিনা, আমি নিজের নবীদের ও কিতাবসমূহের সাহায্যে এ সত্যকে চিনে নেবার ব্যাপারে তোমাদের যে সাহায্য করতে চাচ্ছি তা থেকে তোমরা ফায়দা হাসিল করছো কি না এবং সত্যকে জেনে নেবার পর নিজের প্রবৃত্তিকে এতটা নিয়ন্ত্রিত করতে পারো কিনা যার ফলে কামনা ও বাসনার দাসত্ব মুক্ত হয়ে তোমরা এ সত্যকে মেনে নেবে এবং এ অনুযায়ী নিজের জীবন ধারার সংস্কার সাধন করবে। এ পরীক্ষার সিলসিলা শুরু করায় লাভ কি? দ্বিতীয় পরীক্ষাটি যদি এমনভাবে নেয়া হয় যে, তোমরা এখানে যা কিছু শুনেছো ও দেখেছো তা যদি সব মনেই থেকে যায়, তাহলে আদতে সেটা কোন পরীক্ষাই হবে না। আর যদি আগের মতো সকল চিন্তা-ভাবনা মুক্ত করে এবং সত্যকে দৃষ্টির অগোচরে রেখে তোমাদের আবার দুনিয়ায় সৃষ্টি করা যায় এবং প্রথমবারে যেমন নেয়া হয়েছিল ঠিক তেমনিভাবে একেবারে নতুন করে তোমাদের পরীক্ষা নেয়া হয়, তাহলে বিগত পরীক্ষার তুলনায় ফলাফল কিছুই ভিন্নতর হবে না। (আরো বেশি ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমুল কুরআন, আল বাকারাহ, ২২৮; আল আন’আম, ৬ ও ১৪১; ইউনুস, ২৬ এবং আল মু’মিনুন, ৯১ টীকা।)
২৪.
মহান আল্লাহ‌ আদম সৃষ্টির সময় ইবলিসকে সম্বোধন করে যে উক্তি করেছিলেন সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সূরা সাদের শেষ রুকুতে সে সময়ের পুরো ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। ইবলিস আদমকে সিজদাহ করতে অস্বীকার করে এবং আদমের বংশধরদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের অবকাশ চায়। জবাবে আল্লাহ‌ বলেনঃ

قَالَ فَالْحَقُّ وَالْحَقَّ أَقُولُ - لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنْكَ وَمِمَّنْ تَبِعَكَ مِنْهُمْ أَجْمَعِينَ

“কাজেই এ হচ্ছে সত্য এবং আমি সত্যই বলি যে, আমি জাহান্নাম ভরে দেবো তোমার এবং মানুষদের মধ্য থেকে যারা তোমার অনুসরণ করবে তাদের দ্বারা।”

أَجْمَعِينَ শব্দটি এখানে এ অর্থে ব্যবহার করা হয়নি যে, সকল জ্বীন ও সমস্ত মানুষকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। বরং এর অর্থ হচ্ছে, শয়তানরা এবং শয়তানদের অনুসারী মানুষরা সবাই এক সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

২৫.
অর্থাৎ একদিন যে নিজের রবের সামনে যেতে হবে একথা দুনিয়ায় আয়েশ-আরামে মত্ত হয়ে একদম ভুলে গেছো।
২৬.
অন্য কথায় তারা নিজেদের বিভ্রান্ত চিন্তা পরিহার করে আল্লাহর কথা মেনে নেয়া এবং আল্লাহর বন্দেগী অবলম্বন করে তার ইবাদাত করাকে নিজেদের জন্য সম্মানহানিকর মনে করে না। আত্মম্ভরিতা তাদেরকে সত্যগ্রহণ ও রবের আনুগত্য করার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না।
২৭.
অর্থাৎ আয়েশ-আরাম করে রাত কাটাবার পরিবর্তে তারা নিজেদের রবের ইবাদাত করে। তাদের অবস্থা এমনসব দুনিয়াপূজারীদের মতো নয় যাদের দিনের পরিশ্রমের কষ্ট দূর করার জন্য রাতে নাচ-গান, শরাব পান ও খেলা তামাশার মতো আমোদ প্রমোদের প্রয়োজন হয়। এর পরিবর্তে তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, সারা দিন নিজেদের দায়িত্ব পালন করে কাজ শেষে এসে দাঁড়ায় তারা নিজেদের রবের সামনে। তাকে স্মরণ করে রাত কাটিয়ে দেয়। তার ভয়ে কাঁপতে থাকে এবং তার কাছেই নিজেদের সমস্ত আশা-আকাংখা সমর্পণ করে।

বিছানা থেকে পিঠ আলাদা রাখার মানে এ নয় যে, তারা রাতে শয়ন করে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, তারা রাতের একটি অংশ কাটায় আল্লাহর ইবাদাতের মধ্য দিয়ে।

২৮ .
রিযিক বলতে বুঝায় হালাল রিযিক। হারাম ধন-সম্পদকে আল্লাহ‌ তার প্রদত্ত সম্পদ হিসেবে বর্ণনা করেন না। কাজেই এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যা সামান্য কিছু পবিত্র রিযিক আমি দিয়েছি তা থেকেই খরচ করে। তার সীমা অতিক্রম করে নিজের খরচপাতি পুরা করার জন্য হারাম সম্পদে হাত দেয় না।
২৯.
বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী ও মুসনাদে আহমাদে বিভিন্ন সূত্রে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত এই হাদীসে কুদসীটি উদ্ধৃত হয়েছে যে, নবী (সা.) বলেছেনঃ

قُال اللَّهُ تعالى أَعْدَدْتُ لِعِبَادِىَ الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ

“আল্লাহ বলেন, আমার সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য আমি এমনসব জিনিস সংগ্রহ করে রেখেছি যা কখনো কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শোনেনি এবং কোন মানুষ কোনদিন তা কল্পনাও করতে পারে না।”

এ বিষয়বস্তু সামান্য শাব্দিক হেরফের করে হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.), হযরত মুগীরাহ ইবনে শু’বা (রা.) এবং হযরত সাহল ইবনে সা’আদ সায়েদী নবী করীম ﷺ থেকে রেওয়াযাত করেছেন এবং মুসলিম, আহমাদ, ইবনে জারীর ও তিরমিযী সহীহ সনদ সহকারে তা উদ্ধৃত করেছেন।

৩০ .
এখানে মু’মিন ও ফাসেকের দু’টি বিপরীতমুখী পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। মু’মিন বলতে এমন লোক বুঝানো হয়েছে, যে আল্লাহকে নিজের রব ও একমাত্র উপাস্য মেনে নিয়ে আল্লাহ‌ তার পয়গম্বরদের মাধ্যমে যে আইন-কানুন পাঠিয়েছেন তার আনুগত্য করে। পক্ষান্তরে ফাসেক হচ্ছে এমন এক ব্যক্তি যে ফাসেকী আনুগত্য থেকে বের হয়ে আসা বা অন্যকথায় বিদ্রোহ, বল্গাহীন স্বেচ্ছাচারী মনোবৃত্তি ও আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য সত্তার আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করে।
৩১.
অর্থাৎ দুনিয়ায় তাদের চিন্তাধারা ও জীবন পদ্ধতি এক হতে পারে না এবং আখেরাতেও তাদের সাথে আল্লাহর আচরণ এক হওয়া সম্ভব নয়।
৩২ .
অর্থাৎ সেই জান্নাতগুলো নিছক তাদের প্রমোদ উদ্যান হবে না বরং সেখানেই হবে তাদের আবাস। চিরকাল তারা সেখানে বসবাস করবে।
অনুবাদ: