۞ قُلْ يَـٰعِبَادِىَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا۟ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
(হে নবী,) বলে দাও, হে আমার বান্দারা ৭০ যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। ৭১
৭০
কেউ কেউ একথাটির অদ্ভূত এক ব্যাখ্যা করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা খোদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে “হে আমার বান্দারা” বলে মানুষকে সম্বোধন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই সব মানুষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বান্দা। প্রকৃতপক্ষে এটা এমন এক ব্যাখ্যা যাকে ব্যাখ্যা নয় বরং কুরআন মজীদের জঘন্যতম অর্থ বিকৃতি এবং আল্লাহর বাণীর সাথে তামাসা বলতে হবে। মূর্খ ভক্তদের কোন গোষ্ঠি এ বিষয়টি শুনে তো সমর্থনে মাথা নাড়তে থাকবে। কিন্তু এ ব্যাখ্যা সঠিক হলে গোটা কুরআনই ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়। কেননা, কুরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষকে একমাত্র আল্লাহর বান্দা হিসেবে আখ্যায়িত করে। তাছাড়া কুরআনের দাওয়াতই হচ্ছে তোমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব করো না। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ছিলেন আল্লাহর বান্দা। আল্লাহ তাঁকে প্রভু নয় রসূল বানিয়ে পাঠিয়েছিলেন, তিনি নিজেও আল্লাহর দাসত্ব করবেন এবং মানুষকেও তাঁরই দাসত্বের শিক্ষা দেবেন। কোন বুদ্ধিমান মানুষের মগজে একথা কি করে আসতে পারে যে, মক্কায় কুরাইশ গোত্রের কাফেরদের মাঝে দাঁড়িয়ে মুহাম্মাদ ﷺ একদিন হয়তো হঠাৎ একথা ঘোষণা করে দিয়ে থাকবেন যে, তোমরা উযযা বা সূর্যের দাস নও, প্রকৃতপক্ষে তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাস। اعاذنا الله من ذلك
৭১
এখানে সমস্ত মানুষকে সম্বোধন করা হয়েছে। শুধু ঈমানদারদের সম্বোধন করা হয়েছে একথা বলার কোন উপযুক্ত প্রমাণ নেই। তাছাড়া আল্লামা ইবনে কাসীর লিখেছেন, গোটা মানবজাতিকে সম্বোধন করে একথা বলার অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ তা’আলা তাওবা ও অনুশোচনা ছাড়াই সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। পরবর্তী আয়াতটিতে আল্লাহ নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, গোনাহ মাপের উপায় হচ্ছে আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যের দিকে ফিরে আসা এবং আল্লাহর নাযিলকৃত বাণীর অনুসরণ করা। এ আয়াতটি প্রকৃতপক্ষে সেসব লোকের জন্য আশার বাণী বয়ে এনেছিলো যারা জাহেলী যুগে হত্যা, ব্যভিচার, চুরি, ডাকাতি এবং এ ধরনের বড় বড় গোনাহর কাজে লিপ্ত ছিল আর এসব অপরাধ যে কখনো মাফ হতে পারে সে ব্যাপারে নিরাশ ছিল। তাদের বলা হয়েছে, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। তোমরা যা কিছুই করেছো এখনো যদি তোমাদের রবের আনুগত্যের দিকে ফিরে আস তাহলে সবকিছু মাফ হয়ে যাবে। ইবনে আব্বাস (রা.), কাতাদা (রা.), মুজাহিদ (র) ও ইবনে যায়েদ (র) এ আয়াতের এ ব্যাখ্যাই দিয়েছেন। (ইবনে জারীর, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী) আরো ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, সূরা আল ফুরকান, টীকা ৮৪)