أُولَئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ
“এরা ছিলেন এমনসব লোক যাদেরকে আল্লাহ সঠিক পথ দেখিয়েছিলেন। কাজেই তুমি এদের পথ অনুসরণ করো।”
এখন যেহেতু হযরত দাউদও একজন নবী ছিলেন এবং তিনি এ স্থানে সিজদা করেছিলেন, তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও তাঁকে অনুসরণ করে এ স্থানে সিজদা করেছেন। (বুখারী) এ তিনটি বর্ণনা হচ্ছে হযরত ইবনে আব্বাসের। আর হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী ﷺ একবার খুতবার মধ্যে সূরা সা-দ পড়েন এবং এ আয়াতে এসে পৌঁছলে মিম্বার থেকে নিচে নেমে এসে সিজদা করেন এবং তাঁর সাথে সাথে সমবেত সবাইও সিজদা করে। তারপর দ্বিতীয় আর একবার অনুরূপভাবে তিনি এ সূরাটি পড়েন এবং এ আয়াতটি শুনার সাথে সাথে লোকেরা সিজদা করতে উদ্যত হয়। তখন নবী সরীম ﷺ বলেন, “এটি একজন নবীর তাওবা কিন্তু আমি দেখছি তোমরা সিজদা করতে প্রস্তুত হয়ে গেছো”----একথা বলে তিনি মিম্বার থেকে নেমে আসেন এবং সিজদা করেন। সমবেত সবাইও সিজদা করে। (আবু দাউদ) এসব হাদীস থেকে যদিও সিজদা ওয়াজিব হবার চূড়ান্ত ও অভ্রান্ত প্রমাণ পাওয়া যায় না তবুও এতটুকু কথা অবশ্যই প্রমাণিত হয় যে, এ স্থানে নবী ﷺ অধিকাংশ সময় সিজদা করেছেন এবং সিজদা না করার তুলনায় এখানে সিজদা করাটা অবশ্যই উত্তম। বরং ইবনে আব্বাসের (রা.) তৃতীয় যে বর্ণনাটি আমরা ইমাম বুখারীর বরাত দিয়ে উদ্ধৃত করেছি সেটি ওয়াজিব না হওয়ার তুলনায় ওয়াজিব হওয়ার পাল্লার দিকটি ঝুঁকিয়ে দেয়।
এ আয়াতটি থেকে যে আর একটি বিষয়বস্তু বের হয়ে আসে সেটি হচ্ছেঃ আল্লাহ এখানে خَرَّ رَاكِعًا (রুকূ’তে অবনত হয়) শব্দ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সকল মুফাসসির এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, এর অর্থ خَر سَاجِدًا (সিজদায় অবনত হয়।)। এ কারণে ইমাম আবু হানীফা (র) ও তাঁর সহযোগীগণ এমত পোষণ করেছেন যে, নামাযে বা নামায ছাড়া অন্য অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনে বা পড়ে সিজদা না করে কোন ব্যক্তি শুধুমাত্র রুকূ’ও করতে পারে। কারণ আল্লাহ নিজেই যখন রুকূ’ শব্দ বলে সিজদা অর্থ নিয়েছেন তখন জানা গেলো রুকূ’ সিজদার স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। শাফেঈ ফকীহগণের মধ্যে ইমাম খাত্তাবীও এ মত পোষণ করেন। এ অভিমতটি একটি অভিমত হিসেবে নির্ভুল ও যুক্তিযুক্ত সন্দেহ নেই কিন্তু নবী ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরামের কার্যক্রমের মধ্যে আমরা এর কোন নজির দেখি না যে, সিজাদার আয়াত শুনে বা পড়ে সিজদা করার পরিবর্তে তাঁরা রুকূ’ করাকেই যথেষ্ট মনে করেছেন। কাজেই এ অভিমত কার্যত বাস্তবায়িত একমাত্র তখনই করা উচিত যখন সিজাদ করার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে। নিয়মিতভাবে এ রকম করা সঠিক হবে না। নিয়মিত এ রকম করা ইমাম আবু হানীফা ও তাঁর সহযোগীদের উদ্দেশ্যও নয়। বরং তাঁরা কেবলমাত্র এর বৈধতার প্রবক্তা।