وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ ٱلصَّلَوٰةَ فَلْتَقُمْ طَآئِفَةٌۭ مِّنْهُم مَّعَكَ وَلْيَأْخُذُوٓا۟ أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوا۟ فَلْيَكُونُوا۟ مِن وَرَآئِكُمْ وَلْتَأْتِ طَآئِفَةٌ أُخْرَىٰ لَمْ يُصَلُّوا۟ فَلْيُصَلُّوا۟ مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا۟ حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ ۗ وَدَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَوْ تَغْفُلُونَ عَنْ أَسْلِحَتِكُمْ وَأَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيلُونَ عَلَيْكُم مَّيْلَةًۭ وَٰحِدَةًۭ ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن كَانَ بِكُمْ أَذًۭى مِّن مَّطَرٍ أَوْ كُنتُم مَّرْضَىٰٓ أَن تَضَعُوٓا۟ أَسْلِحَتَكُمْ ۖ وَخُذُوا۟ حِذْرَكُمْ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ أَعَدَّ لِلْكَـٰفِرِينَ عَذَابًۭا مُّهِينًۭا
আর হে নবী! যখন তুমি মুসলমানদের মধ্যে থাকো এবং (যুদ্ধাবস্থায়) তাদেরকে নামায পড়াবার জন্য দাঁড়াও ১৩৪ তখন তাদের মধ্য থেকে একটি দলের তোমার সাথে দাঁড়িয়ে যাওয়া উচিত ১৩৫ এবং তারা অস্ত্রসস্ত্র সঙ্গে নেবে। তারপর তারা সিজদা করে নিলে পেছনে চলে যাবে এবং দ্বিতীয় দলটি, যারা এখনো নামায পড়েনি, তারা এসে তোমার সাথে নামায পড়বে। আর তারাও সতর্ক থাকবে এবং নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র বহন করবে। ১৩৬ কারণ কাফেররা সুযোগের অপেক্ষায় আছে, তোমরা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র ও জিনিস পত্রের দিক থেকে সামান্য গাফেল হলেই তারা তোমাদের ওপর অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়বে। তবে যদি তোমরা বৃষ্টির কারণে কষ্ট অনুভব করো অথবা অসুস্থ থাকো, তাহলে অস্ত্র রেখে দিলে কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু তবুও সতর্ক থাকো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাকর আযাবের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। ১৩৭
১৩৪
ইমাম আবু ইউসুফ ও হাসান বিন যিয়াদ এই শব্দাবলী থেকে এ ধারণা নিয়েছেন যে, “সালাতে খওফে”র (ভয়ের নামায) কেবলমাত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে একটি হুকুম দেয়া হয়েছে আবার সেই হুকুমটিই তাঁর পরে তার স্থলাভিষিক্তদের জন্যও আগের মতই কার্যকর রয়েছে, কুরআন মজীদে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। কাজেই “সালাতে খওফ”কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে নির্দিষ্ট করার কোন কারণ নেই। এছাড়াও অসংখ্য নেতৃস্থানীয় সাহাবী থেকেও একথা প্রমাণিত হয়েছে যে, তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরেও ‘ সালাতে খওফ’ পড়েছেন। এ প্রশ্নে কোন সাহাবীর মতবিরোধের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
১৩৫
শত্রুর আক্রমণের ভয় আছে কিন্তু কার্যত লড়াই হচ্ছে না, এমন অবস্থায় ‘সালাতে খওফে’র (ভয়ের নামায) হুকুম দেয়া হয়েছে। আর কার্যত যখন লড়াই চলছে তেমন অবস্থায় হানাফীদের মতে নামায পিছিয়ে দেয়া হবে। ইমাম মালেক ও ইমাম সুফিয়ান সওরীর মতে রুকু’ ও সিজদা করা সম্ভব না হলে ইশারায় নামায পড়ে নিতে হবে। ইমাম শাফেঈর মতে, নামাযের মধ্যেও কিছুটা যুদ্ধ করা যেতে পারে। নবী ﷺ থেকে প্রমাণিত যে, তিনি খন্দকের যুদ্ধের সময় চার ওয়াক্তের নামায পড়েননি। তারপর সুযোগ পেয়েই তরতীব অনুযায়ী চার ওয়াক্তের নামায এক সাথে পড়ে নেন। অথচ খন্দকের যুদ্ধের আগেই ‘সালাতে খওফে’র হুকুম এসে গিয়েছিল।
১৩৬
অনেকটা যুদ্ধের অবস্থার ওপর ‘সালাত খওফ’ পড়ার পদ্ধতি নির্ভর করে। নবী ﷺ বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন পদ্ধতিতে এ নামায পড়িয়েছেন। কাজেই যুদ্ধের অবস্থা বা পরিস্থিতি ঐ পদ্ধতিগুলোর মধ্য থেকে যেটির অনুমতি দেবে তৎকালীন ইসলামী দলের প্রধান সেই পদ্ধতিতেই নামায পড়াবেন।
এর একটি পদ্ধতি হচ্ছেঃ সেনাদলের একটি অংশ ইমামের সাথে নামায পড়বে এবং অন্য অংশটি তখন দুশমনের মোকাবিলা করতে থাকবে। যখন এক রাকআত পুরা হয়ে যাবে তখন প্রথম অংশটি সালাম ফিরে চলে যাবে এবং দ্বিতীয় অংশটি এসে ইমামের সাথে দ্বিতীয় রাকআতটি পুরা করবে। এভাবে ইমামের দু’রাকআত এবং সৈন্যদের এক রাকআত নামায হবে।
দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হচ্ছেঃ সেনাদলের এক অংশ ইমামের সাথে এক রাকআত পড়ে চলে যাবে তারপর দ্বিতীয় অংশটি এসে ইমামের পেছনে এক রাকআত পড়বে। এরপর উভয় অংশই পালাক্রমে এসে নিজেদের বাকি এক রাকআত একা একা পড়ে নেবে। এভাবে উভয় অংশের এক রাকআত পড়া হবে ইমামের পিছনে এবং এক রাকআত হবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে।
এর তৃতীয় পদ্ধতিটি হচ্ছেঃ ইমামের পেছনে সেনাদলের একটি অংশ দুই রাকআত পড়বে এবং তাশাহ্হুদের পর সালাম ফিরে চলে যাবে। সেনাদলের দ্বিতীয় অংশ ইমামের সাথে তৃতীয় রাকআতে শরীক হবে এবং তার সাথে আর এক রাকআত করে পড়ে সালাম ফিরবে। এভাবে ইমামের চার ও সেনাদলের দুই রাকআত হবে।
চতুর্থ পদ্ধতিটি হচ্ছেঃ সেনাদলের এক অংশ ইমামের সাথে এক রাকআত পড়বে এবং ইমাম যখন দ্বিতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়াবে তখন মুকতাদীরা নিজেরাই একা একা দ্বিতীয় রাকআত তাশাহহুদ সহ পড়ে সালাম ফিরে চলে যাবে। তারপর দ্বিতীয় অংশটি এসে এমন অবস্থায় ইমামের সাথে শামিল হবে যে ইমাম তখনো দ্বিতীয় রাকআতে থাকবেন এবং এরা বাকি নামায ইমামের সাথে পড়ার পর এক রাকআত নিজেরা উঠে একা একা পড়ে নেবে। এ অবস্থায় ইমামকে দ্বিতীয় রাকআতে দীর্ঘতম কিয়াম করতে হবে।
ইবনে আব্বাস, জাবির ইবনে আবদুল্লাহু ও মুজাহিদ প্রথম পদ্ধতিটি সম্পর্কে রেওয়ায়াত করেছেন। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি সম্পর্কে রেওয়ায়াত করেছেন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ। হানাফীগণ এই দ্বিতীয় পদ্ধতিটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৃতীয় পদ্ধতিটি রেওয়ায়াত করেছেন হাসান বসরী আবু বাকরাহ থেকে। আর চতুর্থ পদ্ধতিটিকে সামান্য একটু মতবিরোধ সহকারে ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মালেক অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এর উৎস হচ্ছে সাহ্ল ইবনে আবী হাস্মার একটি রেওয়ায়াত।
এগুলো ছাড়া সালাতে খওফের আরো কয়েকটি পদ্ধতি আছে। ফিকাহর কিতাবগুলোয় এগুলোর আলোচনা পাওয়া যাবে।
১৩৭
অর্থাৎ তোমাদের এই যে সতর্কতার হুকুম দেয়া হচ্ছে এটা নিছক একটা পার্থিব কৌশল। নয়তো আসলে জয়-পরাজয় তোমাদের কৌশলের ওপর নির্ভর করে না। বরং তা নির্ভর করে আল্লাহর ফায়সালার ওপর। তাই এই সতর্কতামূলক কৌশল ও পদক্ষেপগুলো কার্যকর করার সময় তোমাদের একথায় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যে, যারা নিজেদের মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিবিয়ে দিতে চাচ্ছে আল্লাহ তাদের লাঞ্ছিত করবেন।