আয়াত
৫১ ) -তারপর একটি শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে এবং সহসা তারা নিজেদের রবের সামনে হাজির হবার জন্য নিজেদের কবর থেকে বের হয়ে পড়বে। ৪৭
وَنُفِخَ فِى ٱلصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ ٱلْأَجْدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يَنسِلُونَ ٥١
৫২ ) ভীত হয়ে বলবে, “আরে কে আমাদেরকে আমাদের নিঁদমহল থেকে উঠিয়ে দাঁড় করালো?” ৪৮ ----“এটা সে জিনিস যার প্রতিশ্রুতি দয়াময় আল্লাহ দিয়েছিলেন এবং রসূলদের কথা সত্য ছিল।” ৪৯
قَالُوا۟ يَٰوَيْلَنَا مَنۢ بَعَثَنَا مِن مَّرْقَدِنَا هَٰذَا مَا وَعَدَ ٱلرَّحْمَٰنُ وَصَدَقَ ٱلْمُرْسَلُونَ ٥٢
৫৩ ) একটিমাত্র প্রচণ্ড আওয়াজ হবে এবং সবকিছু আমার সামনে হাজির করে দেয়া হবে।
إِن كَانَتْ إِلَّا صَيْحَةً وَٰحِدَةً فَإِذَا هُمْ جَمِيعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُونَ ٥٣
৫৪ ) আজ কারো ৫০ প্রতি তিলমাত্র জুলুম করা হবে না এবং যেমন কাজ তোমরা করে এসেছ ঠিক তারই প্রতিদান তোমাদের দেয়া হবে
فَٱلْيَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْـًٔا وَلَا تُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ٥٤
৫৫ ) ---জান্নাতীরা আজ আনন্দে মশগুল রয়েছে। ৫১
إِنَّ أَصْحَٰبَ ٱلْجَنَّةِ ٱلْيَوْمَ فِى شُغُلٍ فَٰكِهُونَ ٥٥
৫৬ ) তারা ও তাদের স্ত্রীরা ঘন ছায়ায় রাজকীয় আসনে হেলান দিয়ে বসে আছে।
هُمْ وَأَزْوَٰجُهُمْ فِى ظِلَٰلٍ عَلَى ٱلْأَرَآئِكِ مُتَّكِـُٔونَ ٥٦
৫৭ ) সব রকমের সুস্বাদু পানাহারের জিনিস তাদের জন্য সেখানে রয়েছে, যা কিছু তারা চাইবে তা তাদের জন্য হাজির রয়েছে।
لَهُمْ فِيهَا فَٰكِهَةٌ وَلَهُم مَّا يَدَّعُونَ ٥٧
৫৮ ) দয়াময় রবের পক্ষ থেকে তাদেরকে “সালাম” বলা হয়েছে
سَلَٰمٌ قَوْلًا مِّن رَّبٍّ رَّحِيمٍ ٥٨
৫৯ ) ---এবং হে অপরাধীরা! আজ তোমরা ছাঁটাই হয়ে আলাদা হয়ে যাও। ৫২
وَٱمْتَٰزُوا۟ ٱلْيَوْمَ أَيُّهَا ٱلْمُجْرِمُونَ ٥٩
৬০ ) হে আদম সন্তানেরা! আমি কি তোমাদের এ মর্মে হিদায়াত করিনি যে, শয়তানের বন্দেগী করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু
أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَٰبَنِىٓ ءَادَمَ أَن لَّا تَعْبُدُوا۟ ٱلشَّيْطَٰنَ إِنَّهُۥ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ ٦٠
৪৭.
শিঙ্গা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ত্বা-হা, ৭৮ টীকা। শিঙ্গার প্রথম ফুঁৎকার ও দ্বিতীয় ফূঁৎকারের মধ্যে কত সময়ের ব্যবধান হবে, এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। এ সময়টা শত শত ও হাজার হাজার বছর দীর্ঘ হতে পারে। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীসে নবী ﷺ বলেনঃ ঈসরাফীল (আঃ) শিঙ্গায় মুখ লাগিয়ে আরশের দিকে তাকিয়ে আছেন এবং কখন ফূঁৎকার দেবার হুকুম হয় তার অপেক্ষা করছেন। শিঙ্গায় তিনবার ফুঁক দেয়া হবে। প্রথমটি হবেنفخة الفزع এটি পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত সৃষ্টিকে হতবিহ্বল করে দেবে। দ্বিতীয়টি হবে
نفخة الصعق এটি শোনার সাথে সাথেই সবাই মরে পড়ে যাবে। তারপর যখন একমাত্র ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী আল্লাহ ছাড়া আর কেউ থাকবে না তখন পৃথিবীকে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত করে দেয়া হবে। উক্কাযের বাজারের সমতল ভূমির মতো তাকে এমনভাবে সমতল করা হবে যে, তার মধ্যে সামান্য একটু ভাঁজও কোথাও পড়ে থাকবে না। তারপর আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে একটি বিকট ধমক দেবেন আর তা শুনতেই প্রত্যেক ব্যক্তিই যেখানে সে মরে পড়ে গিয়েছিল সেখানকার পরিবর্তিত জমি থেকেই উঠে দাঁড়াবে। এটিই শেষ ফুঁক বলে পরিচিত। এর নাম হবে
نفخة القيام لرب العالمين কুরআন মজীদের বিভিন্ন ইশারা-ইঙ্গিত থেকে এ বিষয়বস্তুটিরই প্রতি সমর্থন পাওয়া গেছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইবরাহীম, ৫৬-৫৭ ও সূরা ত্বা-হা, ৮২-৮৩ টীকা।
৪৮.
অর্থাৎ তখন তাদের এ অনুভূতিই থাকবে না যে, তারা মরে গিয়েছিল এবং দীর্ঘকাল পরে এখন আবার তাদেরকে জীবিত করে উঠানো হয়েছে। বরং তারা এ চিন্তায় মগ্ন থাকবে যে, তারা ঘুমিয়েছিল, এখন হঠাৎ কোন ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণে জেগে উঠেছে এবং ছুটে চলছে। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা ত্বা-হা ৭৮ এবং ইবরাহীম, ১৮ টীকা।
৪৯.
কে এ জবাব দেবে, তা এখানে স্পষ্ট করে বলা হয়নি। হতে পারে কিছুক্ষণ পরে তারা নিজেরাই বিষয়টির প্রকৃত স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারবে এবং মনে মনে বলবে, হায়! আমাদের দুর্ভাগ্য, এ তো সে জিনিসই যার খবর আল্লাহর রসূল আমাদের দিতেন এবং আমরা তাঁকে মিথ্যুক বলতাম। আবার এও হতে পারে, মু’মিনরা তাদের বিভ্রান্তি দূর করে দেবে এবং তাদেরকে জানাবে, এটা ঘুম থেকে জেগে ওঠা নয় বরং মৃত্যুর পর দ্বিতীয় জীবন। তাছাড়া এও হতে পারে যে, কিয়ামতের সমগ্র পরিবেশ তাদেরকে এ জবাব দেবে অথবা ফেরেশতারা তাদেরকে প্রকৃত অবস্থা জানাবে।
৫০.
কাফের, মুশরিক, ফাসেক ও অপরাধীদেরকে যখন আল্লাহর সামনে হাজির করা হবে তখন আল্লাহ তাদের উদ্দেশ্যে এ ভাষণ দেবেন।
৫১.
এ বক্তব্য অনুধাবন করার জন্য প্রথমে মনে রাখতে হবে যে, সৎকর্মশীল মু’মিনদেরকে হাশরের ময়দানে আটকে রাখা হবে না বরং শুরুতেই তাদেরকে কোন প্রকার হিসেব-নিকেশ ছাড়াই অথবা সামান্য হালকা হিসেব গ্রহণ করার পর জান্নাতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। কারণ তাদের রেকর্ড হবে পরিষ্কার। আদালত চলাকালীন সময় তাদের অপেক্ষা করার কষ্ট বরদাশত করার কোন প্রয়োজন হবে না। তাই মহান আল্লাহ হাশরের ময়দানে জবাবদিহিকারী অপরাধীদেরকে বলবেন, দেখো, যেসব সৎলোককে তোমরা দুনিয়ায় বোকা মনে করে বিদ্রূপ করতে তারা নিজেদের বুদ্ধিমত্তার কারণে আজ জান্নাতে বসে আরাম করছে এবং তোমরা যারা নিজেদেরকে অতি বুদ্ধিমান ও চালাক-চতুর মনে করতে তারা আজ দেখো কেমন এখন দাঁড়িয়ে নিজেদের অপরাধের জন্য জবাবদিহি করছো।
৫২.
এর দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে, সৎকর্মশীল মু’মিনদের থেকে ছাঁটাই হয়ে আলাদা হয়ে যাও। কারণ দুনিয়ায় তোমরা তাদের সম্প্রদায়, পরিবার ও গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত থাকলে থাকতে পারো, কিন্তু এখানে এখন তোমাদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তোমরা নিজেদের মধ্যে আলাদা হয়ে যাও। এখন তোমাদের কোন দল ও জোট থাকতে পারে না। তোমাদের সমস্ত দল ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। তোমাদের সকল প্রকার সম্পর্ক ও আত্মীয়তা খতম করে দেয়া হয়েছে। তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তিকে এখন একাকী ব্যক্তিগতভাবে নিজের কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।