আস্ সা-ফফা-ত

১৮২ আয়াত

بِسْمِ ٱللّٰهِ ٱلرَّحْمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِ
৪১ ) তাদের জন্য রয়েছে জ্ঞাত রিযিক, ২২
أُو۟لَٰٓئِكَ لَهُمْ رِزْقٌ مَّعْلُومٌ ٤١
৪২ ) সব রকমের
فَوَٰكِهُ وَهُم مُّكْرَمُونَ ٤٢
৪৩ ) সুস্বাদু জিনিস ২৩ এবং নিয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাত, যেখানে তাদেরকে মর্যাদা সহকারে রাখা হবে।
فِى جَنَّٰتِ ٱلنَّعِيمِ ٤٣
৪৪ ) বসবে তারা আসনে মুখোমুখি।
عَلَىٰ سُرُرٍ مُّتَقَٰبِلِينَ ٤٤
৪৫ ) শরাবের ২৪ ঝরণা ২৫ থেকে পানপাত্র ভরে ভরে তাদেরকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে। ২৬
يُطَافُ عَلَيْهِم بِكَأْسٍ مِّن مَّعِينٍۭ ٤٥
৪৬ ) উজ্জ্বল শরাব, পানকারীদের জন্য হবে সুস্বাদু।
بَيْضَآءَ لَذَّةٍ لِّلشَّٰرِبِينَ ٤٦
৪৭ ) তা তাদের কোন শারীরিক ক্ষতি করবে না এবং তাতে তাদের বুদ্ধিও ভ্রষ্ট হবে না। ২৭
لَا فِيهَا غَوْلٌ وَلَا هُمْ عَنْهَا يُنزَفُونَ ٤٧
৪৮ ) আর তাদের কাছে থাকবে আনত নয়না ২৮ সুলোচনা নারীগণ, ২৯
وَعِندَهُمْ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرْفِ عِينٌ ٤٨
৪৯ ) এমন নাজুক যেমন হয় ডিমের খোসার নিচে লুকানো ঝিল্লি। ৩০
كَأَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَّكْنُونٌ ٤٩
৫০ ) তারপর তারা একজন অন্যজনের দিকে ফিরে অবস্থা জিজ্ঞেস করবে।
فَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ يَتَسَآءَلُونَ ٥٠
২২.
অর্থাৎ এমন রিযিক যার সমস্ত গুণাবলী বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। যা পাওয়ার ব্যাপারে তারা নিশ্চিত। যে ব্যাপারে তারা একেবারে নিশ্চিন্ত যে, তা তারা চিরকাল পেতে থাকবে। যে ব্যাপারে কি পাওয়া যাবে কি না পাওয়া যাবে, এ ধরনের কোন অনিশ্চয়তা নেই।
২৩.
এর মধ্যে এদিকেও একটি সূক্ষ্ম ইশারা রয়েছে যে, জান্নাতে আহার্য দ্রব্যাদি খাদ্য হিসেবে নয় বরং স্বাদ উপভোগের জন্য ব্যবহৃত হবে। অর্থাৎ সেখানে খাবার এ উদ্দেশ্যে খাওয়া হবে না যে, শরীরের ক্ষয় হয়ে যাওয়া অংশগুলোর শূন্যতা পূরণ করা হবে। কারণ সে চিরন্তন জীবনে শরীরের অংশগুলোর কোন ক্ষয়ই হবে না। মানুষের সেখানে ক্ষুধাও লাগবে না। এ দুনিয়ায় শরীরের অংশের ক্ষয়ের কারণে মানুষের ক্ষুধা পায়। আর শরীর নিজেকে জীবিত রাখার জন্য সেখানে খাদ্যও চাইবে না। এ কারণে জান্নাতের খাদ্যের জন্য فواكه (ফাওয়াকেহ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থের মধ্যে “খাদ্যে পরিণত হওয়া” এর পরিবর্তে “স্বাদ উপভোগ করা” এর অর্থ অধিকতর লক্ষণীয়।
২৪.
আসলে এখানে শরাব শব্দটি সুস্পষ্ট করে বলা হয়নি। বরং শুধুমাত্র كَأْسٍ (পানপাত্র) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আরবী ভাষায় كَأْسٍ শব্দটি ব্যবহার করে সবসময় শরাব অর্থই গ্রহণ করা হয়। যে পেয়ালায় শরাবের পরিবর্তে দুধ বা পানি থাকে অথবা যে পেয়ালার কিছুই থাকে না তাকে كَأْس (কাস) বলা হয় না।” কাস শব্দটি একমাত্র তখনই বলা হয় যখন তার মধ্যে মদ থাকে।
২৫.
অর্থাৎ দুনিয়ায় ফল ও খাদ্য বস্তু পচিয়ে যে শরাব তৈরি করা হয় এ শরাব তেমন ধরনের হবে না। বরং তা প্রাকৃতিকভাবে ঝরণা থেকে উৎসারিত হবে এবং নদীর আকারে প্রবাহিত হবে। সূরা মুহাম্মাদের এ বিষয়বস্তুটি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ

وَأَنْهَارٌ مِنْ خَمْرٍ لَذَّةٍ لِلشَّارِبِينَ

“আর শরাবের নদী, যা পানকারীদের জন্য হবে সুস্বাদু।”

২৬.
শরাবের পানপাত্র নিয়ে ঘুরে ঘুরে জান্নাতীদের মধ্যে কারা পরিবেশন করবে সেকথা এখানে বলা হয়নি‌। এর বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া হয়েছে অন্যান্য স্থানেঃ

وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَهُمْ كَأَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَكْنُونٌ

“আর তাদের খিদমত করার জন্য ঘুরবে তাদের খাদেম ছেলেরা যারা এমন সুন্দর যেমন ঝিনুকে লুকানো মোতি।” (আত্ তূর, ২৪)

وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَنْثُورًا

“আর তাদের খিদমত করার জন্য ঘুরে ফিরবে এমন সব বালক যারা হামেশা বালকই থাকবে। তোমরা তাদেরকে দেখলে মনে করবে মোতি ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।” (আদ দাহর, ১৯)

তারপর এর বিস্তারিত বর্ণনা হযরত আনাস (রা.) ও হযরত সামুরাহ ইবনে জুনদুবের (রা.) বর্ণিত রসূলুল্লাহ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসগুলো থেকে পাওয়া যায়। সেগুলোতে বলা হয়েছে “মুশরিকদের সন্তানরা জান্নাতবাসীদের সেবক হবে।” (আবু দাউদ তায়ালিসী, তাবারানী ও বাযযার) এ হাদীসগুলো সনদের দিক দিয়ে দুর্বল হলেও অন্যান্য বহু হাদীস থেকেও জানা যায়, যে শিশুরা বয়প্রাপ্ত না হয়ে মারা যায় তারা জান্নাতে যাবে। তাছাড়া একথাও হাদীস থেকে জানা যায় যে, যেসব শিশুর পিতামাতা জান্নাতবাসী হবে তারা নিজেদের বাপ-মায়ের সাথে থাকবে, যাতে তাদের চোখ শীতল হয়। এরপর অবশ্যই এমন সব শিশু থেকে যায় যাদের বাপ-মা জান্নাতী হবে না। কাজেই তাদের ব্যাপারে একথা যুক্তিসঙ্গত মনে হয় যে, তাদেরকে জান্নাতবাসীদের খাদেম বানিয়ে দেয়া হবে। (সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনার জন্য “ফাতহুল বারী” ও “উমদাতুল কারী”র জানায়েয অধ্যায়ের ‘মুশরিকদের সন্তানদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে’ অনুচ্ছেদে, “রাসায়েল ও মাসায়েল” ৩ খণ্ড ১৭৭-১৮৭ পৃষ্ঠা দেখুন।)

২৭.
অর্থাৎ দুনিয়ার শরাবে যে দু’ধরনের দোষ থাকে তা হবে তার স্পর্শ মুক্ত। দুনিয়ার শরাবের এক ধরনের দোষ হচ্ছে মানুষ তার কাছে আসতেই প্রথমে তার পচা দুর্গন্ধ নাকে পৌঁছে যায়। তারপর তার স্বাদ মানুষের জিহ্বাকে তিক্ত ও বিস্বাদ করে দেয়। এরপর গলার নিচে নামার সাথে সাথেই তা পেট চেপে ধরে। তারপর তা মাথায় চড়তে থাকে এবং মাথায় চক্কর দিতে থাকে। এরপর তা যকৃত বা কলিজাকে প্রভাবিত করে এবং মানুষের স্বাস্থের ওপর তার খারাপ প্রভাব পড়তে থাকে। তারপর যখন নেশা খতম হয়ে যেতে থাকে তখন মানুষ নিদ্রালুতা ও অবসাদে আক্রান্ত হয়। এসব হচ্ছে শারীরিক ক্ষতি। দ্বিতীয় ধরনের দোষ হচ্ছে, শরাব পান করে মানুষ বকবক করতে থাকে, উল্টা-পাল্টা আজে-বাজে অর্থহীন কথা বলতে থাকে, এগুলো শরাবের মানসিক ক্ষতি। দুনিয়ায় মানুষ কেবলমাত্র আনন্দ লাভের জন্য এ সমস্ত ক্ষতি বরদাশত করে। আল্লাহ‌ বলেন, জান্নাতের শরাবে আনন্দলাভ করা যাবে পূর্ণভাবে لَذَّةٍ لِلشَّارِبِينَ কিন্তু উপরোক্ত দু’ধরনের ক্ষতির কোনটারই সম্ভাবনা সেখানে থাকবে না।
২৮.
অর্থাৎ নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে না।
২৯.
সম্ভবত এরা সেসব মেয়ে হবে যারা প্রাপ্ত বয়স্কা হবার আগেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে এবং যাদের পিতামাতা জান্নাতলাভের অধিকারী হয়নি। অনুমানের ভিত্তিতে একথা বলা যেতে পারে যে, এ ধরনের ছেলেদেরকে যেমন জান্নাতবাসীদের সেবায় নিযুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা হামেশা বালকই থাকবে ঠিক তেমনি এ ধরনের মেয়েদেরকে জান্নাতবাসীদের জন্য হূরে পরিণত করা হবে এবং তারা চিরকাল উঠতি বালিকাই থাকবে। অবশ্য এ ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন।
৩০.
মূলে বলা হয়েছে كَأَنَّهُنَّ بَيْضٌ مَكْنُونٌ “যেন তারা গোপন বা সংরক্ষিত ডিম” তাফসীর বিশারদগণ এ শব্দগুলোর বিভিন্ন ব্যাখ্যা পেশ করেছেন। কিন্তু সঠিক ব্যাখ্যা সেটিই যেটি হযরত উম্মে সালামাহ (রা.) নবী ﷺ থেকে উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন, আমি নবী করীমকে ﷺ এ আয়াতটির অর্থ জিজ্ঞেস করি। জবাবে তিনি বলেন, তাদের কোমলতা ও নাজুকতা এমন ঝিল্লির মতো হবে যা ডিমের খোসা ও তার সাদা অংশের মাঝখানে থাকে। (ইবনে জারীর)
অনুবাদ: