وَلَا تَتَمَنَّوْا۟ مَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بِهِۦ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ ۚ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌۭ مِّمَّا ٱكْتَسَبُوا۟ ۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٌۭ مِّمَّا ٱكْتَسَبْنَ ۚ وَسْـَٔلُوا۟ ٱللَّهَ مِن فَضْلِهِۦٓ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمًۭا
আর যা কিছু আল্লাহ তোমাদের কাউকে অন্যদের মোকাবিলায় বেশী দিয়েছেন তার আকাংখা করো না। যা কিছু পুরুষেরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সেই অনুযায়ী। আর যা কিছু মেয়েরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সেই অনুযায়ী। হ্যাঁ, আল্লাহর কাছে তাঁর ফযল ও মেহেরবানীর জন্য দোয়া করতে থাকো। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত জিনিসের জ্ঞান রাখেন। ৫৪
৫৪
এই আয়াতে বিরাট গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক বিধান দেয়া হয়েছে। এটি সংরক্ষিত এবং যথাযথভাবে কার্যকরী করা হলে সমাজ জীবনে মানুষ বিপুল শান্তি ও নিরাপত্তা লাভে সক্ষম হবে। আল্লাহ সমস্ত মানুষকে সমান করে তৈরী করেননি। বরং তাদের মধ্যে অসংখ্য দিক দিয়ে পার্থক্য সৃষ্টি করে রেখেছেন। কেউ সুশ্রী, কেউ কুশ্রী। কেউ সুকন্ঠ, কেউ কর্কশ ভাষী। কেউ শক্তিশালী, কেউ দুর্বল। কেউ পূর্ণাঙ্গ সুগঠিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অধিকারী, আবার কেউ জন্মগতভাবে পঙ্গু। কাউকে শারীরিক ও মানসিক শক্তির মধ্যে কোন একটি শক্তি বেশী দেয়া হয়েছে আবার কাউকে দেয়া হয়েছে অন্য কোন শক্তি। কাউকে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় পয়দা করা হয়েছে আর কাউকে খারাপ অবস্থায়। কাউকে বেশী উপায় উপকরণ দেয়া হয়েছে, কাউকে দেয়া হয়েছে কম। এ তারতম্য ও পার্থক্যের ভিত্তিতেই মানুষের সমাজ-সংস্কৃতি বৈচিত্রমণ্ডিত হয়েছে। আর এটিই বুদ্ধি ও যুক্তিসম্মত। কিন্তু যেখানেই এই পার্থক্যের স্বাভাবিক সীমানা ছাড়িয়ে মানুষ তার ওপর নিজের কৃত্রিম পার্থক্যের বোঝা চাপিয়ে দেয় সেখানেই এক ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়। আর যেখানে আদতে এই পার্থক্যকেই বিলুপ্ত করে দেবার জন্য প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালানো হয় সেখানে আর এক ধরনের বিপর্যয় দেখা দেয়। মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ মানসিকতা দেখা যায়। নিজের চাইতে কাউকে অগ্রসর দেখতে পেলে সে অস্থির হয়ে পড়ে। মানুষের এই মানসিকতা তাই সমাজ জীবনে হিংসা, বিদ্বেষ, রেষারেষি, শত্রুতা, দ্বন্দ্ব, সংঘাত ইত্যাদি সৃষ্টির মূল। এরই ফলে যে অনুগ্রহ সে বৈধ পথে অর্জন করতে পারে না তাকে অবৈধ পথে লাভ করার জন্য উঠে পড়ে লাগে। এই মানসিকতা থেকে দূরে থাকার জন্য আল্লাহর এই আয়াতে নির্দেশ দিচ্ছেন, তাঁর বক্তব্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে, অন্যদের প্রতি তিনি যে অনুগ্রহ করেছেন তুমি তার আকাঙ্ক্ষা করো না। তবে আল্লাহর কাছে অনুগ্রহের জন্য দোয়া করো। তিনি নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী তোমার জন্য যে অনুগ্রহটি উপযোগী মনে করবেন সেটিই তোমাকে দান করবেন। আর তিনি যে বলেছেন, “যা কিছু পুরুষরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সেই অনুযায়ী আর যা কিছু মেয়েরা উপার্জন করেছে তাদের অংশ হবে সেই অনুযায়ী” এর অর্থ যতদূর আমি বুঝতে পেরেছি তা হচ্ছে এই যে, পুরুষদের ও মেয়েদের মধ্য থেকে যাকে আল্লাহ যাই কিছু দিয়েছেন তাকে ব্যবহার করে যে যেমন কিছু নেকী বা গোনাহ অর্জন করবে সেই অনুযায়ী অথবা অন্য কথায় সেই জাতীয় জিনিসের মধ্য থেকেই আল্লাহর কাছে সে অংশ পাবে।