إِن تَكْفُرُوا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِىٌّ عَنكُمْ ۖ وَلَا يَرْضَىٰ لِعِبَادِهِ ٱلْكُفْرَ ۖ وَإِن تَشْكُرُوا۟ يَرْضَهُ لَكُمْ ۗ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌۭ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ۚ إِنَّهُۥ عَلِيمٌۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ
যদি তোমরা কুফরী করো তাহলে আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। ১৯ কিন্তু তিনি তাঁর বান্দার জন্য কুফরী আচরণ পছন্দ করেন না। ২০ আর যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন। ২১ আর কেউ-ই অপর কারো গোনাহের বোঝা বহন করবে না। ২২ অবশেষে তোমাদের সবাইকে তোমাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে। তখন তিনি জানাবেন তোমরা কি করছিলে। তিনি মনের খবর পর্যন্ত জানেন।
১৯
অর্থাৎ তোমাদের কুফরীর কারণে তাঁর প্রভুত্বের সামান্যতম ক্ষতিও হতে পারে না। তোমরা মানলেও তিনি আল্লাহ, না মানলেও তিনি আল্লাহ আছেন এবং থাকবেন। তাঁর নিজের ক্ষমতায়ই তাঁর কর্তৃত্ব চলছে। তোমাদের মানা বা না মানাতে কিছু এসে যায় না। হাদীসে নবী ﷺ বলেছেন যে, আল্লাহ বলেনঃ
يَا عِبَادِى لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ مِنْكُمْ مَا نَقَصَ مِنْ مُلْكِى شَيْئًا-
“হে আমার বান্দারা, যদি তোমরা আগের ও পরের সমস্ত মানুষ ও জিন তোমাদের মধ্যকার কোন সর্বাধিক পাপিষ্ঠ ব্যক্তির মত হয়ে যাও তাতেও আমার বাদশাহীর কোন ক্ষতি হবে না।” (মুসলিম)।
২০
অর্থাৎ নিজের কোন স্বার্থের জন্য নয়, বরং বান্দার স্বার্থের জন্য তার কুফরী করা পছন্দ করেন না। কেননা, কুফরী তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর। এখানে একথা মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর ইচ্ছা ও অভিপ্রায় এক জিনিস এবং তাঁর সন্তুষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন আরেকটি জিনিস। পৃথিবীতে আল্লাহর ইচ্ছার পরিপন্থী কোন কাজ হতে পারে না। কিন্তু তাঁর সন্তুষ্টির পরিপন্থী কাজ হতে পারে এবং রাত দিন হয়ে আসছে। উদাহরণস্বরূপঃ পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী ও জালেমদের শাসনকর্তা হওয়া, চোর ও ডাকাতদের অস্তিত্ব থাকা এবং হত্যাকরী ও ব্যভিচারীদের বর্তমান থাকা এ কারণেই সম্ভব যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর রচিত প্রাকৃতিক বিধানে এসব অকল্যাণ ও অপকর্মের অস্তিত্ব লাভের অবকাশ রেখেছেন। তাছাড়া তাদেরকে মন্দ কাজে লিপ্ত হওয়ার সুযোগও তিনিই দেন এবং ঠিক তেমনিভাবে দেন যেমনভাবে সৎকর্মশীলদের সৎকাজ করার সুযোগ দেন। তিনি যদি এসব কাজ করার আদৌ কোন সুযোগ না রাখতেন এবং যারা এসব কাজ করে তাদের আদৌ কোন সুযোগই না দিতেন তাহলে পৃথিবীতে কখনো কোন অকল্যাণ আত্মপ্রকাশ করতো না। এসব কিছুই তাঁর ইচ্ছার ভিত্তিতে হচ্ছে। কিন্তু ইলাহী ইচ্ছার অধীনে কোন কাজ সংঘটিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে, তার পেছনে আল্লাহর সন্তুষ্টিও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ একথাটিকে এভাবে বুঝতে চেষ্টা করুন যে, কেউ যদি হারাম পন্থার মাধ্যমে তার রিযিক লাভের চেষ্টা করে তাহলে আল্লাহ তাকে ঐ পন্থায়ই রিযিক দান করেন। এটা তাঁর ইচ্ছা। কিন্তু তাঁর ইচ্ছার অধীনে চোর ডাকাত বা ঘুষখোরকে রিযিক দেয়া অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ চুরি, ডাকতি এবং ঘুষও পছন্দ করেন। এখানে আল্লাহ তা’আলা একথাটিই বলছেন যে, তোমরা কুফরি করতে চাইলে করো। আমি জোর করে তাতে বাঁধা দিয়ে তোমাদেরকে মু’মিন বানাবো না। তবে তোমরা বান্দা হয়ে স্রষ্টা ও পালনকর্তার সাথে কুফরি করবে তাও আমার পছন্দ নয়। কারণ, তা তোমাদের জন্যই ক্ষতিকর। এতে আমার প্রভুত্বে আদৌ আঁচড়ে লাগে না।
২১
এখানে ‘কুফর’ এর বিপরীতে ‘ঈমান’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘শোকর’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এতে আপনা থেকেই এ বিষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, কুফরী প্রকৃতপক্ষে অকৃতজ্ঞতা ও নেমক হারামির নাম আর ঈমান প্রকৃতপক্ষে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অনিবার্য দাবী। যে ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানীর সামান্য অনুভূতিও আছে সে ঈমান ছাড়া অন্য কোন পথ গ্রহণ করতে পারে না। এ কারণে ‘শোকর’ ও ‘ঈমান’ এমন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যে, যেখানে শোকর থাকবে সেখানে ঈমানও অবশ্যই থাকবে। অপর দিকে যেখানে কুফরী থাকবে সেখানে শোকর বা কৃতজ্ঞতা থাকার কোন প্রশ্নই ওঠে না। কারণ কুফরীর সাথে “শোকরের” কোন অর্থ হয় না।
২২
অর্থাৎ তোমাদের মধ্যকার প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে তার কাজ কর্মের জন্য দায়ী। কেউ যদি অন্যদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য কিংবা তার অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার জন্য কুফরী করে তাহলে সে লোকেরা তার কুফরীর বোঝা নিজেদের মাথায় উঠিয়ে নেবে না। বরং তাকেই তার কাজের পরিণাম ভোগ করার জন্য রেখে দেবে। সুতরাং কুফরীর ভ্রান্তি এবং ঈমানের সত্যতা যার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে তার উচিত ভুল আচরণ পরিত্যাগ করে সঠিক আচরণ গ্রহণ করা এবং নিজের বংশ, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের সাথে থেকে নিজেকে আল্লাহর আযাবের উপযুক্ত না বানানো।