لَقَدْ كَانَ لِسَبَإٍۢ فِى مَسْكَنِهِمْ ءَايَةٌۭ ۖ جَنَّتَانِ عَن يَمِينٍۢ وَشِمَالٍۢ ۖ كُلُوا۟ مِن رِّزْقِ رَبِّكُمْ وَٱشْكُرُوا۟ لَهُۥ ۚ بَلْدَةٌۭ طَيِّبَةٌۭ وَرَبٌّ غَفُورٌۭ
‘সাবা’র ২৫ জন্য তাদের নিজেদের আবাসেই ছিল একটি নিদর্শন। ২৬ দু’টি বাগান ডাইনে ও বামে। ২৭ খাও তোমাদের রবের দেয়া রিযিক থেকে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। উত্তম ও পরিচ্ছন্ন দেশ এবং ক্ষমাশীল রব।
২৫
এ বর্ণনার ধারাবাহিকতা বুঝতে হলে প্রথম রুকু’র বিষয়বস্তু সামনে রাখতে হবে। সেখানে বলা হয়েছেঃ আরবের কাফেররা আখেরাতের আগমনকে বুদ্ধি ও যুক্তি বিরোধী মনে করতো এবং যে রসূল এ আকীদা পেশ করতেন তাঁর ব্যাপারে প্রকাশ্যে বলতো যে এ ধরনের অদ্ভূত কথা যে ব্যক্তি বলে সে পাগল হতে পারে অথবা জেনে বুঝে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। এর জবাবে আল্লাহ প্রথমে কয়েকটি বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি পেশ করেন। ৭, ৮ ও ১২ টীকায় আমি এগুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছি। এরপর দ্বিতীয় রুকু’তে হযরত দাউদ ও হযরত সুলাইমানের এবং তারপর সাবার কাহিনীকে একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ধরাপৃষ্ঠে মানবজাতির নিজের জীবন বৃত্তান্তই কর্মফল বিধানের সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে--একথাটি অনুধাবন করানোই ছিল এর উদ্দেশ্য। নিজের ইতিহাস মনোযোগ সহকারে পর্যালোচনা করলে মানুষ নিজেই একথা জানতে পারে যে, এ দুনিয়া এমন কোন নৈরাজ্যময় জগত নয় যার সমগ্র কারখানাটি নিজের ইচ্ছামতো খামখেয়লীভাবে চলে। বরং এমন এক আল্লাহ এখানে শাসন কর্তৃত্ব পরিচালনা করছেন যিনি সবকিছু শুনেন এবং দেখেন। তিনি কৃতজ্ঞতার পথ অবলম্বনকারীদের সাথে এক ধরনের ব্যবহার করেন এবং অকৃতজ্ঞ ও নিয়ামত অস্বীকারকারীদের সাথে সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যবহার করেন। যে আল্লাহর রাষ্ট্র ব্যবস্থা এ ধরনের নিয়মের অধীন। তাঁর রাজ্যে পুণ্য ও পাপের পরিণাম কখনো এক হতে পারে না। যদি কেউ শিক্ষা নিতে চায় তাহলে এ ইতিহাস থেকেই এ শিক্ষা নিতে পারে। তাঁর ইনসাফ ও ন্যায় নীতির অনিবার্য দাবী হচ্ছে এই যে, এমন একটি সময় আসতেই হবে যখন সৎকাজের পূর্ণ প্রতিদান এবং অসৎকাজের পুরোপুরি বদলা দেয়া হবে।
২৬
অর্থাৎ এ বিষয়ের নিদর্শন যে, যা কিছু তারা লাভ করেছে তা কারো দান, তাদের নিজেদের উদ্ভাবন নয়। আর এ বিষয়েরও নিদর্শন যে, তাদের বন্দেগী ও ইবাদাত এবং কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসার অধিকারী হচ্ছেন এমন এক আল্লাহ যিনি তাদেরকে নিয়ামত দান করেছেন। ঐ নিয়ামত দানের ব্যাপারে যাদের কোন অংশ নেই তারা ইবাদাত ও কৃতজ্ঞতা লাভের অধিকারী নয়। আবার এ বিষয়েরও নিদর্শন যে, তাদের সম্পদ অবিনশ্বর নয় বরং এভাবে তা এসেছে ঠিক তেমনিভাবে চলে যেতেও পারে।
২৭
এর অর্থ এ নয় যে, সাবা দেশে মাত্র দু’টিই বাগান ছিল। বরং এর অর্থ হচ্ছে, সমগ্র সাবা রাজ্য শ্যামল সবুজ ক্ষেত ও বনানীতে পরিপূর্ণ ছিল। তার যে কোন জাগয়ায় দাঁড়ালে দেখা যেতো ডাইনেও বাগান এবং বাঁয়েও বাগান।