আস সাবা

৫৪ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
২১ ) তাদের ওপর ইবলিসের কোন কর্তৃত্ব ছিল না। কিন্তু যা কিছু হয়েছে তা এজন্য হয়েছে যে, আমি দেখতে চাচ্ছিলাম কে পরকাল মান্যকারী এবং কে সে ব্যাপারে সন্ধিহান। ৩৬ তোমার রব সব জিনিসের তত্ত্বাবাধায়ক। ৩৭
وَمَا كَانَ لَهُۥ عَلَيْهِم مِّن سُلْطَٰنٍ إِلَّا لِنَعْلَمَ مَن يُؤْمِنُ بِٱلْءَاخِرَةِ مِمَّنْ هُوَ مِنْهَا فِى شَكٍّ وَرَبُّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ حَفِيظٌ ٢١
২২ ) (হে নবী! ৩৮ এ মুশরিকদেরকে) বলো, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যেসব মাবুদকে তোমরা নিজেদের উপাস্য মনে করে নিয়েছ তাদেরকে ডেকে দেখো। ৩৯ তারা না আকাশে কোন অণু পরিমাণ জিনিসের মালিক, না পৃথিবীতে। আকাশ ও পৃথিবীর মালিকানায় তারা শরীকও নয়। তাদের কেউ আল্লাহর সাহায্যকারীও নয়।
قُلِ ٱدْعُوا۟ ٱلَّذِينَ زَعَمْتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِى ٱلْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِن شِرْكٍ وَمَا لَهُۥ مِنْهُم مِّن ظَهِيرٍ ٢٢
২৩ ) আর যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ‌ শাফায়াত করার অনুমতি দিয়েছেন আল্লাহর কাছে তার জন্য ছাড়া আর কারো জন্য কোন শাফায়াত উপকারী হতে পারে না। ৪০ এমনকি যখন মানুষের মন থেকে আশঙ্কা দূর হয়ে যাবে তখন তারা (সুপারিশকারীদেরকে) জিজ্ঞেস করবে, তোমাদের রব কি জবাব দিয়েছেন? তারা বলবে, ঠিক জবাব পাওয়া গেছে এবং তিনি উচ্চতম মর্যাদা সম্পন্ন ও শ্রেষ্ঠতম। ৪১
وَلَا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ عِندَهُۥٓ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُۥ حَتَّىٰٓ إِذَا فُزِّعَ عَن قُلُوبِهِمْ قَالُوا۟ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ قَالُوا۟ ٱلْحَقَّ وَهُوَ ٱلْعَلِىُّ ٱلْكَبِيرُ ٢٣
২৪ ) (হে নবী!) তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, “কে তোমাদের আকাশসমূহ ও পৃথিবী থেকে জীবিকা দান করে?” বলো, “আল্লাহ, ৪২ এখন অবশ্যই আমরা অথবা তোমরা সঠিক পথে অথবা সুস্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে নিপতিত।” ৪৩
قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ قُلِ ٱللَّهُ وَإِنَّآ أَوْ إِيَّاكُمْ لَعَلَىٰ هُدًى أَوْ فِى ضَلَٰلٍ مُّبِينٍ ٢٤
২৫ ) তাদেরকে বলো, “আমরা যে অপরাধ করেছি সেজন্য তোমাদের কোন জবাবদিহি করতে হবে না এবং তোমরা যা কিছু করছো সেজন্য আমরা জিজ্ঞাসিত হবো না।” ৪৪
قُل لَّا تُسْـَٔلُونَ عَمَّآ أَجْرَمْنَا وَلَا نُسْـَٔلُ عَمَّا تَعْمَلُونَ ٢٥
২৬ ) বলো, “আমাদের বর আমাদের একত্র করবেন, তারপর আমাদের মধ্যে ঠিকমতো ফায়সালা করে দেবেন। তিনি এমন পরাক্রমশালী শাসক যিনি সবকিছু জানেন।” ৪৫
قُلْ يَجْمَعُ بَيْنَنَا رَبُّنَا ثُمَّ يَفْتَحُ بَيْنَنَا بِٱلْحَقِّ وَهُوَ ٱلْفَتَّاحُ ٱلْعَلِيمُ ٢٦
২৭ ) তাদেরকে বলো, “আমাকে একটু দেখাও তো, কারা তারা যাদেরকে তোমরা তাঁর সাথে শরীক করে রেখেছো।” ৪৬ কখখনো না, প্রবল পরাক্রান্ত ও জ্ঞানবান তো একমাত্র আল্লাহই।
قُلْ أَرُونِىَ ٱلَّذِينَ أَلْحَقْتُم بِهِۦ شُرَكَآءَ كَلَّا بَلْ هُوَ ٱللَّهُ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ٢٧
২৮ ) আর (হে নবী!) আমি তো তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী করে পাঠিয়েছি কিন্তু বেশীর ভাগ লোক জানে না। ৪৭
وَمَآ أَرْسَلْنَٰكَ إِلَّا كَآفَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ٢٨
২৯ ) তারা তোমাকে বলে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তাহলে সেই কিয়ামতের প্রতিশ্রুতি কবে পূর্ণ হবে? ৪৮
وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَٰذَا ٱلْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِينَ ٢٩
৩০ ) বলো, তোমাদের জন্য এমন একটি মেয়াদ নির্ধারিত আছে যার আগমনের ব্যাপারে তোমরা এক মুহুর্ত বিলম্ব ও করতে পারো না আবার এক মুহুর্ত পূর্বেও তাকে আনতে পারো না। ৪৯
قُل لَّكُم مِّيعَادُ يَوْمٍ لَّا تَسْتَـْٔخِرُونَ عَنْهُ سَاعَةً وَلَا تَسْتَقْدِمُونَ ٣٠
৩৬.
অর্থাৎ এ ক্ষমতা ইবলিসের ছিল না যে তারা আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে চাচ্ছিল কিন্তু ইবলিস জোর করে তাদেরকে নাফরমানির পথে টেনে নিয়ে গেছে। আল্লাহ‌ তাকে যে শক্তি দিয়েছিলের তা কেবল এতটুকুই ছিল যে, সে তাদেরকে বিভ্রান্ত করতে এবং যারা তার পিছনে চলতে চায় তাদেরকে নিজের অনুসারী করতে পারে। যারা পরকাল মানে এবং যারা পরকালের আগমনের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে তাদের মধ্যকার পার্থক্য সুস্পষ্ট করার জন্য ইবলিসকে এ বিপথগামী করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

অন্য কথায় আল্লাহর এ বাণী এ সত্যটির সুস্পষ্ট করে তুলে ধরে যে, আখেরাত বিশ্বাস ছাড়া অন্য কোন জিনিসই এমন নেই যা এ দুনিয়ায় মানুষকে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত রাখার গ্যারান্টি দিতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি একথা না মানে যে, মৃত্যুর পর তাকে আবার জীবিত হতে হবে এবং আল্লাহর সামনে নিজের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। তাহলে সে অবশ্যই পথ ভ্রষ্ট ও কুপথগামী হবে। কারণ যে দায়িত্বানুভূতি মানুষকে সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত রাখে তা তার মধ্যে আদৌ সৃষ্টিই হতে পারবে না। তাই শয়তান মানুষকে আখেরাত থেকে গাফিল করে দেয়। এটিই তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার এবং এর সাহায্যেই সে মানুষকে নিজের ফাঁদে আটকে ফেলে। যে ব্যক্তি তার এ প্রতারণা জাল ছিন্ন করে বের হয়ে আসে সে কখনো নিজের আসল চিরন্তন জীবনের স্বার্থকে দুনিয়ার এ সাময়িক জীবনের স্বার্থে কুরবানী করে দিতে রাজি হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শয়তানের প্রতারণায় বিভ্রান্ত হয়ে আখেরাতকে অস্বীকার করে বসে অথবা কমপক্ষে সে ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ে সে কখনো এ দুনিয়ায় যে নগদ লাভ পেয়ে যাচ্ছে তা থেকে কেবলমাত্র এজন্য হাত সংকুচিত করে নিতে রাজি হবে না যে এর ফলে পরবর্তী জীবনে ক্ষতি হবার আশঙ্কা আছে। দুনিয়ায় যে ব্যক্তিই কখনো পথভ্রষ্ঠ হয়েছে তার পথভ্রষ্ঠতা এ আখেরাত অস্বীকার বা এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করার কারণেই সংঘটিত হয়েছে এবং যে-ই সঠিক পথ অবলম্বন করেছে তার সঠিক কর্মের ভিত্তি আখেরাতের প্রতি ঈমানের ওপরই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

৩৭.
কুরআন মজীদে সাবা জাতির ইতিহাসের প্রতি যে ইঙ্গিত করা হয়েছে তা অনুধাবন করতে হলে এ জাতি সম্পর্কে ইতিহাসের অন্যান্য মাধ্যম থেকে যেসব তথ্য সংগৃহীত হয়েছে সেগুলোও সামনে থাকা প্রয়োজন।

ইতিহাসের দৃষ্টিতে সাবা দক্ষিণ আরবের একটি বৃহৎ জাতির নাম। কতগুলো বড় বড় গোত্র সমন্বয়ে এ জাতিটি গড়ে উঠেছিল। ইমাম আহমাদ ইবনে জারীর, ইবনে আবী হাতেম, ইবনে আবদুল বার ও তিরমিযী রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেছেন। সাবা ছিল আরবের এক ব্যক্তির নাম। আরবে তার বংশ থেকে নিম্নোক্ত গোত্রগুলোর উদ্ভব হয়ঃ কিন্দাহ, হিময়ার, আযদ, আশ’আরীন, মাযহিজ, আনমার (এর দু’টি শাখাঃ খাস’আম ও বাজীলাহ) আমেলাহ, জুযান, লাখম ও গাসসান।

অতি প্রাচীনকাল থেকে আরবে এ জাতির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। খৃস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে উর --এর শিলালিপিতে সাবোম নামের মধ্য দিয়ে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এরপর ব্যাবিলন ও আসিরিয়ার শিলালিপিতে এবং অনুরূপভাবে বাইবেলেও ব্যাপকহারে এর উল্লেখ দেখা যায়। (দৃষ্টান্ত স্বরূপ দেখুন যাবুর ৭২: ১৫, যিরমিয় ৬৬: ২০, যিহিস্কেল ২৭: ২২ ও ৩৮: ১৩ এবং ইয়োব ৬: ১৯) গ্রীক ও রোমীয় ঐতিহাসিকবৃন্দ এবং ভূগোলবিদগণ থিয়োফ্রষ্টিসের (খৃঃ পূঃ ২৮৮) সময় থেকে খৃস্ট পরবর্তী কয়েক শো বছর পর্যন্ত অবিচ্ছিন্নভাবে এর আলোচনা করে এসেছেন।

এ জাতির আবাসভূমি ছিল আরবের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে বর্তমানে ইয়ামন নামে পরিচিত এলাকাটি। এর উত্থানকাল শুরু হয় খৃষ্টপূর্ব এগারো শত বছর থেকে। হযরত দাউদ ও হযরত সুলাইমান (আ) এর যুগে একটি ধনাঢ্য ও সম্পদশালী জাতি হিসেবে সারা দুনিয়ায় এর নাম ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে এটি ছিল একটি সূর্যোপাসক জাতি। তারপর এর রাণী যখন হযরত সুলাইমানের (৯৬৫-৯২৬ খৃঃ পূঃ) হাতে ঈমান আনেন তখন জাতির বেশীর ভাগ লোক মুসলমান হয়ে যায়। কিন্তু পরে না জানি কোন্ সময় থেকে আবার তাদের মধ্যে শিরক ও মূর্তিপূজা প্রবল হয় এবং তারা আলমাকা (চন্দ্র দেবতা), ‘আশতার (শুক্র) যাতে হামীম ও যাতে বা’দা (সূর্যদেবী), হোবস হারমতন বা হারীমত এবং এ ধরনের আরো বহু দেব-দেবীর পূজা করতে শুরু করে। আলমাকা ছিল এ জাতির সবচেয়ে বড় দেবতা। তাদের বাদশাহ নিজেকে এ দেবতার প্রতিনিধি হিসেবে আনুগত্য লাভের যোগ্য মনে করতো। ইয়ামনে এমন অসংখ্য শিলালিপি পাওয়া গেছে যা থেকে জানা যায়, সমগ্র দেশ উল্লেখিত দেবতাবৃন্দ বিশেষ করে আলমাকার মন্দিরে পরিপূর্ণ ছিল এবং প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হতো।

প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ইয়ামন থেকে প্রায় ৩ হাজার শিলালিপি উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো সাবা জাতির ইতিহাসের ওপর আলোকপাত করে। এই সঙ্গে আরবীয় ঐতিহ্য ও প্রবাদ এবং গ্রীক ও রোমীয় ইতিহাস থেকে সংগৃহীত তথ্যাবলী একত্র করলে এ জাতির একটি বিস্তারিত ইতিহাস লেখা যেতে পারে। এসব তথ্যাবলীর দৃষ্টিতে তার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ যুগগুলো নিন্মভাবে বিবৃত করা যেতে পারেঃ

একঃ খৃস্টপূর্ব ৬৫০ অব্দের পূর্ববর্তী যুগ। এ সময় সাবার রাজার উপাধি ছিল “মুকাররিবে সাবা” (مكرب سبا) । সম্ভবত এখানে مكرب শব্দটি مقرب এর সমার্থক ছিল। এভাবে এর অর্থ দাঁড়ায়ঃ এ বাদশাহ মানুষ ও খোদাদের মধ্যে নিজেকে সংযোগ মাধ্যম হিসেবে গণ্য করতেন। অথবা অন্যকথায় বলা যায়, তিনি ছিলেন পুরহিত বাদশাহ (Priest Kings) এ সময় তাঁর রাজধানী ছিল সারওয়াহ নগরীতে। মারিবের পশ্চিম দিকে একদিনের দূরত্বে অবস্থিত খারীবাহ নামক স্থানে আজো এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এ আমলে মারিবের বিখ্যাত বাঁধের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল এবং এরপর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাদশাহ এর সীমানা আরো সম্প্রসারিত করেন।

দুইঃ খৃস্টপূর্ব ৬৫০ অব্দ থেকে খৃস্টপূর্ব ১১৫ অব্দ পর্যন্ত সময়। এ সময় সাবার বাদশাহরা মুকাররিব উপাধি ত্যাগ করে মালিক (বাদশাহ) উপাধি গ্রহণ করেন। এর অর্থ হয়, রাজ্য পরিচালনায় ধর্মীয় ভাবধারার পরিবর্তে রাজনীতি ও সেকুলারিজমের রং প্রাধান্য লাভ করেছে। এ আমলে সাবার বাদশাহগণ সারওয়াহ ত্যাগ করে মারিবকে তাদের রাজধানী নগরীতে পরিণত করেন এবং এর অসাধারণ উন্নতি সাধন করেন। এ নগরটি সাগর থেকে ৩৯০০ ফুট উঁচুতে সানয়া থেকে ৬০ মাইল পূর্ব দিকে অবস্থিত ছিল। আজ পর্যন্ত এর প্রাচীন ধ্বংসাবশেষগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, এক সময় এটি ছিল দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুসভ্য জাতির কেন্দ্রভূমি।

তিনঃ ১১৫ খৃস্টপূর্বাব্দে থেকে ৩০০ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত সময়। এ সময় সাবার রাষ্ট্র ব্যবস্থায় হিময়ার গোত্র প্রাধান্য লাভ করে। এটি ছিল সাবা জাতিরই অন্তর্ভুক্ত একটি উপজাতি। অন্যান্য উপজাতিদের থেকে এদের লোকসংখ্যা ছিল অনেক বেশী। এ আমলে মারিবকে জনশুন্য করে যাইদানে রাজধানী প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এ শহরটি ছিল হিময়ার গোত্রের কেন্দ্র। পরবর্তীকালে এ শহরটি যাফার নামে আখ্যায়িত হয়। বর্তমানে ইয়েরেম শহরের কাছে একটি গোলাকার পর্বতের ওপর এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় এবং এরই কাছাকাছি এলাকায় হিময়ার নামে একটি ক্ষুদ্রাকার উপজাতির বসতি রয়েছে। একে দেখে কোন ব্যক্তি ধারণাই করতে পারবে না যে, এটি এমন একটি জাতির স্মৃতিচিহ্ন একদিন যার ডংকা নিনাদ সমগ্র বিশ্বে গুঞ্জরিত হতো। এ সময়ই রাজ্যের একটি অংশ হিসেবে ইয়ামনত ও ইয়ামনিয়াত শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় এবং ধীর ধীরে এটি আরবের দক্ষিণ পূর্ব কোণে অবস্থিত আসীর থেকে আদন (এডেন) এবং বাবুল মানদাব থেকে হাদরামাউত পর্যন্ত সমগ্র এলাকার নামে পরিণত হয়। এ সময়ই সাবা জাতির পতন শুরু হয়।

চারঃ ৩০০ খৃস্টাব্দের পর থেকে ইসলামের প্রারন্তকাল পর্যন্ত সময়। এটি ছিল সাবা জাতির ধ্বংসের সময়। এ সময় তাদের মধ্যে অনবরত গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে। বাইরের জাতিসমুহের অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে। ব্যবসা-বানিজ্য ধ্বংস হয়ে যায়। কৃষি ব্যবস্থা বরবাদ হয়ে যায়। শেষে জাতীয় স্বাধীনতারও বিলোপ ঘটে। প্রথমে যাইদানী, হিময়ারী ও হামদানীদের পারস্পরিক বিরোধ ও সংঘাতের সুযোগ গ্রহণ করে ৩৪০ থেকে ৩৭৮ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত ইয়ামনে হাবশীদের রাজত্ব চলে। তারপর স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার হয় ঠিকই কিন্তু মারিবের বিখ্যাত বাঁধে ফাটল দেখা দিতে থাকে। এমনকি শেষ পর্যন্ত ৪৫০ বা ৪৫১ খৃস্টাব্দে বাঁধ ভেঙ্গে পড়ে এবং এর ফলে যে মহাপ্লাবন হয় তার উল্লেখ কুরআন মাজীদের ওপরের আয়াতে করা হয়েছে। যদিও এরপর থেকে আবরাহার সময় পর্যন্ত অনবরত বাঁধের মেরামত কাজ চলতে থাকে তবুও যে জনবসিত একবার স্থানচ্যুত হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল তা পুনরায় আর একত্র হতে পারেনি এবং পানি সেচ ও কৃষির যে ব্যবস্থা একবার বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল তার আর পুনর্গঠন সম্ভবপর হয়নি। ৫২৩ খৃস্টাব্দে ইয়ামনের ইহুদী বাদশাহ যু-নওয়াস নাজরানের খৃস্টানদের ওপর যে জুলুম-নিপীড়ন চালায় কুরআন মজীদে আসহাবুল উত্থদুদ নামে তার উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে হাবশার (আবিসিনিয়া এবং বর্তমানে ইথিওপিয়া) খৃস্টান শাসক ইয়ামনের ওপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালান। তিনি সমগ্র দেশ জয় করে নেন। এরপর ইয়ামনের হাবশী গভর্ণর আবরাহা কা’বা শরীফের কেন্দ্রীয় গুরুত্ব খতম করার এবং আরবের সমগ্র পশ্চিম এলাকাকে রোমান-হাবশী প্রভাবাধীনে আনার জন্য ৫৭০ বা ৫৭১ খৃস্টাব্দে নবী (সা.) এর জন্মের মাত্র কিছুদিন পূর্বে মক্কা মুআযযমা আক্রমণ করে। এ অভিযানে তার সমগ্র সেনাদল যে ধ্বংসের সম্মুখীন হয় কুরআন মজীদে আসহাবুল ফীল শিরোনামে তা উল্লেখিত হয়েছে। সবশেষে ৫৭৫ খৃস্টাব্দে ইরানীরা ইয়ামন দখল করে ৬২৮ খৃস্টাব্দে ইরানী গভর্ণর বাযান --এর ইসলাম গ্রহণের পর এ দখল দারিত্বের অবসান ঘটে।

সাবা জাতির উত্থান মূলত দুইটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এক, কৃষি এবং দুই, ব্যবসায়। কৃষিকে তারা পানি সেচের একটি সর্বোত্তম ব্যবস্থার মাধ্যমে উন্নত করে। প্রাচীন যুগে ব্যবিলন ছাড়া আর কোথাও এর সমপর্যায়ের পানি সেচ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। সে দেশটি প্রাকৃতিক নদী সম্পদে সমৃদ্ধ ছিল না। বর্ষা কালে পাহাড় থেকে পানির ঝরণা প্রবাহিত হতো। সারা দেশে এ ঝরণাগুলোতে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ বেঁধে তারা কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করতো। তারপর এ হ্রদগুলো থেকে খাল কেটে সারা দেশে এমনভাবে পানি সেচের ব্যবস্থা গড়ে তুলে ছিল যাকে কুরআন মজীদের বর্ণনা মতে, যেদিকে তাকাও সেদিকেই কেবল বাগ-বগিচা ও সবুজ-শ্যামল গাছ-গাছালি দেখা যেত। এ সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে সবচেয়ে বড় জলধারাটি মারিব নগরীর নিকটবর্তী বালক পাহাড়ের মধ্যস্থলের উপত্যকায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহ দৃষ্টি যখন তাদের ওপর থেকে সরে গেলো তখন পঞ্চম শতকের মাঝামাঝি সময়ে এ বিশাল বাঁধটি ভেঙে গেলো। এ সময় এ থেকে যে বন্যা সৃষ্টি হলো তা পথের বাঁধগুলো একের পর এক ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে চললো, এমনকি শেষ পর্যন্ত দেশের সমগ্র পানি সেচ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেলো এবং এরপর আর কোন ভাবেই এ ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা গেলো না।

ব্যবসায়ের জন্য এ জাতিকে আল্লাহ‌ সর্বোত্তম ভৌগলিক স্থান দান করেছিলেন। তারা এর পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে। এক হাজার বছরের বেশী সময় পর্যন্ত এ জাতিটিই পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ব্যবসায়ের সংযোগ মাধ্যমের স্থান দখল করে থাকে। একদিকে তাদের বন্দরে চীনের রেশম, ইন্দোনেশিয়া ও মালাবারের গরম মশলা, হিন্দুস্থানের কাপড় ও তলোয়ার, পূর্ব আফ্রিকার যংগী দাস, বানর, উটপাখির পালক ও হাতির দাঁত পৌঁছে যেতো এবং অন্যদিকে তারা এ জিনিসগুলোকে মিসর ও সিরিয়ার বাজারে পৌঁছিয়ে দিতো। সেখান থেকে সেগুলো গ্রীস ও রোমে চলে যেতো। এছাড়াও তাদের নিজেদের এলাকায়ও উৎপন্ন হতো লোবান, চন্দন কাঠ, আম্বর, মিশক, মুর, কারফা, কাসবুখ, যারীরাহ, সালীখাহ ও অন্যান্য সুগন্ধি দ্রব্যাদি বিপুল পরিমাণে। মিসর, সিরিয়া, গ্রীস ও রোমের লোকেরা এগুলো লুফে নিতো।

দু'টি বড় বড় পথে এ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য চলতো। একটি ছিল সমুদ্রপথ এবং অন্যটি স্থলপথ। হাজার বছর পর্যন্ত সমুদ্রপথে ব্যবসায় ছিল সাবায়ীদের একচেটিয়া দখলে। কারণ লোহিত সাগরের মৌসুমী বায়ু প্রবাহ, ভূগর্ভস্থ পাহাড় ও নোঙ্গর করার স্থানগুলোর গোপন তথ্য একমাত্র তারাই জানতো। অন্য কোন জাতির এ ভয়াল সাগরে জাহাজ চালাবার সাহসই ছিল না। এ সামূদ্রিক পথে তারা জর্দান ও মিসরের বন্দরসমুহে নিজেদের পণ্যদ্রব্য পৌঁছেয়ে দিতো। অন্যদিকে স্থলপথ আদন (এডেন) ও হাদরামাউত থেকে মারিবে গিয়ে মিশতো এবং তারপর আবার সেখান থেকে একটি রাজপথ মক্কা, জেদ্দা, ইয়াসরিব, আলউলা, তাবুক ও আইলা হয়ে পেট্টা পর্যন্ত পৌঁছে যেতো। এরপর একটি পথ মিসরের দিকে এবং অন্য পথটি সিরিয়ার দিকে যেতো। যেমন কুরআনে বলা হয়েছে, এ স্থলপথে ইয়ামন থেকে সিরিয়া সীমান্ত পর্যন্ত অবিচ্ছিন্নভাবে সাবায়ীদের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং তাদের বাণিজ্য কাফেলা দিনরাত এ পথে যাওয়া আসা করতো। এ উপনিবেশগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর ধ্বংসাবশেষ এ এলাকায় আজও রয়ে গেছে এবং সেখানে সাবায়ী ও হিময়ারী ভাষায় লিখিত শিলালিপি পাওয়া যাচ্ছে।

খৃস্টীয় প্রথম শতকের কাছাকাছি সময়ে এ ব্যবসায়ে অধোগতি শুরু হয়। মধ্যপ্রাচ্যে গ্রীক ও তারপর রোমানদের শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পর তারা এ মর্মে শোরগোল শুরু করে দেয় যে, আরব ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইজারাদারীর কারণে প্রাচ্যের ব্যবসায় পণ্যের ইচ্ছামতো মূল্য আদায় করে নিয়ে যাচ্ছে, এ ময়দানে অগ্রবর্তী হয়ে এ বাণিজ্য আমাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে। এ উদ্দেশ্যে সর্ব প্রথম মিসরের গ্রীক বংশোদ্ভূত শাসক দ্বিতীয় বাতলিমূস (২৮৫-২৪৬ খৃঃ পূঃ) সেই প্রাচীন খালটি পুনরায় খুলে দেন, যা সতের শো বছর আগে ফেরাউন সিসুস্ত্রীস নীলনদকে লোহিত সাগরের সাথে সংযুক্ত করার জন্য এ খালটি খনন করেছিলেন। এ খালের মাধ্যমে মিসরের নৌবহর প্রথমবার লোহিত সাগরে প্রবেশ করে কিন্তু সাবায়ীদের মোকাবিলায় এ প্রচেষ্টা বেশী কার্যকর প্রমাণিত হতে পারেনি। তারপর রোমানরা যখন মিসর দখল করে তখন তারা লোহিত সাগরে অধিকতর শক্তিশালী বাণিজ্য বহর নিয়ে আসে এবং তার পশ্চাৎভাগে একটি নৌবাহিনীও জুড়ে দেয়। এ শক্তির মোকাবিলা করার ক্ষমতা সাবায়ীদের ছিল না। রোমানরা বিভিন্ন বন্দরে নিজেদের ব্যবসায়িক উপনিবেশ গড়ে তোলে সেখানে জাহাজের প্রয়োজন পূর্ণ করার ব্যবস্থা করে। যেখানে সম্ভব হয় সেখানে নিজেদের সামরিক বাহিনীও রেখে দেয়। শেষ পর্যন্ত এমন এক সময় আসে যখন এডেনের ওপর রোমানদের সামরিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সুযোগে রোমান ও হাবশী শাসকরা সাবায়ীদের মোকাবিলায় সম্মিলিতভাবে চক্রান্ত করে। এর ফলে শেষ পর্যন্ত এ জাতির স্বাধীনতা সূর্যও অস্তমিত হয়।

নৌবাণিজ্য বেদখল হয়ে যাবার পর সাবায়ীদের হাতে থেকে যায় শুধুমাত্র স্থলপথের বাণিজ্য। কিন্তু নানাবিধ কারণে ধীরে ধীরে তারও কোমর ভেঙ্গে যায়। প্রথমে নাবতীরা পেট্টা থেকে নিয়ে আল’উলা পর্যন্ত হিজায ও জর্দানের উচ্চ ভূমির সমস্ত উপনিবেশ থেকে সাবায়ীদেরকে বের করে দেয়। তারপর ১০৬ খৃস্টাব্দে রোমানরা নাবতী রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে হিজাযের সীমান্ত পর্যন্ত সিরিয়া ও জর্দানের সমস্ত এলাকা নিজেদের শক্ত হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। এরপর হাবশা ও রোম সাবায়ীদের পারস্পরিক সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে তাদের ব্যবসাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেবার জন্য সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। এ কারণে হাবশীরা বারবার ইয়ামনের ব্যাপারে নাক গলাতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সারা দেশ অধিকার করে নেয়।

এভাবে আল্লাহর ক্রোধ এ জাতিকে উন্নতির শিখর থেকে টেনে নামিয়ে এমন এক গর্তের মধ্যে নিক্ষেপ করে যেখান থেকে কোন অভিশপ্ত জাতি আর কোনদিন বের হয়ে আসতে পারেনি। এক সময় ছিল যখন তার সম্পদশালিতার কথা শুনে গ্রীক ও রোমানরা ভীষণভাবে প্রলুদ্ধ হত। অষ্ট্রাবু লিখছেনঃ তারা সোনা ও রূপার পাত্র ব্যবহার করত। তাদের গৃহের ছাদ, দেয়াল ও দরজায়ও হাতির দাঁত, সোনা, রূপা ও হীরা জহরতের কারূকাজে পরিপূর্ণ থাকতো। প্লিনি লিখেছেনঃ রোম ও পারস্যের সম্পদ তাদের দিকে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। তারা তৎকালীন দুনিয়ার সবচেয়ে ধনাঢ্য ও সম্পদশালী জাতি। তাদের সবুজ-শ্যামল দেশ বাগ-বাগিচা, ক্ষেত-খামার ও গবাদি পশুতে পরিপূর্ণ। আর্টি মেড্রোস বলেনঃ তারা বিলাসীতার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। জ্বালানী কাঠের পরিবর্তে তারা দারুচিনি, চন্দন ও অন্যান্য সুগন্ধি কাঁঠ ইন্ধন হিসেবে ব্যবহার করে। অনুরূপভাবে অন্যান্য গ্রীক ঐতিহাসিকগণ বর্ণনা করেন, তাদের এলাকার সমুদ্রোপকূল অতিক্রমকারী বিদেশী জাহাজগুলোতেও খোশবুর ছোঁয়াচ পৌঁছে যেতো। তারাই ইতিহাসে প্রথমবার সান’আর উচ্চ পার্বত্য স্থানসমূহে আকাশ ছোঁয়া (Skyscraper) ইমারত নির্মাণ করে। গুমদান প্রাসাদ নামে এগুলো দীর্ঘকাল ধরে প্রসিদ্ধ থাকে। আরব ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী এগুলো ছিল ২০ তলা বিশিষ্ট ইমারত এবং প্রত্যেকটি তলার উচ্চতা ছিল ৩৬ ফুট। আল্লাহর অনুগ্রহ যতদিন তাদের সহযোগী ছিল ততদিন এসব কিছু ছিল। শেষে যখন তারা চরমভাবে অনুগ্রহ অস্বীকার করার এবং নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হবার পর্যায়ে পৌঁছে গেল তখন মহান সর্বশক্তিমান রবের অনুগ্রহ দৃষ্টি তাদের ওপর থেকে চিরকালের জন্য সরে যায় এবং তাদের নাম নিশানা পর্যন্তও মুছে যায়।

৩৮.
আগের দুই রুকু’তে আখেরাত সম্পর্কে মুশরিকদের ভুল ধারণার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছিল। এবার শিরক খণ্ডন করার দিকে আলোচনার মোড় ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
৩৯.
অর্থাৎ এখনই তোমরা দাউদ ও সুলাইমান (আ) এর সাবা জাতির আলোচনায় যেমন শুনলে সেভাবেই আল্লাহ‌ ব্যক্তি, জাতি ও রাজ্যের ভাগ্য ভাংগা-গড়া করেন। এখন তোমাদের বানোয়াট উপাস্যদেরকে ডেকে দেখে নাও। তারাও কি কারো দুর্ভাগ্যকে সৌভাগ্যে এবং সৌভাগ্যকে দুর্ভাগ্যে রূপান্তরিত করার ক্ষমতা রাখে?
৪০.
অর্থাৎ কারো নিজে মালিক হয়ে বসা, মালিকানায় শরীক হওয়া অথবা আল্লাহর সাহায্যকারী হওয়া তো দূরের কথা সমগ্র বিশ্ব-জাহানে এমন কোন সত্তা নেই যে আল্লাহর সামনে কারো পক্ষে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সুপারিশ পর্যন্ত করতে পারে। তোমরা এই ভুল ধারণা নিয়ে বসে রয়েছো যে, আল্লাহর এমন কিছু প্রিয়জন আছে অথবা আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বাধীনে এমন কিছু শক্তিশালী বান্দা আছে যারা একবার বেঁকে বসলে আল্লাহকে তাদের সুপারিশ মানতেই হবে। অথচ সেখানে অবস্থা হচ্ছে এই যে, অনুমতি ছাড়া কেউ মুখ খোলার সাহসই করতে পারে না। যে অনুমতি লাভ করবে একমাত্র সে-ই কিছু নিবেদন করতে পারবে। আর যার পক্ষে সুপারিশ করার অনুমতি পাওয়া যাবে একমাত্র তার স্বপক্ষেই আবেদন নিবেদন করা যাবে। (সুপারিশের ইসলামী বিশ্বাস এবং সুপারিশের মুশরিকী বিশ্বাসের মধ্যকার পার্থক্য অনুধাবন করার জন্য তাফহীমুল কুরআন সূরা ইউনুস, ৫ ও ২৩; সূরা হূদ, ৮৪ ও ১০৬; আন নাহল, ৬৪ ও ৭৯ ; সূরা তা-হা, ৮৬; আর আম্বিয়া, ২৭ এবং আল হাজ্জ ১২৫ টীকা দেখুন)।
৪১.
কিয়ামতের দিন কোন সুপারিশকারী যখন কারো পক্ষে সুপারিশ করার অনুমতি চাইবে তখনকার চিত্র এখানে তুলে ধরা হয়েছে। সে চিত্রে আমাদের সামনে যে অবস্থা ফুটে উঠছে তা হচ্ছে এই যে, অনুমতি চাওয়ার আবেদন পেশ করার পর সুপারিশকারী ও যার পক্ষে সুপারিশ করা হবে তারা দু’জনই অত্যন্ত অস্থিরভাবে ভীতি ও উদ্বেগের সাথে জবাবের জন্য প্রতীক্ষারত। শেষ পর্যন্ত যখন ওপর থেকে অনুমতি এসে যায় এবং সুপারিশকারীর চেহারা দেখে যার পক্ষে সুপারিশ করা হবে সে ব্যাপারটা আর উদ্বেগজনক নয় বলে অনুমান করতে থাকে তখন তার ধড়ে যেন প্রান ফিরে আসে। সে এগিয়ে গিয়ে সুপারিশকারীকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, “কি জবাব এসেছে?” সুপারিশকারী বলে, “ঠিক আছে জবাব পাওয়া গেছে।” একথার মাধ্যমে যে বিষয়টি বুঝাতে চাওয়া হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, নির্বোধের দল! এ হচ্ছে যে, দরবারের অবস্থা সে সম্পর্কে তোমরা কেমন করে এ ধারণা করতে পারলে যে সেখানে কেউ নিজের বল প্রয়োগ করে তোমাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দেবে অথবা কারো সেখানে ধর্ণা দিয়ে বসে পড়ে আল্লাহকে একথা বলার সাহস হবে যে, এ ব্যক্তি আমার প্রিয়পাত্র এবং আমার লোক, একে মাফ করতেই হবে?
৪২.
প্রশ্ন ও জবাবের মাঝখানে একটি সূক্ষ্মতর শুন্যতা রয়েছে। সম্বোধন করা হয়েছিল মুশরিকদেরকে যারা আল্লাহ‌র অস্তিত্ব তো স্বীকার করতোই অধিকন্তু তাঁর হাতেই যে রিযিকের চাবিকাঠি রয়েছে একথাও জানতো এবং মানতো। কিন্তু এ সত্ত্বেও তারা আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে অন্যদেরকেও শরীক করতো। এখন যখন তাদের সামনে প্রশ্ন রাখা হয়, বলো কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দিচ্ছেন তখন তারা সমস্যায় পড়ে যায়। জবাবে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারো নাম নিলে তা নিজেদের ও নিজেদের জাতির আকিদা-বিশ্বাসের বিরোধী হয়ে যায় আবার হঠকারী হয়ে এমন কথা বলে দিলেও তাদের নিজেদের জাতির লোকেরাই তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে বলে আশঙ্কা করে। আর যদি আল্লাহকেই রিযিকদাতা বলে মেনেই নেয় তাহলে তো সঙ্গে সঙ্গেই দ্বিতীয় প্রশ্নটি সামনে এসে যায় যে, তাহলে অন্য সব উপাস্যরা কোন্ কাজের? এদেরকে তোমরা উপাস্য বানিয়ে রেখেছ কেন? রিযিক দেবেন আল্লাহ‌ আর পূজা করা হবে এদেরকে, এটা কেমন কথা? তোমরা কি একেবারে বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে গেছো, এতটুকু কথাও বুঝো না? এই দ্বিবিধ সংকটে পড়ে তারা হতবুদ্ধি হয়ে যায়। তারা ‘আল্লাহ‌ রিযিক দেন’, একথাও বলে না, আবার একথাও বলে না যে, অন্য কোন মাবুদ রিযিক দেয়। প্রশ্নকারী যখন দেখছেন কোন জবাব আসছে না তখন তিনি নিজেই নিজের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আল্লাহ।”
৪৩.
এ বাক্যাংশে প্রচার কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রচ্ছন্ন রয়েছে। ওপরের প্রশ্ন ও জবাবের অনিবার্য ফলশ্রুতি এই ছিল যে, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর বন্দেগী ও উপাসনা করবে সে সঠিক পথে থাকবে এবং যে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের বন্দেগী করবে সে ভ্রষ্টতায় লিপ্ত হবে। এ কারণে বাহ্যত এরপর একথাই বলা উচিত ছিল যে, আমরা সঠিক পথে আছি এবং তোমরা পথভ্রষ্ট। কিন্তু এ ধরনের স্পষ্টোক্তি সত্য কথনের দিক থেকে যতই সঠিক হোক না কেন প্রচার কৌশলের দিক থেকে মোটেই সঠিক হতো না। কারণ যখনই কোন ব্যক্তিকে সম্বোধন করে আপনি সরাসরি তাকে পথভ্রষ্ট বলে দেবেন এবং নিজেকে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে দাবী করবেন তখনই সে জিদ ও হঠকারিতায় লিপ্ত হয়ে যাবে এবং সত্যের জন্য তার হৃদয় দুয়ার বন্ধ হয়ে যাবে। আল্লাহর নবীকে যেহেতু শুধুমাত্র সত্য কথনের জন্য পাঠানো হয় না বরং তাঁর প্রতি এ দায়িত্বও আরোপিত থাকে যে, সর্বাধিক কৌশল অবলম্বন করে তিনি বিভ্রান্ত লোকদের সংশোধন করবেন, তাই আল্লাহ‌ একথা বলেননি, হে নবী! এ প্রশ্ন ও জবাবের পরে এবার তুমি লোকদেরকে পরিষ্কার বলে দাও যে, তোমরা পথভ্রষ্ট এবং একমাত্র আমিই সঠিক পথে আছি। এর পরিবর্তে বরং এ নিদের্শ দেয়া হয়েছে যে, তাদেরকে এখন এভাবে বুঝাও। তাদেরকে বলো, আমাদের ও তোমাদের মধ্যকার এ পার্থক্য তো সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আমরা এমন মাবুদকে মানি যিনি রিযিক দেন এবং তোমরা এমন সব সত্তাকে মাবুদে পরিণত করছো যারা রিযিক দেয় না। এখন আমাদের ও তোমাদের একই সাথে সঠিক পথাবলম্বী হওয়া কোনক্রমেই সম্ভবপর নয়। এ সুস্পষ্ট পার্থক্য সহকারে তো আমাদের মধ্য থেকে এক পক্ষই সঠিক পথাবলম্বী হতে পারে এবং অন্যপক্ষ অবশ্যই হবে পথভ্রষ্ট। এরপর তোমরা নিজেরাই চিন্তা করবে, যুক্তি ও প্রমাণ কার সঠিক পথাবলম্বী হবার পক্ষে রায় দিচ্ছে এবং সে দৃষ্টিতে কেইবা পথভ্রষ্ট।
৪৪.
ওপরের বক্তব্য শ্রোতাদের কে প্রথমেই চিন্তা করতে বাধ্য করেছিল। এরপর এই আরো একটি বাক্য বলা হলো। যাতে তারা আরো বেশী চিন্তা করার সুযোগ পায়। এর মাধ্যমে তাদেরকে এ অনুভূতি দেয়া হয়েছে যে, সঠিক পথ ও ভুল পথের এ বিষয়টির যথাযথ ফায়সালা করা আমাদের প্রত্যেকের নিজের স্বার্থের দাবী। ধরে নেয়া যাক আমরা পথভ্রষ্ট্র, তাহলে এ ভ্রষ্টতার খেশারত আমাদেরকেই ভোগ করতে হবে, তোমরা এজন্য পাকড়াও হবে না। তাই কোন আকিদা গ্রহণ করার আগে আমরা কোন ভুল পথে যাচ্ছি কিনা একথা ভালোভাবে চিন্তা করে নিতে হবে, এটা আমাদের নিজেদের স্বার্থের দাবী। অনুরূপভাবে আমাদের কোন স্বার্থে নয় বরং তোমাদের নিজেদের কল্যাণার্থেই একটি আকিদায় স্থির বিশ্বাস স্থাপন করার আগে তোমাদের ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে নিতে হবে কোথাও কোন বাতিল মতবাদের পেছনে তোমরা নিজেদের জীবনের সমস্ত মূলধন নিয়োগ করছো কিনা। এ ব্যাপারে হোঁচট খেলে তাতে ক্ষতিটা তোমাদেরই হবে, আমাদের কোন ক্ষতি হবে না।
৪৫.
এটি এ ব্যাপারে চিন্তা করার প্রেরণা দানকারী শেষ ও সবচেয়ে বলিষ্ঠ যুক্তি। শ্রোতাদের দৃষ্টি এদিকে আকৃষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, এ জীবনে আমাদের ও তোমাদের মধ্যে হক ও বাতিলের বিরোধ রয়েছে এবং আমাদের দুই দলের মধ্য থেকে কোন একজনই হকের ওপর প্রতিষ্ঠিত আছে, এটাই শেষকথা নয় বরং এরপরে এটিও এক অকাট্য সত্য যে, আমাদের ও তোমাদের উভয় দলকেই নিজের রবের সামনে হাজির হতে হবে। আর রবও হচ্ছেন এমন যিনি প্রকৃত সত্য অবহিত আছেন এবং আমাদের উভয় দলের অবস্থাও ভালোভাবেই জানেন। সেখানে গিয়ে কেবলমাত্র আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কারা সত্য ও কারা মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল এ বিষয়টিরই চূড়ান্ত ফায়সালা হয়ে যাবে না বরং এ মামলারও নিষ্পত্তি হয়ে যাবে যে, তোমাদের কাছে সত্যকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্য আমরা কি করেছি এবং তোমরা মিথ্যা পূজার জিদের বশবর্তী হয়ে কিভাবে আমাদের বিরোধিতা করেছো।
৪৬.
অর্থাৎ এ উপাস্যদের ওপর ভরসা করে তোমরা এত বড় বিপদের ঝুঁকি মাথা পেতে নেবার আগে এখানেই আমাকে একটু জানিয়ে দাও, তাদের মধ্যে কে এমন শক্তিশালী আছে যে আল্লাহর আদালতে তোমাদের সাহায্যকারী হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারবে এবং তোমাদেরকে তাঁর পাকড়াও থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হবে?
৪৭.
অর্থাৎ কেবল এ শহর, এ দেশ বা এ যুগের লোকদের জন্য নয় বরং সারা দুনিয়ার সমস্ত মানুষের জন্য তোমাকে চিরন্তন নবী হিসেবে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তোমার এ সমকালীন স্বদেশীয় লোকেরা তোমার মর্যাদা বুঝে না। কত বড় মহান সত্তাকে তাদের মধ্যে পাঠানো হয়েছে সে ব্যাপারে কোন অনুভূতিই তাদের নেই।

নবী করীম ﷺ কে কেবল তাঁর নিজের দেশ বা যুগের জন্য নয় বরং কিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতির জন্য পাঠানো হয়েছে, একথা কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছেঃ

وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَذَا الْقُرْآنُ لِأُنْذِرَكُمْ بِهِ وَمَنْ بَلَغَ

“আর আমার প্রতি এ কুরআন অহীর সাহায্যে পাঠানো হয়েছে যাতে এর মাধ্যমে আমি তোমাদেরকে এবং যার কাছে এ বাণী পৌঁছে যায় তাকেই সতর্ক করে দেই।” (আল আন’আম, ১৯৭)

قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا

“হে নবী! বলে দাও, হে মানবজাতি, আমি হচ্ছি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রসূল।” (আল আ’রাফ, ১৫৮)

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ

“আর হে নবী! আমি পাঠিয়েছি তোমাকে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যই রহমত হিসেবে।” (আল আম্বিয়া, ১০৭)

تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيرًا

“বড়ই বরকত সম্পন্ন তিনি যিনি তাঁর বান্দার ওপর ফুরকান নাযিল করেছেন যাতে সে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য সতর্ককারীতে পরিণত হয়।” (আল ফুরকান, ১)

নবী (সা.) নিজেই এই একই বক্তব্য বিভিন্ন হাদীসে বিভিন্নভাবে পেশ করেছেন। যেমনঃ

بُعِثْتُ إِلَى الأَحْمَرِ وَالأَسْوَدِ

“আমাকে সাদা কালো সবার কাছে পাঠান হয়েছে।” (মুসনাদে আহমাদঃ আবু মূসা আশ’আরী বর্ণিত)

أَمَّا أَنَا فَأُرْسِلْتُ إِلَى النَّاسِ كُلِّهِمْ عَامَّةً وَكَانَ مَنْ قَبْلِى إِنَّمَا يُرْسَلُ إِلَى قَوْمِهِ

“আমাকে ব্যাপকভাবে সমস্ত মানুষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অথচ আমার আগে যে নবীই অতিক্রান্ত হয়েছেন তাঁকে তাঁর জাতির কাছে পাঠানো হতো।” (মুসনাদে আহমাদঃ আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস বর্ণিত)

كَانَ النَّبِىُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً ، وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّةً

“প্রথমে নবীকে বিশেষভাবে তাঁর জাতির কাছে পাঠানো হতো আর আমাকে সমগ্র মানবজাতির কাছে পাঠানো হয়েছে।” (বুখারী ও মুসলিমঃ জাবির ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণিত)

بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةَ كَهَاتَيْنِ يَعْنِى إِصْبَعَيْنِ

“আমার আগমন ও কিয়ামতের অবস্থান এরূপ একথা বলতে গিয়ে নবী (সা.) নিজের দু’টি আংগুল উঠান।” (বুখারী ও মুসলিম)

এর অর্থ এই ছিল যে, “এ দু’টি আংগুলের মাঝখানে যেমন তৃতীয় কোন আংগুলের অন্তরাল নেই ঠিক তেমনি আমার ও কিয়ামতের মাঝখানেও অন্য কোন নবুওয়াতের অন্তরাল নেই। আমার পরে এখন আর শুধু রয়েছে কিয়ামত এবং কিয়ামত পর্যন্ত আমিই নবী হিসেবে থাকবো।”

৪৮.
অর্থাৎ যে সময় সম্পর্কে তুমি এইমাত্র বললে, “আমাদের রব আমাদের একত্র করবেন এবং আমাদের মধ্যে যথাযথ ফায়সালা করে দেবেন” সে সময়টি আসবে কবে? আমাদের ও তোমার মামলা চলছে দীর্ঘকাল থেকে। আমরা বারবার তোমার কথাকে মিথ্যা বলেছি এবং প্রকাশ্যে তোমার বিরোধিতা করে আসছি। এখন এর ফায়সালা করা হচ্ছে না কেন?
৪৯.
অন্যকথায় এ জবাবের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর ফায়সালা তোমাদের ইচ্ছার অধীন নয়। কোন কাজের জন্য তোমরা যে সময় বেঁধে দেবে সে সময়ই সে কাজটি করতে তিনি বাধ্য নন। নিজের কাজ নিজের ইচ্ছা ও সুবিধামতো তিনি করে থাকেন। তোমরা আল্লাহর পরিকল্পনা কি বুঝবে? তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী মানবজাতি কতদিন পর্যন্ত এ দুনিয়ায় কাজ করার সুযোগ পাবে, কত ব্যক্তির এবং কত জাতির কি কি ধরনের পরীক্ষা হবে এবং এ দপ্তরের সমস্ত কাজ কর্ম গুটিয়ে নেবার এবং পূর্ববর্তী লোকদের সবাইকে হিসেব-নিকেশের উদ্দেশ্যে ডেকে নেবার জন্য কোন্ সময়টি উপযোগী হবে তোমরা তার কি বুঝবে! আল্লাহরই পরিকল্পনায় এর যে সময়টি নির্ধারিত রয়েছে ঠিক সে সময়ই এ কাজটি হবে। তোমাদের তাগাদার কারণে সেটি এক সেকেন্ড আগেও আসবে না এবং তোমাদের আবেদন নিবেদনের ফলে তা এক সেকেন্ড বিলম্বিতও হবে না।
অনুবাদ: